• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ভৈরব সেতুর পিলার দৃশ্যমান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার অবসান

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২  

দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ভৈরব সেতুর ২ টি পিলার। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেছে। ১৯ মাসে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। যা খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। জমি বুঝে পেলেই সেতুর কাজে দ্রুত গতি ফিরবে এমনটি জানিয়েছেন সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার এস এম নাজমুল।

এদিকে দীর্ঘসূত্রীতার পর শনিবার (২৩ জুলাই) সেতুর দিঘলিয়া অংশের ভূমির মালিকদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ (সাধারণ) শাখা থেকে ধারা ৭ এর ১নং উপধারায় দ্রষ্টব্য এল এ ( সাঃ) কেস নং ০৫/২০২)২০২১-২২ তাং ২১/০৭/২০২২ নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয় স্থাবর সন্মত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সালের ২১ নং আইন) এর ৭ ধারা মোতাবেক নোটিশ প্রদান করা যাইতেছে যে, সরকার ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য উক্ত এলাকার জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবার এবং উহার দখল গ্রহণ করিবার মনস্থ করিয়াছে। ২৮/০৭/২০২২ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নোটিশ প্রদানকৃত জমির মালিকদের সকল দলিলাদি / কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশে উল্লেখ করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোহান্মদ আল মামুন নোটিশে স্বাক্ষর করেন।

৭ ধারা নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সেতুর দিঘলিয়া অংশে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার অবসান হলো। এরপরন ২৮ জুলাইয়ের পর ৮ ধারা নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে ভূমির মালিকদের অধিগ্রহণের পাওনাদি পরিশোধ করে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ভূমির লে আউট বুঝিয়ে দেওয়া হবে এমনটি জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( এলএ) শাহানাজ পারভীন।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে সেতুর পশ্চিম পাশের রেলিগেট থেকে মহসিন মোড় পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির মালিকদের ৪ ধারা নোটিশ প্রদান করা হবে। আর রেলওয়ের জায়গা ভৈরব সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল ইতিমধ্যে খুলনাবাসী পেতে শুরু করেছে। এখন ভৈরব সেতুর সুফল পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে খুলনাবাসী। নানান জটিলতা আর গুজবের মধ্য দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া গত বছরের ২৪ মে সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর (ঈদগাহের মধ্যে) ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। এরপর পর্যায়ক্রমে ২৪ নং পিলার এবং ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে সরকারি খাস জমির উপর ১৩ নং পিলারের পাইলিং কাজ শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের ৩০ মার্চ ২৪ নং পিলারের পাইল ক্যাপ ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন হয়। এর ১০ দিন পর ১০ এপ্রিল ২৫ নং পিলারের পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এবং ২০ এপ্রিল ১৩ নং পিলারের পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।

শনিবার (২৩ জুলাই) সেতুর দিঘলিয়া অংশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর ২৪ নং ২৫ নং পিলারের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন (করিম গ্রুপ) এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার এস এম নাজমুল এ প্রতিবেদককে জানান, পিলার দুইটির কংক্রিট গার্ডারের কাজের প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে শুরু করেছি। সেতুর রেলিগেট অংশে ভৈরব নদীর তীরে ১৪ নং পিলারের পাইলিং এর কাজের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর রেলিগেট অংশে ১৩ নং পিলারের কাজ চলমান রয়েছে।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন।প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর দিঘলিয়া অংশে দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেস ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরি করে সেতুর ইকুপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে

ভৈরব সেতুর জন্য দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার মোট ১৭ দশমিক ৪৯ একর (৭ দশমিক ০৮ হেক্টর) ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এরমধ্যে সেতুর খুলনা শহরাংশ অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭ দশমিক ১১৩৬ একর (২ দশমিক ৮৮ হেক্টর) ভূমি রয়েছে। সেতুর উভয় পাশের উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর কার্যালয় থেকে গত বছরের নভেম্বর মাসে ভূমি অধিগ্রহণের এর কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য ২টি সংশোধিত প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিমপাশ অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্খা পাট গোডাউনের কর্ণারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্বপাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট বানিয়াঘাট ফেরী সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কুকুরমারা পর্যন্ত।

পশ্চিম পাশে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে সেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নং পিলারের উপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর উপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য যাতে সেতুর নীচ দিয়ে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল ব্রিজের স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে।

১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা।

চলতি বছরের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে এটা নিশ্চত করে বলা যায়। এর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভূমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রীতাকে দায়ী করছে। সকল বাঁধা বিপত্তি আর গুজবকে অতিক্রান্ত করে ভৈরব সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাক এটাই খুলনাবাসীর প্রত্যাশা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা