• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ভাষা সৈনিকদের পুর্নমূল্যায়ন

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভায় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী করেছেন শরীফ আহমেদকে। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য করেছেন মনিরা সুলতানা মনিকে।

তারা উভয়েই ভাষা সৈনিকের সন্তান। ভাষা সৈনিকদের সন্তান প্রতিমন্ত্রী-এমপি হওয়ায় ময়মনসিংহ গর্ববোধ করছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মূল্যায়নকে ময়মনসিংহের মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছে। একইসঙ্গে পাল্টে গেছে ময়মনসিংহের দৃশ্যপটও। 

কার্যত দৃশ্যপটে ফিরে এসেছে ময়মনসিংহের গর্ব দুই ভাষা সৈনিক এম শামসুল হক ও অ্যাডভোকেট মোস্তফা এম এ মতিনের ছবি। তারা উভয়েই ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। 

নিজ নিজ এলাকায় তারা জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন একাধিকবার। কিন্তু মৃত্যুর পর রাজনীতির মাঠে শক্তিমান এ নেতাদের ছবি হারিয়ে গিয়েছিলো। 

যদিও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইতিহাসে তারা অবিস্মরণীয় জননেতা; কিন্তু বাস্তবতা ছিলো বিস্মৃতির চাদরে ঢাকা। ইদানীং সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে দৃশ্যমান। 

ময়মনসিংহ মহানগর, তারাকান্দা-ফুলপুর উপজেলা এবং ভালুকা উপজেলায় ব্যানার, পোস্টার ও প্যানাফ্ল্যাক্সে আবারো ছাপা হচ্ছে প্রয়াত এই দুই ভাষা সৈনিকের ছবি। 

যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা দুই মেয়াদে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগেই ভাষা সৈনিক শামসুল হকের ছেলে শরীফ আহমেদ নিজের প্রচারণায় বরাবরই বাবার ছবি যুক্ত করেছেন। 

তবে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের করা ব্যানার-পোস্টারে উঠে আসছেন এই ভাষা সৈনিকের ছবি। প্রয়াত এম শামসুল হক ময়মনসিংহের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বাতিঘরের নাম। 

দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান শামসুল হক সম্পর্কে তার জীবদ্দশায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত উক্তি ছিল এমন- ‘শামসুল হক না থাকলে সংসদ জমে না।’ বিদগ্ধ জননেতা শামসুল হক ছিলেন জনমানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। কথা ও কাজে তিনি ছিলেন এক কথার মানুষ। 

জনপ্রিয় এই নেতার উক্তি ময়মনসিংহে বাণী চিরন্তনীর মতো জনশ্রুতি হয়ে আছে। ‘কইছি কইছিই। একটাও কমাবো না।’ 

স্বাধীনতাবিরোধীরা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিতর্ক বাঁধাতে চান তখন তাদের জবাবে উদাহরণ হয় শামসুল হকের বিখ্যাত এক উক্তি। 

এম শামসুল হক বায়ান্না সালে ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলির প্রতিবাদে সেদিন বিকেলেই তার নেতৃত্বে ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। 

স্থানীয় রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বর থেকে বের হওয়া মিছিলটি প্রদক্ষিণ করেছিলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। 

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি শেখ হাসিনার অবদান। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বিকাশে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।  

ভালুকার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা এম এ মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তার নামভূমিকা উজ্জ্বল। 

ভালুকা ডিগ্রি কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান করে গেছেন মোস্তফা এম এ মতিন। গণপরিষদ সদস্যও ছিলেন তিনি। 

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পরিচালক এবং দুই মেয়াদে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন এই ভাষা সংগ্রামী।

৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করা সেই বিখ্যাত মিছিলে মোস্তফা এম এ মতিন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখেন। কারাবরণ করেন প্রায় তিন মাস। 

ভাষা সৈনিক বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ১৯৯০ সাল থেকে মেয়ে মনিরা সুলতানা মনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সম্প্রতি তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন। 

মনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, টানা দুইবার ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। ছাত্রজীবনে মুমিনুন্নেসা সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। তিনবার ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক। 

প্রায় ১২ বছর পালন করেছেন জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও আছে অগ্রণী ভূমিকা। 

নতুন করে বাবার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মনিরা সুলতানা মনি এমপি  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই জাতির বীর সন্তানদের মূল্যায়ন করেছেন। নেত্রীর এই মূল্যায়নে আমি অভিভূত। আমি নেত্রীর প্রতি চির কৃতজ্ঞ।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা