• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ভাবনা চিন্তায় ক্যালরি পোড়ে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৯  

শুধু চিন্তা করে বেশি ক্যালরি খরচের জন্য মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে।

রাশিয়ান দাবাড়ৃ আনাতলি কার্পভ‘য়ের শারীরিক দুরাবস্থার কারণে ১৯৮৪ সালে ‘ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়নশিপ’ বন্ধ ঘোষণা করা হয় এর আগের প্রায় পাঁচ মাসে অংশ নেওয়া কয়েক ডজন খেলায় তিনি ওজন হারিয়েছিলেন প্রায় ১০ কেজি। আর আয়োজকরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

দাবা খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন ঘটনা অভিনব কিছু নয়। যদিও কার্পভ’য়ের মতো এতোটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কোনো খেলোয়াড়ের হয়নি। তবে ইসপিএন’য়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিজাত দাবাড়ুরা কোনো নড়াচড়া ছাড়া বসেই একদিনেই ছয় হাজার ক্যালরি পর্যন্ত খরচ করতে পারেন।

তাহলে মস্তিষ্ক কি প্রচুর কর্মশক্তির যোগান চায়? গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে কি ওজন কমানো সম্ভব? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের আগে জানতে হবে দৈনন্দিন স্বাভাবিক ব্যবহারে মস্তিষ্ক কতটুকু শক্তি খরচ করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে, শরীর বিশ্রামে থাকা অবস্থায় শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম আর নিজেকে উষ্ণ রাখার জন্য শরীরের গড়পড়তা শক্তির প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যবহার হয়, যা মূলত শর্করা হিসেবে থাকে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির ‘ইভোলিউশনারি অ্যান্থ্রোপলজি’ বিভাগের অধ্যাপক ডাগ বয়ার বলেন, “গড় হিসেবে প্রতিদিন একজন নারী সাধারণত ৩৫০ আর পুরুষ ৪৫০ ক্যালরি খরচ করে।”

“ছোটবেলায় মস্তিষ্ক আরও বেশি ক্ষুধার্ত থাকে। গড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছরের শিশুদের শরীরের মোট শক্তির ৬০ শতাংশই চলে মস্তিষ্কের কাজে।”

গ্লুকোজ খোর মস্তিষ্ক শরীরের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ হলেও শক্তি খরচের দিক থেকে এটি সবার চাইতে এগিয়ে।

ক্ষুধার্ত মস্তিষ্ক

ডিউক ইউনিভার্সিটির একই বিভাগের শিক্ষার্থী আরিয়ানা হ্যারিংটনকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে বয়ার দেখেন, ক্ষুদ্র হোক আর বৃহৎ, প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণী তাদের শরীরের বেশিরভাগ শক্তি ব্যয় করে তাদের মস্তিষ্কের পেছনেই।

বয়ারের বিশ্বাস, “মস্তিষ্কের ওজন কম হলেও মানুষের মস্তিষ্কও একই মাত্রায় শক্তির যোগান চায়। তাই কারও মস্তিষ্ক যদি স্বাভাবিকের চাইতে বড় হয়, তবে তা স্বভাবতই আরও বেশি শক্তির যোগান চাইবে।”

এই শক্তির বেশিরভাগই মস্তিষ্ক খরচ করে রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে ‘নিউরন’গুলোকে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের আওতায় আনতে যা নাম হল ‘সিন্যাপসেস’।

হ্যারিংটন বলেন, “একটি ‘সিন্যাপস’ সক্রিয় করতেই প্রচুর শক্তির প্রযোজন হয়। একাজ করতে ‘মেমব্রেইন’য়ের ভেতর দিয়ে প্রচুর লৌহ প্রবাহিত করতে হয়, যা শক্তির হিসেবে মস্তিষ্কের সবচাইতে ব্যয়বহুল কাজ।”

অপরদিকে, মস্তিষ্ক কখনই প্রকৃত অর্থে বিশ্রাম নেয় না। মানুষ ঘুমিয়ে গেলেও শরীরের স্বাভাবিক কার্যাবলী চালিয়ে যাওয়ার জন্য কোষের মধ্যে সংকেত আদান-প্রদান চলতে থাকে।

আবার মস্তিষ্কের কাজে ক্রমাগত সাহায্য করে যাচ্ছে অসংখ্য কোষ, যাদের সবারই শক্তির প্রয়োজন। এজন্যই পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সে যখন শরীর উপর্যুপরী বিকাশের মধ্য দিয়ে যায় তখন সেই শিশুর মস্তিষ্ক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় তিনগুন বেশি শক্তি খরচ করে।

মস্তিষ্কের ব্যায়াম

তাহলে মস্তিষ্কের উপর চাপ বাড়ালেই তো খ্যালরি খরচ হবে এবং ওজন কমবে তাই না? ঠিক, তবে যদি মস্তিষ্ককে কঠিন কাজ দিতে পারলেই তা সম্ভব। আর সবার জন্য কঠিন কাজের সঙ্গা এক নয়।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ওটাওয়া’র সাইকোলজি ও নিউরোসাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ক্লড মেসিয়ের বলেন, “কঠিন কাজ হল সেই কাজ যা মস্তিষ্ক পূর্বে আয়ত্ব করা কৌশল দিয়ে সমাধান করতে পারে না কিংবা যে কাজ প্রতি মুহূর্তে তার রুপ পাল্টায়। উদাহরণ হতে পারে কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখা কিংবা দাবা খেলা।”

মেসিয়ার বলেন, “যখন আপনি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন, তখন সেই চেষ্টা শরীরের যে অংশকে সক্রিয় করছে সেই অংশে মস্তিষ্ক শক্তির যোগান বাড়িয়ে দেয়। সময়ের পরিক্রমায় একসময় কৌশল আয়ত্তে চলে আসে, মস্তিষ্ককে তখন কাজটি করতে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়না।”

তাহলে কৌশল রপ্তের প্রাথমিক পর্যায়ে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়াই যায়, এমনটা ভাবতেই পারেন। মন চাঙা করার জন্য খেতে পারেন। তবে যদি মনে করেন মস্তিষ্ক এই বাড়তি ক্যালরি পুষিয়ে দেবে তবে সেই ধারণা ভুল।  

কারণ মস্তিষ্কের অসংখ্য কাজের মাঝে শুধু চিন্তা করতে যেটুকু শক্তি খরচ হয় তা খুবই সামান্য।

মেসিয়ার বলেন, “যে কাজগুলোর পেছনে মস্তিষ্কের অধিকাংশ শক্তি খরচ হয় তার বেশিরভাগই মানুষ টের পায় না।”

ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ একটি জটিল বিষয়। কতটুকু গ্রহণ করলে ওজন কমবে, কতটুকুতে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকবে ইত্যাদির জন্য রয়েছে নানান হিসাবে। আর সেটা মানুষ ভেদে ভিন্ন এবং তা নির্ভর করে শরীরের আকার, বয়স, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা