• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মাকে খুঁজতে ট্রেনে উঠে পড়ে সাত বছরের ইয়ামিন দেড় মাস পর ঘরে ফেরা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৪  

নারায়ণগঞ্জের ফতুল­া থানার লালপুর গ্রামে বাড়ি ছোট্ট ইয়ামিনের। জন্মের সময় মা মারা যায় তার। বুঝতে শেখার পর থেকেই ইয়ামিন শুনে আসছে, মা বেড়াতে গেছে। এজন্য প্রায়ই মাকে খুঁজতে বের হতো সে। গত ১৯ মার্চ মাকে খুঁজতে ট্রেনে উঠে পড়ে ৭ বছরের ইয়ামিন। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ওই ট্রেনের গন্তব্য ছিল কমলাপুর রেল স্টেশন। সেখান থেকে ভুল করে আবার সে উঠে পড়ে খুলনাগামী ট্রেনে। খুলনায় পৌঁছানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুটি। পরে স্থানীয়রা ইয়ামিনকে দেখে হরিণটানা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। এরপর ইয়ামিনের আশ্রয় হয় খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানে কেটে যায় দেড় মাস।
সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা উদ্যোগ নেন ঠিকানাহীন শিশুটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার। তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা। নানা প্রচেষ্টায় সফলও হয়েছেন তারা। গত ৮ মে রাতে দেড় মাস পর পরিবারকে ফিরে পেয়েছে শিশু ইয়ামিন।

গত ১৯ মার্চ ইয়ামিনকে খুঁজে পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ও হরিণটানা থানা পুলিশের এসআই মাসুম বিল­াহ জানান, ইয়ামিনের পরিবার খুঁজে বের করতে কমলাপুর রেল স্টেশনের আশপাশের থানাগুলোতে তথ্য পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো থানা থেকে ইয়ামিনের পরিবারের সন্ধান কেউ দিতে পারেনি। এভাবে দেড় মাস কেটে গেছে। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা উদ্যোগী হন ইয়ামিনের বাড়ি খুঁজে বের করতে। আমি ও থানার কনস্টেবল মোঃ সাহাবুদ্দিন পুলিশের পক্ষ থেকে ওই টিমে ছিলাম।

এ মহতী কাজের প্রধান উদ্যোক্তা বটিয়াঘাটা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সরদার আলী আহসান। তিনি জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় ইয়ামিন প্রায় বলতো, রেলস্টেশনে নিয়ে গেলে সে বাড়ি খুঁজে বের করতে পারবে। তার কথায় আস্থা রেখে গত ৮ মে ভোরে সমাজসেবার তিনজন এবং পুলিশের দুইজন মিলে ৫ সদস্যের একটি দল ইয়ামিনকে নিয়ে কমলাপুরের উদ্দেশে রওনা হন। অবশ্য এক মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অনুমতি নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সকাল ১০টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর দেখা যায় ইয়ামিন সেখানকার কিছুই চেনে না। আশপাশের থানা এবং সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও শিশু হারানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ওই এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে কমলাপুর রেলস্টেশন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তারা। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো একটি ট্রেন দেখে ইয়ামিন জানায়, এই ট্রেনে সে বাড়ি থেকে এসেছে। ওই ট্রেনে গেলে সে বাড়ি চিনতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রেনটি নারায়ণগঞ্জের। ২টা ৪০ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে। ইয়ামিনকে নিয়ে তারা ওই ট্রেনে ওঠেন। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি ইয়ামিনকে চিনতে পারেন। ওই ব্যক্তি জানান, ইয়ামিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল­া থানার লালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। তখন ট্রেনে ফতুল­া রেলস্টেশনে নেমে লালপুর গ্রামে যান। ইয়ামিনকে দেখে তার পরিবারের সদস্যরা ছুটে আসেন। মা হারা শিশুকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা। ওই সময় ইয়ামিনের স্বজন ও খেলার সঙ্গীরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
ইয়ামিনের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক জায়গায় ওকে খুঁজেছি, পাইনি। আমার মা হারা বুকের ধনকে ফিরে পেয়েছি, তাতে আমি খুব খুশি।
স্থানীয়রা জানায়, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ইয়ামিনের বাবা সাইফুল ইসলাম আর বিয়ে করেননি। মা হারা ইয়ামিন বাবাসহ চাচা-ফুফুদের সঙ্গে গ্রামে থাকে। ইয়ামিনের বাবা পরিবহন শ্রমিক হওয়ায় প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকেন। এই ফাঁকে প্রায় মাকে খুঁজতে নিরুদ্দেশ হতো ইয়ামিন।
সমাজসেবা কর্মকর্তা সরদার আলী আহসান বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অন্যতম একটি কাজ হারিয়ে যাওয়া শিশুদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু নানা কারণে অনেকেই সেটা করে না। আমার ছোট একটি মেয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেই ইয়ামিনকে যেভাবে হোক বাড়ি পৌঁছে দেবো। খুলনার পুলিশ কমিশনার, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, হরিণটানা থানার ওসি সবাই যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করেছেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা