• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনায় আইনজীবীর ভুল সিদ্ধান্তে ধর্ষিত হলো কিশোরী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন নবপল্লী এলাকায় এক আইনজীবীর ভুল সিদ্ধান্তে ধর্ষণের শিকার হলো কিশোরী (১৪)। মাত্র ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে ওই কিশোরীকে এ্যাফিডেভিট লেখা একটি চুক্তিপত্রে ২২ বছরের এক যুবকের সাথে বিবাহ দেন তিনি। সেই সুবাদে ওই কিশোরীকে একটি ভাড়া বাসায় রেখে দৈহিক সম্পর্ক করা হয় বলে মামলায় উল্লে¬খ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হলে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।   
মামলায় আরও বলা হয়েছে এক পর্যায়ে ওই কিশোরী জানতে পারে প্রতারক যুবক বশির হাওলাদারের পূর্বের স্ত্রী ও সন্তান আছে এবং স্ট্যাম্পের মাধ্যমে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের সঠিক হয়নি। পরবর্তীতে ওই কিশোরী এ চক্রান্তের বিষয়ে বুঝতে পেরে পালিয়ে বোনের বাসায় চলে যায়। 
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর রাতে সোনাডাঙ্গা তৃতীয় আবাসিক এলাকার ছাত্তার বকশীর বাড়ির ভাড়াটিয়া কবির হাওলাদারের ছেলে বশির হাওলাদার (২২) ওই কিশোরীকে নিয়ে নবপল্ল¬ী এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী ইনছার আলী ওরফে মেহেদী ইনছারের কাছে যান। এ সময় তিনি নিজ (আইনজীবী) নামে ক্রয়কৃত একটি ৩০ ও একটি ২০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ওই দু’জনের বিয়ের একটি এ্যাফিডেভিট লিখে সিল সই করে দেন। ২০০৭ সালের জুলাই মাসের ৩০ টাকার স্ট্যাম্পের নম্বর ঝ-৪২১২৬১৯ এবং ২০ টাকার স্ট্যাম্পের নম্বর ঝ-৪২৫৭২০০। ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্যে তিনি ওই নাবালিকাকে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে দেন। আইনজীবীর দেয়া স্ট্যাম্প নিয়ে বশির হাওলাদার ওই কিশোরীকে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে স্ত্রী পরিচয়ে রেখে ধর্ষণ করে। এরপর গত ৩১ অক্টোবর ওই কিশোরী ১৪ এ সকল প্রতারণা বিষয়ে বুঝতে পেরে তার বোনের বাসায় পালিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে গত ৩ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করেন (নং-০১)। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারে অভিযুক্ত ৩ জনকে আটক করেন। এরা হলো সোনাডাঙ্গা তৃতীয় আবাসিক এলাকার ছাত্তার বকশীর বাড়ির ভাড়াটিয়া কবির হাওলাদারের ছেলে বশির হাওলাদার (২২), একই এলাকার মৃত রজব আলী হাওলাদারের ছেলে কবির হাওলাদার (৪৮) ও ঝালকাঠি জেলার ভাইলাবুনিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন শিকদারের ছেলে মোঃ সোহাগ হোসেন (৩২)। পরদিন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।  
এ বিষয়ে আইনজীবী মেহেদী ইনছার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাকে তারা ঘটনার দিন রাতে এসে খুব অনুনয় বিনয় করে বিয়ের কথা বলেছিলো। এ কারনে আমার নিজ নামে কেনা ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে তাদের বিয়ের এ্যাফিডেভিট করে দেই। তবে ওই কিশোরীর বয়সপ্রাপ্ত কিনা সে বিষয়ে ওই স্ট্যাম্পে আালাদাভাবে কলমে লিখে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 
এ বিষয়ে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ফরিদ আহমেদ বলেন, একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ের সাথে সম্পৃক্ত করানোটাই দণ্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া কোনভাবেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে ৫০ টাকা স্ট্যাম্পে বিয়ের ঘোষণা বৈধ নয়। এটা ধর্ষনের মতো জঘন্য কাজে সহযোগিতার সামিল। 
এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মতাজুল হক জানান, সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন বয়রা ক্রস রোড এলাকার বাসিন্দা কিশোরী (১৪) কে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সোনাডাঙ্গা তৃতীয় আবাসিক এলাকার ছাত্তার বকশীর বাড়ির ভাড়াটিয়া কবির হাওলাদারের ছেলে বশির হাওলাদার (২২) গত ২১ অক্টোবর ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার দুই সহযোগী কবির হাওলাদার (৪৮) ও  মোঃ সোহাগ হোসেন (৩২)’র সহযোগীতায় ভুয়া কাবিননামা (এ্যাফিডেভিট) তৈরির মাধ্যমে বিয়ের কাগজ তৈরি করে। তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বশিরের মায়ের ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করে। বশির হাওলাদারের পূর্বে বিয়ে ও সন্তান রয়েছে সে বিষয়টি গোপন রাখে। বিষয়টি টের পেয়ে ৩১ অক্টোবর ওই স্কুলছাত্রী পালিয়ে তার বোনের কাছে চলে আসে। এ ঘটনায় ভিকটিম মামলা করেন। আমরা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। তবে এর সাথে যদি আরও কেউ জড়িত থাকেন তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা