• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বছরজুড়েই উত্তাল ভারত

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯  

বছরজুড়েই ভারত ছিল উত্তাল। জাতীয় নির্বাচনের কারণে যেমন উত্তাল ছিল রাজনীতির ময়দান; ঠিক তেমনি জাতীয় নাগরিক তালিকা-এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের কারণে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজপথ। একই বছর ভোটবাক্সে নরেন্দ্র মোদি সরকারের জয়জয়কার দেখে বিশ্ববাসী, ঠিক মুদ্রার উল্টো পিঠে তীব্র সমালোচনা ও তিরস্কারও সহ্য করতে হয় গেরুয়া শিবিরকে। এছাড়া কংগ্রেসের রাজনৈতিক দৌড়ে পিছিয়ে পড়া, নেতৃত্বের সংকট, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তর্জন-গর্জনেই শেষ হচ্ছে বছরটি।

বছরের শুরুটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির জন্য শুভ হয়েই আসে। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমত জরিপগুলো মোদির পক্ষেই ছিল। এর মধ্যেই সাত দফায় ভোট গ্রহণের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোটের দিনক্ষণ পড়ে ১১ই এপ্রিল থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বালাকোটে যে অভিযান চালায় মোদি প্রশাসন, তার রেশ এসে পড়ে ভোটের ময়দানে। মোদির জনপ্রিয়তা ওঠে তুঙ্গে। টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে গেরুয়া শিবির।

লোকসভায় অনেকটা শক্তি বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন মোদি। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় বিজেপি একাই পায় ৩০৩টি। জোট এনডিএ জয় পায় ৩৫৩টি আসনে। ভরাডুবি হয় রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের। বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে রাজনীতির মাঠে এনেও কোনো ফায়দা করতে পারেনি দলটি। মাত্র ৫২টি আসন জুটে ভাগ্যে। পরে দায়ভার কাঁধে নিয়ে জুলাইয়ে দলের সভাপতির পদ ছাড়েন রাহুল। অগস্টে দায়িত্ব নিতে হয় মা সোনিয়া গান্ধীকে।

তিন তালাক
মোদি সরকার আরও শক্তি সঞ্জয় করে পার্লামেন্টে মুসলিমদের তিন তালাক প্রথাকে বাতিল করে আইন পাস করে। জুলাইয়ের শেষে এ আইন নিয়ে ভারতজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ৫ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের সাত দশকের ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি ঘটানো হয়। এখানেও মুসলিমদের ওপর আঘাতের অভিযোগ আসে মোদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এনআরসি
কয়েক বছর আগে আসামে শুরু হওয়া জাতীয় নাগরিক তালিকা-এনআরসি'র কাজ এ বছরেই শেষ হয়। ৩১শে অগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি। তালিকায় তিন কোটির বেশি মানুষের নাম নথিভূক্ত হয়। চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যান অসমে বসবাসকারী ১৯ লাখের বেশি মানুষ। যা নিয়ে শুরু হয় উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এর মধ্যেই বিজেপি সরকার ঘোষণা করে ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সব অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়িত করা হবে। যদিও বছরের শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা অস্বীকার করেন।

রাম মন্দির
নভেম্বরে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি বিতর্কের সমাধান হয় সুপ্রিম কোর্টে। আদালত জানিয়ে দেন বিতর্কিত জমিতে তৈরি হবে রাম মন্দির। অন্যদিকে পাঁচ একর জমি সরকারকে দিতে হবে মসজিদ বানানোর জন্য। এ নিয়ে দেশটির মুসলিম সমাজ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এনআরসি, কাশ্মীরের পর নতুন ক্ষোভ সৃষ্টি হয় মুসলিম সমাজে।

শিবসেনা ঠাকরে
দেশব্যাপী উত্তেজনার মধ্যেই অনেক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়ে সম্প্রতি ভোট হয়। তবে এমন নাটক আর কোথাও হয়নি যেমনটা মহারাষ্ট্রে হয়েছে। নির্বাচনের পরে জোট ভেঙে যায় বিজেপি ও শিবসেনার। জোট বাঁধে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর কংগ্রেস ও শিবসেনা।


নাগরিকত্ব আইন
তবে বছরের শেষে এসে সব ক্ষোভের যেন বিস্ফোরণ ঘটে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে। মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান নির্বিশেষে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামেন। ডিসেম্বরের শুরুতে একে একে লোকসভা ও রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সইয়ে আইনে পরিণত হয়। এর পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। তীব্র আন্দোলনে নামেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, এনআরসি নিয়ে একবার নাটক করেছে বিজেপি, এখন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে শুরু করেছে রাজনীতি।

রাজধানী নয়াদিল্লি, উত্তর প্রদেশ আর উত্তর-পূর্ব ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে নতুন আইনের বিরোধিতায়। প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। কঠোর সমালোচনা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র। কংগ্রেসসহ বিরোধীদলগুলোর দাবি, আইনটি বাতিল করতে হবে, নয়তো এ আন্দোলন লাগাতার চলবে বলেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও নিজ অবস্থানে অনড় বিজেপি সরকার। আইনটিতে ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিম বাদে অন্য ধর্মের নাগরিকরা ভারতে এলে নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা