• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দক্ষিণে বাড়ল কমিউটার ট্রেন যাত্রী পরিবহন শুরু আজ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

ফরিদপুরের ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে স্বল্প দূরত্বের রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনায় এক ধাপ এগোল রেলপথ মন্ত্রণালয়। আজ রবিবার রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল শুরু করবে একটি ট্রেন। এমন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে স্বল্প দূরত্বে বড় অবকাঠামোর সুবিধা পাওয়া শুরু হলো। দক্ষিণে বাড়ল কমিউটার ট্রেন।

রাজধানী ঢাকা থেকে মাদারীপুরের শিবচরের দূরত্ব ৭৮.২ কিলোমিটার। এই পথে একটা সময় বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, ভাঙ্গাসহ অন্তত সাতটি জায়গায় ফেরি পাড়ি দিতে হতো। এসব অঞ্চলে সড়কের উন্নতি হয়েছে আরো আগে। এখন ধীরে ধীরে রেলও পৌঁছে যাচ্ছে দোরগোড়ায়।

শুধু এক জেলা থেকে পাশের জেলায় নয়, বরং উপজেলা পর্যায়ের যাতায়াতেও নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো প্রকল্পের বড় সুফল এতেই। সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সুফল পৌঁছে দেওয়াই হলো আসল সার্থকতা। একটা বড় অবকাঠামো যখন তৈরি হয়. তখন সেটাকে কেন্দ্র করে আশপাশে নতুন যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা জরুরি।

পুরনো ট্রেনে নতুন যাত্রা শুরু

রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত  মূলত একটি ট্রেনই চলাচল করবে। একটি ট্রেনের দুটি নাম দেওয়া হয়েছে; চন্দনা কমিউটার ও ভাঙ্গা কমিউটার। ট্রেনটি যখন রাজবাড়ী থেকে রওনা হবে, তখন নাম থাকবে চন্দনা কমিউটার। আর ভাঙ্গা এসেই নাম বদলে যাবে। আবার একইভাবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ভাঙ্গা কমিউটার নামে ট্রেন চলবে।

ভাঙ্গা পেরোলে নাম বদলে হয়ে যাবে চন্দনা কমিউটার।
এই পথে যে ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু হলো, সেটি নতুন নয়। বগিগুলো পুরনো। ভারতের কাছ থেকে কেনা পুরনো ইঞ্জিনে ট্রেন চালানো হবে। এতে রেলসেবার সামগ্রিক উন্নতি কতটা হবে, তা পরে বোঝা যাবে।

অবশ্য গতকাল শনিবার শিবচরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী জিল্লুুল হাকিম বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই পথে আরেকটি ট্রেন আমরা চালু করব। পরের ট্রেনটি নতুন বগি দিয়ে শুরু করব।’

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের সুবাদে ভাঙ্গাকেন্দ্রিক রেলের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তাই রেলের আরো যে দুটি নতুন জোন তৈরি হবে, সেগুলোর একটির প্রধান কার্যালয় ভাঙ্গায় তৈরি হবে। আবার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যশোর, খুলনা ও বেনাপোলের ট্রেন ভাঙ্গা হয়ে চলাচল করবে।

জিল্লুল হাকিম বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন বানানো হবে। সেটি আটটি জেলাকে যুক্ত করবে। কিন্তু এই অঞ্চলের মাটি ভালো নয়। তাই পুরো লাইনটি হবে এলিভেটেড (উড়াল পথে)। রেলে বর্তমানে দুটি জোন আছে। আরো দুটি জোন তৈরি করা হবে। এর একটি হবে ভাঙ্গা-ফরিদপুর। এটির জোনাল অফিস হবে ভাঙ্গায়। এতে ভাঙ্গায় রেলের সেবা আরো বাড়বে।

 ছোট পথে ভূমিকা রাখছে বড় বিনিয়োগ

মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কারণে আজ শিবচরের সঙ্গে ভাঙ্গার যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হলো।

রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ভাঙ্গা থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

এই পথের মোট ২০টি স্টেশনের মধ্যে ১৪টিই নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর বিদ্যমান ছয়টি স্টেশন সংস্কার করে আধুনিক করা হচ্ছে। আন্ত জেলা ট্রেনগুলো সব স্টেশনে থেমে চলাচল করবে।

পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, লোকাল ও কমিউটারে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়ানো গেলে প্রান্তিক কৃষক উপকৃত হবেন। আরেকটি হলো, সাধারণত ছোট পথে বড় বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যায় না। পদ্মা রেলের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি রেল করিডরের মেরুদণ্ড তৈরি হয়েছে। এই পথকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে আরো অনেক উদ্যোগ নেওয়া যাবে।

 কখন চলবে পদ্মাকেন্দ্রিক কমিউটার

থামবে কোন কোন জায়গায়

রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত কোথাও থামবে না চন্দনা কমিউটার। ট্রেনটি রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ছাড়বে ভোর ৫টায়। ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছাবে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে। এরপর এই ট্রেনটি এক ঘণ্টা ভাঙ্গায় অবস্থান করবে। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে সকাল ৯টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা।

আবার ঢাকা থেকে ফিরতি যাত্রায় ভাঙ্গা কমিউটার কমলাপুর থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা ৬টায়। ভাঙ্গায় গিয়ে পৌঁছাবে রাত ৮টায়। এরপর ১০ মিনিট বিরতি নিয়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে ভাঙ্গা ছাড়বে। রাজবাড়ী স্টেশনে রাত সাড়ে ৯টায় পৌঁছাবে।

ট্রেনটিতে ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার ও ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসনব্যবস্থা রয়েছে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার।

ট্রেনের ভাড়া কত

রেলপথে রাজবাড়ী থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৯০ কিলোমিটার। এই পথে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৫ টাকা। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১২৬ কিলোমিটার পথের জন্য ভাড়া দিতে হবে ১১৫ টাকা। রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গার ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা