• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

পাঁচ গুণে মোমিনের পরিচয়

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০১৯  

মোমিন মানে খাওফে খোদায় দিল প্রকম্পিত হওয়া এক বান্দা। লা-শারিকা লাহুর ওপর মনেপ্রাণে বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের সীমা নিঃশ্বাস যতক্ষণ। ফরমানে এলাহির তরে উৎসর্গ করা জীবন। অজস্র সিফাতের অধিকারী ব্যক্তিকেই এক শব্দে ‘মোমিন’ বলে। 

সমাজের অসংখ্য লোক মোমিনের ফারাক থাকে অনেক দিকে। খালেস নিয়তে, সঠিক নিয়মে দ্বীনে আলোয় যখন কেউ নিজেকে আলোকিত করে নেবে তখন আপনি নিশ্চিত হতে পারেন তিনিই ‘মোমিন’। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে মোমিনের গুণাবলির কথা উল্লেখ করেছেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতিদানের কথাও বলেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘ওই কিতাবটি প্রকৃত কিতাব, এতে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই, যা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, যথাযথভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠা রাখে, আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এই কিতাবকে যা আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেই কিতাবের ওপর যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তারা আখেরাতের ওপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। তারাই স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই সফলকাম।’ (সূরা : বাকারা : ২, ৩, ৪ ও ৫)।

আল্লাহ তায়ালা ওই আয়াতগুলোতে মোমিন মুত্তাকিদের পাঁচটি গুণাবলি উল্লেখ করেছেন।
১. মোমিনের প্রথম গুণ হলো তারা ‘ঈমান বিল গায়েব’ তথা অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। যেমন কবরের আজাব, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি। অর্থাৎ রাসুল (সা.) যেসব অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন এবং মানুষ যেসব বিষয় স্বীয় বুদ্ধিবল ও ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করতে অক্ষম, সেসব বিষয়ে পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।

২. মোমিনের দ্বিতীয় গুণ হলো তারা যথাযথভাবে নামাজ কায়েম রাখে। কোনো অবস্থাতেই নামাজ ছাড়ে না। কখনও কোনো কারণে নামাজ কাজা হলে তার হৃদয়ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ সে নামাজের সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব সযতেœ ওয়াক্ত মতো আদায় করে।

৩. মোমিনের তৃতীয় গুণ হলো, তারা সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। তারা কৃপণ কিংবা লোভী নয়। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার ধরনগুলো (১) সম্পদের জাকাত আদায় করা (২) সদকায়ে ফিতর আদায় করা (৩) ফকিরদের দান করা (৪) অভাবীকে ঋণ প্রদান করা (৫) ওয়াকফ তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা, মেহমানখানা তৈরিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা (৬) হজের সফরে ব্যয় করা (৭) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা (৮) আর্থিক সংকটে জর্জরিত আত্মীয়স্বজনের জন্য ব্যয় করা (৯) মা-বাবার জন্য ব্যয় করা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা (১০) মেহমানকে আপ্যায়ন করা। (মাআরেফুল কোরআন)।

৪. মোমিনের চতুর্থ গুণ হলো, তারা কোরআনের প্রতি ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোর প্রতিও ঈমান আনে। অর্থাৎ আসমানি সব কিতাব আল্লাহর কালাম, হক ও সত্য এ কথার ওপর ঈমান এনে, পূর্ববর্তী কিতাবগুলো রহিত হয়ে যাওয়ায় এখন শুধু সর্বশেষ কিতাব তথা আল কোরআনের বিধানের ওপর আমল করে। আল কোরআনকে বোঝার জন্য রাসুল (সা.) এর অসংখ্য হাদিস চর্চা করে আর আমলের পদ্ধতিগত দিকগুলো মাজাহেবে আরবাআ (চার মাজহাব) এর ইমামদের এজতেহাদের ওপর নির্ভর করে এবং তার আদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। মৌলিকভাবে মোমিন ব্যক্তি মনে করে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার অবকাশ নেই এবং সে এটাও মনে করে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহর এমন মনোনীত ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম, যার মধ্যে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা যাবে না। তাই তো আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.) যা নিয়ে এসেছেন তা মজবুত করে ধর এবং যার থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সূরা হাশর : ৬)।

৫. মোমিনের পঞ্চম গুণ হলো, তারা পরকালের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে। বস্তুত পরকালের প্রতি বিশ্বাস থেকেই সৃষ্টি হয় নেক আমলের অনুপ্রেরণা এবং গোনাহের অনুসূচনা। 
উপরোল্লিখিত গুণের অধিকারী মোমিন মুত্তাকিদের জন্য দুটি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ১. ওইসব লোকই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতপ্রাপ্ত এবং তারা হেদায়েতের ওপর থাকবে অটল অবিচল ২. আর ওইসব লোকের জন্যই ইহকাল ও পরকালের সফলতা রয়েছে। আর রয়েছে জান্নাতের হাজারো নেয়ামত।
মহান আল্লাহ আমাদের সবার দিলকে ‘খাওফে খোদায়’ ভরপুর করে দিয়ে প্রকৃত মোমিন হওয়ার পাথেয় অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা