• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষের যে মন্দ স্বভাবগুলো পরিহার করা জরুরি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩  

দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে কোনো মানুষ নেই। তাই তো দোষ-গুণ মিলেই মানুষ। আর দোষ ছাপিয়ে মানুষের গুণই তাকে অন্যের কাছে প্রশংসিত, অনুকরণীয় ও ব্যক্তিত্ববান করে তোলে। এজন্য সবধরনের দোষ ও মন্দ স্বভাব পরিহার এবং পরিহারের চেষ্টা করা উচিত।

তাই আজ এমন কিছু মন্দ স্বভাব তুলে ধরা হলো, যা একজন পুরুষকে ব্যক্তিত্ববান ও নিখুঁত পরিচয়ের অধিকারি করতে সাহায্য করবে। যেমন-

ব্যক্তি জীবনে

> অলসতা বা কাজের অজুহাতে ঈমান শিক্ষা না করা এবং ফরজে আইন পরিমাণ ইলম অর্জন না করা। এমনটা করা উচিত নয়। কারণ ফরজে আইন পরিমাণ ইলম অর্জনকে শরিয়তে ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে। (ইবনে মাজা, হাদিস,  ২২৪)

> আত্মসমালোচনা না করে অন্যের দোষচর্চা ও সমালোচনায় আনন্দবোধ করা। এবং অন্যের প্রতি কুধারণা করা। কারণ, এর মাধ্যমে গুনাহ হয়। (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১২, জামে তিরমিজি,  হাদিস, ১৯৮৮)

> কাউকে সালাম না দেওয়া এবং কেউ সালাম দিলে তার উত্তর না দেওয়ার বদ স্বভাব। কেউ আবার মনে মনে সালামের জবাব দিয়ে থাকেন। অথচ সালামদাতাকে শুনিয়ে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস, ৮৭৮৭)

> গৃহ পরিচারিকাদের ওপর অমানুষক নির্যাতন করা। (বুখারি, হাদিস, ২৪৪৭)

সংসার ও পরিবার জীবনে

> নিজের স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন থাকে, অথচ একজন পুরুষের জন্য স্ত্রী-সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মী শিক্ষার ব্যবস্থা করা ফরজ। (তারগীব তারহীব, ৩০৪৮)

> সাংসারিক কোনো কাজের ব্যাপারে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ না করার বদস্বভাব পরিহার করা উচিত। কারণ, এতে করে পারস্পরিক অন্তঃকলহ বেড়ে যায়। এজন্য স্ত্রী ও বোঝার বয়স হয়েছে এমন সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।  (সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের ক্ষেত্রে

> নিজের মা-বাবার খেদমত না করে স্ত্রীর জন্য শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত ফরজ মনে করা। অথচ ছেলে হিসেবে মা-বাবার সেবা করা স্বামীর দায়িত্ব, স্ত্রীর নয়। স্ত্রীর দায়িত্ব হলো স্বামীর খেদমত করা এবং সুযোগ মতো নিজের মা-বাবার খোঁজ-খবর রাখা। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ৮৩)

> মা-বাবার খোঁজ খবর না রাখা। অথচ মা-বাবার সন্তুষ্টি ছাড়া জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য মা-বাবার হকগুলো ঠিকমতো  আদায় করা উচিত। (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস, ৩৬৬২)

সন্তান

> সন্তান হওয়ার সময় ছেলে হওয়ার আগ্রহ করা। মেয়ে হলে স্ত্রীকে দোষারোপ করা। অথচ সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে পুরোটাই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন। এতে স্ত্রীর কোনো হাত নেই। অপরদিকে হাদিসে মেয়ে সন্তানের ফজিলত বেশি বর্ণনা করা হয়েছে এবং মেয়েকে ভালোভাবে লালন পালনে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। (সূরা শূরা, আয়াত: ৪৯, বুখারি, হাদিস, ১৪১৮)

ভাই-বোন

> ভাই-বোনের মিরাস ঠিকমতো দিতে না চাওয়া। অথচ ভাই-বোনের মিরাস ঠিকমতো বুঝিয়ে দেওয়া ফরজ। এই ফরজ আদায় না করলে নিজের রিজিকের সঙ্গে হারাম সম্পদ মিশ্রিত হয়ে যায় এবং সম্পদের বরকত নষ্ট হয়ে যায়।  অনেক বাবাও মেয়েকে তার প্রাপ্য থেকে কম দেওয়ার চেষ্টা করেঅ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এমন ব্যক্তি সরাসরি জাহান্নামে যাবে। ( সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২১১৩৯)

স্ত্রী

> স্ত্রীর থেকে নিজের হক পুরোপুরি আদায় করা, কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর যে পাওনা তা ঠিকমতো আদায় না করা এবং করতে রাজি না হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওপর জুলুম করা, এটা অন্যায়। ( সূরা: বাকারা, আয়াত: ২২৮)

> পারস্পারিক মনোমালিন্যতার জেরে স্ত্রীকে মারধর করা। এটা শরীয়তের বিধানের লঙ্ঘন। কারণ, আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীর সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৯)

> স্ত্রীর সংসার সামলানো এবং তার কাজকে তুচ্ছ বলে অবহেলা করা, এবং একে স্ত্রীর দায়িত্ব মনে করে তার কাজের মূল্যায়ন না করা। এর পাশাপাশি কখনোই স্ত্রীর রান্নাবান্না ও অন্যান্য ভালো কাজের প্রশংসা না করা। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ১৯৫৫)

বিয়ের দেনমোহরে

> মানুষকে দেখানোর জন্য শুধু শুধু মোটা অংকের দেনমোহর নির্ধারণ করা। পরিশোধের নিয়ত না করা। মোটা অংকের মোহর নির্ধারণকে মর্যাদার মনে করে অনেকে। অথচ এটা মর্যাদাকর কোনো ব্যাপার নয়। বরং বিয়েতে এমন মোহর নির্ধারণ করা উচিত যা সহজে এবং নগদে আদায় করা যায়। (মাজমাউয্যাওয়ায়েদ, ৭৫০৭)

> বিয়ের সময় স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে যৌতুক গ্রহণ করা। এবং যৌতুক আদায়ের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা। এভাবে স্ত্রীর কাছ থেকে সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া স্পষ্ট হারাম। (সূরা বাকারা, আায়াত, ১৮৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২১১৩৯)

উপার্জনে

> উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হালাম তোয়াক্কা না করা। ন্যায়-অন্যায় যে পথেই টাকা আসে বাছ-বিচার ছাড়া গ্রহণ করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা না রেখে নিজের উপার্জনকেই রিজিকের মাধ্যম মনে করা। ( সূরা: মুমিন, আয়াত: ৫১, সূরা: হুদ, আয়াত: ৬)

ধর্ম ও পর্দা

> পর্দা করা শুধু মেয়েদের দায়িত্ব। এমন ভাবনা থেকে ছেলেরা নিজেদের দৃষ্টি সংযত না করা। অথচ পবিত্র কোরআনে পর্দার আলোচনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আগে পুরুষদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের দৃষ্টি নত করো’।  এবং কু-দৃষ্টিকে হারাম ও অভিশপ্ত কাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। (সূরা: নূর, আয়াত, ৩০)

> ধর্মীয় কোনো সমস্যার সমাধান এবং ব্যবসা, লেন-দেন, বিয়ে, তালাক জাতীয় বিষয়ে শরিয়তের বিধান জানতে আলেমদের কাছে না যাওয়া এবং নিজে নিজে পড়াশোনা করে আলেমদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া। (সূরা: আশ-শামস, আয়াত, ৯, নাহল, আয়াত, ৪৩, মুসলিম, হাদিস, ৪৯২৩)

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা