• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রায় কথিত এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বনদস্যুদের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৯  

খুলনার কয়রা উপজেলার কথিত এক মাছ ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে বনদস্যুদের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগ উঠেছে। সুন্দরবনে মাছ ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বনদস্যুদের পৃষ্টপোষকতা করছেন বলে সুন্দরবন নির্ভর জেলেরা নিশ্চিত করেছেন।

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলে বাওয়ালিদের অভিযোগ, কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর মোল্লার ছেলে আবু সাঈদ ওরফে ‘দোনদড়ি সাঈদ’ বনদস্যুদের প্রধান পৃষ্টপোষক। তিনি কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার বিরুদ্ধে বনদস্যুদের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে আবু সাঈদ শ্রমিকলীগের কেউ নয় বলে দাবী করেছেন কয়রা উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল হালিম।

গত ১০ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে বনদস্যুদের দুই পৃষ্টপোষক ধরা পড়ার পর আবু সাঈদ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে ধরিয়ে দিতে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আবু সাঈদকে ধরিয়ে দিতে তার নিজের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে আবু সাঈদের ছবির নীচে বনদস্যুদের পৃষ্টপোষক লিখে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। পোস্টটি মুহুর্তেই এলাকায় ভাইরাল হয়ে যায়।
জেলেদের সূত্র জানায়, এক সময় জেলে নৌকায় সুন্দরবনে মাছ ও কাকড়া শিকারে যেত সাঈদ। সে সময় সুন্দরবনের জেলেদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল রাজু বাহিনী। রাজু বাহিনীর সাথে ওই সময়ে সাঈদের সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় লোকালয় থেকে রাজু বাহিনীর বিভিন্ন খাদ্য সমাগ্রী পাঠাতে সহযোগীতা করার পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের কাছে টাকা পৌছে দেওয়ার কাজ শুরু করে সে। এভাবে রাজু বাহিনীর আস্থা অর্জন করায় তাকে অলিখিত ‘ক্যাসিয়ার’ করা হয়। সুন্দরবনের জেলে ও সব ধরনের মাছ ব্যবসায়ির দেওয়া টাকা দস্যুদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ি পৌছানোর দায়িত্ব পায় সে। সুন্দরবনের কোন খালে কে মাছ ধরবে, গোন প্রতি দস্যুবাহিনীকে কত টাকা দিতে হবে সব নিয়ন্ত্রন এক সময় চলে আসে সাঈদের হাতে। তার বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ‘দোনদড়ি’ লেখা দুই টাকার নোট রাজু বাহিনীকে না দেখাতে পারলে জেলেদের ভাগ্যে নেমে আসতো অমানবিক নির্যাতন। এক সময় রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পালিয়ে গেলে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ফরহাদ ও তার স্ত্রী ফিরোজা দলের দায়িত্ব পায়। তখন ফরহাদের হয়ে কাজ করতে শুরু করে সাঈদ। ফরহাদ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী ফিরোজাকে বিয়ে করে সাঈদ। এলাকায় কথিত আছে রাজু ও ফরহাদের রেখে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ সুন্দরবনের কোথায় লুকানো আছে তা একমাত্র ফিরোজা ছাড়া অন্য কেউ জানেনা।

এদিকে সুন্দরবনের ঘাট দখল ও মাছ ব্যবসার আড়ালে দস্যুদের দিয়ে চাঁদাবাজির পেশাকে আড়াল করতে নতুন ফন্দি আটে সাঈদ। শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহন। এভাবে সে প্রথমে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পরে ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতির পরিচয় দেওয়া শুরু করে। এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা দেওয়া পোস্টার-ফেস্টুনে নিজেকে মহারাজপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
গত ১৫ অক্টোবর সুন্দরবনে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আমিরুল বাহিনীর প্রধানসহ ৪ জন বনদস্যু নিহত হওয়ার পর বর্তমানে সুন্দরবনে দস্যু তৎপরতা থমকে গেছে। তবে বনদস্যুদের প্রধান পৃষ্টপোষক সাঈদ ওরফে ‘দোনদড়ি সাঈদ’ এলাকায় ফিরলে আবারও দস্যুরা তৎপর হবে বলে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেছেন।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হোসেন বলেন, আবু সাঈদের বিরুদ্ধে বনদস্যুদের সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কয়রা থানায় মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা