• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নীরব প্রশাসন

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

স্যালো বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ ও সুন্দরবন অভ্যন্তরের নদী থেকে লাগাতার বালু তুলে চলেছেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি বিভিন্ন নদী, খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বহাল তবিয়তে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

সেই বালু আরেক স্থানে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সরবরাহ করছেন তারা। এতে নদী তীরবর্তী বাঁধ ও সুন্দরবনে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া সড়ক নির্মাণ কাজে বালু সরবরাহ করতে এলাকার ফসলি জমি ও খাল থেকেও তোলা হচ্ছে বালু। ফসলি জমিতে পানি নেই সেজন্য বাইরে খাল থেকে পানি এনে গর্ত করে সেখানে ড্রেজার লাগিয়ে সেখান থেকেও তোলা হচ্ছে এই বালি। প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ দেদারচ্ছে অবৈধ এমন কর্মযজ্ঞ চললেও বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কোথাও বার্জ থেকে বালু নামানো চলছে, আবার কোথাও ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন। হরিহরপুর এলাকায় দেখা যায় ড্রেজার দিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর মাঝ থেকে বালু তুলছেন শ্রমিকরা। এর একটু দূরে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া বন টহল ফাড়ি। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে বীণাপানি এলাকায় বার্জ থেকে পাইপের মাধ্যমে বাঁধের ঢালে বালু ফেলছিলেন শ্রমিকরা।

তারা জানিয়েছেন, রাতের বেলা পাশ্ববর্তী সুন্দরবনের খাসিটানা এলাকার নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হয়েছে। এছাড়া চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষ নদ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে পাশ্ববর্তী বাঁধের কাজে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে ডেজার মালিকদের বালু না তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সেখানকার দায়িত্বরত পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী বালু তোলার বিষয়টি বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বনবিভাগের খাসিটানা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনিরুল ইসলাম বলেন, রোজার সময় কয়েকজন ড্রেজার মালিক বালু তুলছিলেন। তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।

এদিকে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য ফসলি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলার কাজে নিয়োজিত ড্রেজার মালিকরা জানিয়েছেন তারা স্থানীয় তরিকুল ও ফিরোজ নামের দুই ব্যাক্তির হয়ে কাজ করছেন। এ কাজের জন্য প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে প্রতি ফুট বালুর জন্য ৫০ পয়সা হারে কেটে রাখা হচ্ছে। জানা গেছে, তরিকুল ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে ড্রেজার দিয়ে এ বালি তোলার ব্যবসা করছেন। এমনকি সব সময় তার ২ থেকে ৩ টা ড্রেজার বিভিন্ন জায়গায় বালি তোলার কাজ করে।

ইয়াসিন মোল্লা নামে একজন ড্রেজার মালিক জানিয়েছেন, তরিকুল ও ফিরোজ নামে দুই ব্যাক্তি তিনিসহ আরও চারটি ড্রেজার ভাড়া করেছেন। তাদেরকে প্রতি ফুট বালু তোলার জন্য ৪ টাকা করে দেওয়া হয়। এর থেকে প্রতি ফুটে ৫০ পয়সা করে কেটে রাখা হচ্ছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে। স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রাম্য ডাক্তার লিয়াকাত হোসেন জানান, প্রথমে সড়কের পাশের খাল থেকে বালু তোলা হয়। এতে খালের দুই পাশে ধসে যাওয়ায় গ্রামমবাসীর আপত্তির মুখে বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে স্থানীয় মানুষের ফসলি জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার বার আমার বাড়ির নিচে আমার জমিতে মেশিন বসাচ্ছিল আমি বাঁধা দিলে পরে একটু সরিয়ে মেশিন বসালেও সেখানে আমার জমির মধ্যে পড়ে। সেখানেও বাঁধা দিলে তারা যার জমিতে বসিয়েছে তাকে ডেকে এনে আমাকে অনেক গালিগালাজ করে এমনকি বলে আমার জায়গা থেকে ওরা বালি তুলবে তাতে তোমাদের ক্ষতি হলে আমার কিছু করার নেই। আমাদের অনুমিত আছে। কিন্তু এভাবে বালি তুললে আমার ঘেরের ক্ষতি হবে এমনকি আমার ভিটা ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়বে। সরকারি সড়কের কাজ সে জন্য প্রশাসনের ভয়ে কেউ বাধা দিচ্ছেন না। এদিকে আরেক জন বাসিন্দা ওসমান গণি বলেন, এভাবে ফসলি জমি থেকে গর্ত করে বালি তুললে ফসলি জমিতে ফসল কম হবে এবং বাড়িঘর ও বসতভিটার ক্ষতি হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ছে। এজন্য সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ করতে এভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ড্রেজার মালিক জানিয়েছেন, ঠিকাদারের সাথে প্রতি ফুট বালু ৮ টাকা চুক্তি করে তাদের সাড়ে ৪ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা প্রশাসনসহ অন্যন্যদের ম্যানেজ করার কথা বলে কেটে রাখা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি দুই দিনে ১০ হাজার ৩শ ফুট বালু তুলেছি। আমার কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার ১৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বালু তোলার দায়িত্বে থাকা ফিরোজ বলেন, আমার দায়িত্বে একটা দুইটা ড্রেজার সেখানে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের নামে কারো কাছ থেকে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে না। অন্য কেউ করছে কি না জানা নেই। ড্রেজার মালিক ও জমির মালিককে দেওয়ার পর আমাদের যে এক দুই টাকা থাকবে তা থেকে প্রশাসনকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন আমি কাজ শুরু করার আগে অন্যরা কাজ করেছে তখন একবার এসিল্যান্ড স্যার এসে বন্ধ করে দিয়েছিল পরে আবার যে কোনো ভাবে কাজ শুরু হয়। তখন আমি শুরু করি।

বালু তোলার দায়িত্বে থাকা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে বলেন, আমরা সকলের সাথে কথা বলে বালি তুলছি। কাজ শেষ হওয়ার আগে সকলের সাথে দেখা করব।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বি এম তারিক উজ জামান বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসছিল বালি তোলার খবর পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। যদি আবার চলে তাহলে তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা