• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

নারায়ন চন্দ্র চন্দের ভিত্তি সাংগঠনিক আকরামের আওয়ামী বিরোধী ভোট

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২৪  

আগামীকাল দ্বাদশ জাতয়ি সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে বর্তমান এমপি ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং ফুলতলা উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের সঙ্গে। এর মধ্যে নারায়ন চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়ার বাসিন্দা। অপর দিকে শেখ আকরাম হোসেন ফুলতলার বাসিন্দা। বিগত প্রায় ১৫ বছর এমপি এবং মাঝে মন্ত্রী থাকায় দলের একটি অংশ বর্তমান সুবিধাভোগী হলেও অপর অংশটির মধ্যে ক্ষোভ রয়ে গেছে। তারপরও ডুমুরিয়া ফুলতলায় আ’লীগের মূল সাংগঠনিক ভিত্তি বলতে গেলে বর্তমান এমপি’র পক্ষে রয়েছে। তাছাড়া র্তণমূল পর্যায়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। 
সাধারণ ভোটারের মতে ডুমুরিয়া-ফুলতলা উন্নয়নের রূপকার সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। ডুমুরিয়ার ১৪টি এবং ফুলতলার ৪টিসহ মোট ১৮ ইউনিয়নের ১৫টি ইউপি চেয়ারম্যানের সরাসরি সমর্থন আছে তার পক্ষে। তাছাড়া ডুমুরিয়া-ফুলতলার তৃণমূল আ’লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে জোরালো তেমন বিরূপ মন্তব্য নেই। বিশেষ করে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও তেমন কোন বিরোধিতা নেই। ফলে টানা চতুর্থ বারের মৃত সংসদ সদস্য হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে আছেন এই বর্ষীয়ান আ’লীগ নেতা। 

তার টানা ৩৮ বছরের বৈচিত্রময় শিক্ষকতা জীবনের সাথে যোগ হয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস। সেখানেও সাফল্যের বিজয় গাঁথা। প্রধান শিক্ষক থেকে ইউপি চেয়রম্যান। সংসদ সদস্য থেকে প্রতিমন্ত্রী, তারপর পূর্ণমন্ত্রী। এ যেন শিক্ষার আলোয় রিদ্ধ রাজনীতি। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ ও এম এ পাস করার পর ১৯৭৩ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা ছয়বার ইউপি চেয়রম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ সালের শুরুতে আ’লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী মোঃ সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে প্রথম বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় প্রার্থীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা ৩বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিছু দিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর তিনি এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। 

ডুমুরিয়া-ফুলতলার উন্নয়নের তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে তিনি ডুমুরিয়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ করেছেন, ডুমুরিয়ার শাহপুরে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আইএলএসটি ভবণ নির্মাণ করেছেন, ঘুটুদিয়ায় দেশের দ্বিতীয় বুহত্তম ষাঁড় প্রজনন কেন্দ্র  বুল স্টেশন নির্মাণ করেছেন, মধুগ্রাম সরকারি কলেজ, ফুলতলা মহিলা সরকারি কলেজ, মাগুরখালি ও সাহস ইউনিয়নের সংযোগস্থল চটচঠিয়া ব্রিজ নির্মাণ করেছেন, কদমতলা ব্রিজ, ভদ্রা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করেছেন, ফুলতলা বাজার, ডুমুরিয়া বাজারের অবকাঠমো উন্নয়ন করেছেন, ডুমুরিয়ার পাইকারি কাঁচা মালের বাজার নির্মাণ, খুলনা মহানগরের জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়াগামী রাস্তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া গত ১৫ বছরে তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, মসজিদ, সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্টসহ ডুমুরিয়া-ফুলতলার বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।   

অপরদিকে শেখ আকরাম হোসেন জাতীয় পার্টির সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি আ’লীগের নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দিলে তিনি আ’লীগে যোগ দেন। বিগত দু’টি নির্বাচনে তিনি পরপর দুইবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। তার ছোট ভাই শেখ মনিরুল ইসলামও স্থানীয় আটরা-গিলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান। রাজনীতিতে তার রয়েছে নিজস্ব বলয়। যা তিনি যখন যে দলে যান, তখন তার লোকজন সেখানে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় এবং এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দল থেকে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথমে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করলেও হাইকোর্টের চেম্বার জর্জ আদালতে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক, নির্বাচনী এলাকার ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ এবং আওয়ামী বিরোধী ভোটের আশা করছেন। যদি আওয়ামী বিরোধী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যান, সে ক্ষেত্রে তার বিজয় হওয়াটা সহজ হয়ে যেতে পারে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা