• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মৃতের চুল, নখ ইত্যাদি কাটা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৩  

হাফেজ মাও. মুফতি জুবায়ের হাসান

মৃত ব্যক্তির চুল, নখ ইত্যাদি বড় থাকলেও তা কাটা মাকরুহ। মৃতের পরিবারবর্গের উচিত, মৃত্যুর আগেই মুমূর্ষু রোগীর ওইসব পরিষ্কার করে দেওয়া। ইবনে সিরিন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির চুল ও নখ কাটা যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস-৬২২৮।

মুহাম্মাদ রহ. বলেন, মৃত ব্যক্তির বগলের নিচের পশম ও নখ কাটাকে মাকরুহ মনে করা হত। তিনি বলতেন, অসুস্থ ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের উচিত, এই কাজটি তার অসুস্থাবস্থায় করে দেওয়া। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ ৭/১৩৯, হাদিস-১১০৫৩।

হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফাতাওয়া গ্রন্থ আল ফাতাওয়া আল হিন্দিয়ায় ১/১৫৮ রয়েছে, মৃতের চুল ও দাড়ি আঁচড়ে দেবে না, তার নখ ও চুল কাটবে না। হিদায়া কিতাবে মাসআলাটি এভাবেই রয়েছে। মৃতের গোঁফ কাটবে না, তার বগলের নিচে পশম উঠাবে না। তার নাভির নিচের লোম কেটে দেবে না। বরং এসব জিনিসসহ তাকে দাফন করবে। -ফাতহুল কাদির ২/৭৫; তাবয়িনুল হাকায়েক ১/৫৬৭।

কাফনে কালিমা লেখা:
মৃতের সাথে বা কাফনে কালিমা শাহাদাত, কোনো আয়াত বা যিকির লেখা নাজায়েয। এটি গলদ রুসম ও বিদআত। শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। এছাড়া লাশ গলে গেলে যিকর ও কালিমার অংশে ওই নাপাকি লেগে যেতে পারে। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। -রদ্দুল মুহতার ২/২৪৬; আলফাতাওয়াল ফিকহিয়্যা আলকুবরা ২/১২।

স্বামীকে স্ত্রীর চেহারা দেখতে না দেওয়া:
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী স্বামীর জন্য তার মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা জায়েয। মৃত স্ত্রীর চেহারা দেখা হারাম বলা অথবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীকে স্ত্রীর চেহারা দেখতে না দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে স্পর্শ করা, গোসল দেওয়া জায়েয নয়। -কিতাবুল আছল ১/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৫০।

তিন দিন চুলা জ্বালানো যাবে না মর্মে কথাটি কি সঠিক?
যদি কোন বাড়িতে মানুষ মারা যায় সেই বাড়িতে রান্না-বান্না নিয়ে ইসলামে কোন বিধিনিষেধ নেই। ওই বাড়ির লোক যদি রান্না-বান্না করে খাওয়ার ভারসাম্য ও মানসিক অবস্থা থাকে তাহলে সে খেতে পারবে এতে ইসলামে কোন রকম বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এলাকাবাসীর দায়িত্ব হল যদি কোন ব্যক্তি মারা যায়, তার পরিবারের জন্য রান্না-বান্না করে পাঠাবে। কারণ তাদের মন খারাপ, মানসিক ভারসাম্যের অবস্থা ভালো নয় প্রিয়জন হারিয়েছেন রান্না-বান্না করার মত মানসিক অবস্থা নেই। এজন্য কেউ মারা গেলে তার আশে-পাশের বাসা থেকে খাবার পাঠানো সুন্নাত।

জাফর রা. (আলি রা. এর ভাই) যখন মুতার যুদ্ধে শহিদ হলেন তখন রাসুল ﷺ বলেন “জাফরের পরিবারের জন্য তোমরা আশে-পাশে যারা আছো খাবার তৈরি করে করে পাঠাও কারণ তারা তাদের বিপদ-মুসিবতে দিশেহারা হয়ে আছে। এজন্য কোন বাড়িতে মানুষ মারা গেল আশে-পাশের বাড়ি থেকে খাবার পাঠানো সুন্নাত কিন্তু তিন দিন রান্না করা যাবে না এই কথাটি কোথাও উল্লেখ নাই। কেউ যদি খাবার না পাঠায় তাহলে কি ওই পরিবারের রান্না করে খাওয়া লাগবে না? অবশ্যই লাগবে, তাই তিন দিন রান্না করা যাবে না মর্মে কথাটি সঠিক নয়। আশে-পাশের লোক খাবার দিবে ঠিক আছে কিন্তু প্রয়োজন হলে উনারাও চুলা জ্বালাতে পারবেন। আবার অনেকেই আছেন রান্না-বান্না করে বিপদ এহসান করে তিনদিন, চল্লিশা বা কুলখানি ইত্যাদির নামে দোয়া করার ব্যবস্থা করতে বলেন। যেখানে গরীব দুঃখী মানুষের চাইতে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, এলাকার নামি-দামি ব্যক্তি বর্গদের আপ্যায়নটাই হয়ে থাকে মুখ্য। ইসলামে এর ভিত্তি নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

কবরে আজান দেওয়া:
কোনো কোনো এলাকায় এ প্রচলন রয়েছে, মায়্যেতকে দাফন করার পর কবরে দাঁড়িয়ে আযান দেওয়া হয়। তাদের ধারণা, আযান দিলে শয়তান পলায়ন করবে, তাহলে কবরের সওয়াল-জওয়াবের সময় মায়্যেতকে কুমন্ত্রণা দিতে পারবে না। এটি একটি ভিত্তিহীন রসম। রাসুলে কারিম ﷺ, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িন কারো থেকেই এ ধরনের আমল বা বক্তব্য প্রমাণিত নয়। এটি একটি বিদআত, এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আর শয়তানকে কবরেও ওয়াসওয়াসা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়- আমাদের জানামতে এটি দলিলবিহীন একটি ধারণা মাত্র।

দাফনের পরপর মৃতের বাড়িতে খাবারের আয়োজন করা:
কোনো কোনো এলাকায় প্রচলন আছে, মৃতের বাড়িতে খাবারের আয়োজন করা হয় এবং জানাজার পর এলান করা হয় যে, খাবার না খেয়ে কেউ যাবেন না। এটিও একটি ভুল রসম ও বিদআত। দাওয়াতের আয়োজন তো করা হয় কোনো আনন্দ-উৎসবের সময়, কোনো বেদনার মুহূর্তে নয়। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নত তো হল মৃতের পরিবার-পরিজনদের জন্য প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা। যা ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। প্রশ্নোক্ত কাজটি এর সম্পূর্ণ উলটো ও বিপরীত। তাই অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ বলে গণ্য করা হত।

হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রা. বলেন,
كُنّا نَعُدّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَاحَةِ
আমরা মৃতের দাফনকার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন)-এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস-৬৯০৫।

লেখক : ইমাম ও খতিব (অ.দা.), কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা