• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বছরজুড়ে অভিযান ॥ অবৈধ ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

শিশু আয়ান ও আহনাফসহ ভুল চিকিৎসায় সম্প্রতি কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অনুমোদনহীন অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধে নেওয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ। দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে চিরুনি অভিযান। এতে গত এক মাসে সারাদেশে এক হাজার ২২৭টি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালনায় জারি করা হয়েছে নতুন করে ১০টি শর্ত। বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, কেউ শর্তের বাইরে গিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করলেই তার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। তবে কোনো অবৈধ বা অনুমোদনহীন হাসপাতাল যদি যথাযথ শর্ত মেনে পুনরায় হাসপাতাল পরিচালনা করতে চায়, তাহলে সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার স্বার্থে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে অবশ্যই মানতে হবে ১০ শর্ত।
নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টক সেন্টার বন্ধে ২০২২ সালের ২৬ মে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনদিনে তখন দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। যার মধ্যে রাজধানীতেই ছিল ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে একই বছরের ২৯ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে চালানো হয় অভিযান।

ওই সময় ৮৫০টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীতেই ছিল ২০টি প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালেও চলে অভিযান। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের কারণে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে এ কর্মসূচি। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নতুন মন্ত্রী।

তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব নিতে না নিতেই জানুয়ারির শুরুতে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় খতনা করাতে আসা শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। এর এক মাসের মাথায় রাজধানীর মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও আরেক শিশুর মৃত্যু হয় খতনা করাতে এসে। আইডিয়াল স্কুলের সেই ছাত্র আহনাফের বাবা-মাও অভিযোগ তোলেন ভুল চিকিৎসার। তাকে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে চিকিৎসকের ভুল হয়েছিল তারও প্রমাণ মেলে। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অ্যানেন্থেসিয়ার অনুমোদনই ছিল না।

হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হলেও খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গার হাসপাতাল সশরীরে পরিদর্শন করে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
রাজধানীতে বন্ধ ৬ হাসপাতাল ॥ সরকারের দেওয়া ১০ শর্ত না মানায় মঙ্গলবার রাজধানীতে ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, আমরা আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর ইসিবি চত্বর, কালশী, মোহাম্মদপুর ও বাড্ডা এলাকায় অন্তত ১৮টি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে এশিয়া ডায়াগনস্টিক, এএইচ ডায়াগনস্টিকসহ আরও চারটি হাসপাতালে অনিয়ম পাওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছি। এ অভিযান চলমান থাকবে। ১০ নির্দেশনার একটিও যদি কেউ না মানে, তাহলেই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশজুড়ে অভিযান ॥ মঙ্গলবার সারাদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানো হয় অভিযান। অভিযানে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষিত ১০ দফা নির্দেশনা মানতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। উপজেলার বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এটুজেড ডিজিটাল ও ফয়সাল হাসপাতালে চলে এই অভিযান।

অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষিত নির্দেশনায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রবেশপথে টানানো, তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও লেবার রুম প্রটোকল বাধ্যবাধকতাসহ দেওয়া ১০ দফা নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।
এদিন কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানকালে মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং যমুনা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টারে বিভিন্ন মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা এবং যমুনা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তবে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাবনার ঈশ্বরদীর আলো জেনারেল হাসপাতাল আবারও খুলে দেওয়া হয় এদিন। অভিযোগ উঠেছে, কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে রফাদফা করে হাসপাতালটি চালু করে দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানা অভিযোগে এদিন অভিযান পরিচালনা করা হয় চট্টগ্রামেও। জেলা ও উপজেলায় অবৈধভাবে চলমান হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মত ভুক্তভোগীদের।  জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮০টিরও বেশি।

শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের নামও নেই অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে। লাইসেন্স না থাকাসহ নানা অভিযোগে ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। এগুলো হলো- অগ্রণী ল্যাব ও ডায়গনস্টিক সেন্টার, সেবা ডেন্টাল অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার, নিউ চাঁদের আলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতাল।  
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ॥ গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থমন্ত্রী জানান, এক মাসে সারাদেশে ১২শ’ ২৭টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো আমরা বন্ধ করতে চাই না। তবে এগুলো চালাতে হলে যত চিকিৎসক, নার্স প্রয়োজন তা থাকতে হবে। যা যা যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেগুলো থাকা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করা না হলে, আমি কঠোর ব্যবস্থা নিতে ‘জিরো টলারেন্স মেনটেন’ করব।

কোনো অনুরোধ বা তদ্বিরেই এসব অবৈধ বা যন্ত্রপাতিহীন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার সচল রাখা হবে না। আমরা এক মাসে এক হাজার ২২৭টি অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করেছি, এখনো অভিযান চলমান আছে। এর সঙ্গে আরও বলে রাখি, বৈধ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও যন্ত্রপাতি না থাকলে সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোনো অবৈধ হাসপাতাল যদি ঠিকঠাক নিয়মনীতি মেনে আবারও অনুমোদনের জন্য আবেদন করে, তাহলে তাদের আবেদন অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।

কারণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার প্রতিটা নাগরিকের রয়েছে। রাজধানীতে হয়তো একটি অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করলে রোগীরা অন্য আরেকটি হাসপাতালে যেতে পারবে। তবে যে জেলা বা উপজেলায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই, সেসব জায়গায় তো ওই হাসপাতালগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর জন্য কারও জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া হবে না। ঠিকঠাকভাবে অবকাঠামোসহ হাসপাতাল পরিচালনার সব যন্ত্রপাতি থাকলে তবেই বিবেচনা করা হবে।
হাসপাতালে হাসপাতালে ঝুলছে নির্দেশনা ॥ মন্ত্রীর নতুন ১০ দফা নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। সরেজমিনে কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ হাসপাতালের সামনে ঝোলানো রয়েছে লাইসেন্সের কপি, তথ্য কর্মকর্তার নাম, বেড সংখ্যাসহ যাবতীয় তথ্য। 
বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, দেশজুড়ে আমাদের অভিযান কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর প্রতিফলনও দেখতে পাচ্ছি। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের জন্য সরকারের জারি করা ১০ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সের কপি ও তথ্য কর্মকর্তার নাম প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা আগে ছিল না।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক  সেন্টারের লাইসেন্স প্রবেশপথে টানানো, তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও লেবার রুম প্রটোকল বাধ্যবাধকতাসহ ১০ দফা নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা মানা হচ্ছে, না কি না, তা বিবেচনায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু রাজধানীই নয়, সম্প্রতি কক্সবাজারেও পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরপর রাজশাহী, সিলেট, রংপুরসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিদর্শন কার্যক্রম চলবে। কোথাও অনিয়ম দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
মানতে হবে যেসব নির্দেশনা ॥ বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনায় যেসব নির্দেশনা মানতে হবে সেগুলো হলো- বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিককে লাইসেন্সের কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে; সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে; একই সঙ্গে তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে; যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধু ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে, তারা লাইসেন্স প্রাপ্তি ছাড়া কোনোভাবেই নামে উল্লিখিত সেবা দিতে পারবে না; ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটাগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত, শুধু সেই ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না; ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্যাথলজি বা মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে; বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যাসংখ্যা অনুযায়ী সব শর্তাবলি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে; হাসপাতাল, ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অপারেশন বা প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত বা নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যতীত চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া প্রদান করা যাবে না; বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপারেশন, সার্জারি, ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর করা যাবে না; সব বেসরকারি নিবন্ধিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে; নিবন্ধিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারের নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। 
বিশেষজ্ঞদের অভিমত ॥ মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে এসব অবৈধ, অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, কিছু কিছু হাসপাতাল লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, কিন্তু এখনো লাইসেন্স পায়নি। কিন্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, এরা অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউ সেবা পর্যন্ত দিচ্ছে। সব জায়গাতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এগুলো সত্যি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

তবে অবৈধ হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক রোগী দেখেন বা চিকিৎসা দেন, তাদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অবৈধ এসব হাসপাতালে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনভুক্ত কোনো চিকিৎসক যদি রোগী দেখেন, তাহলে বিএমডিসির উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

এর আগে রাজধানীতে বন্ধ হয়েছে যেসব অবৈধ হাসপাতাল ॥ দেশজুড়ে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা রাজধানীর খিলগাঁও, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, চকবাজার, লালবাগ, কচুক্ষেত ও বনানীতে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল, খিলগাঁও জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল বাসাবো জেনারেল হাসপাতাল, মাতুয়াইল কনক জেনারেল হাসপাতাল, শনির আখড়া সালমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বকশিবাজার খিদমাহ লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বনানী হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট কসমেটিক সার্জারি কনসালটেন্সি অ্যান্ড ডায়গানস্টিক সেন্টার, ঢাকা পেইন স্পাইন সেন্টারসহ ১৬৪টি অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করা হয়।
স্থায়ী সমাধানের পথ ॥ অবৈধ হাসপাতালে অভিযান বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার যে লোকবল আছে, তা দিয়ে সামলানো সম্ভব না। এক সময় তো দেশে মাত্র কয়েকশ’ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছিল।

এখন তো ছোট-বড় হিসাব করলে ৫০ হাজার হবে। এ জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও তদারকির জন্য প্রচুর লোকবল দরকার। সেই সঙ্গে যুগোপযোগী আইন লাগবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিদপ্তরকে দিতে হবে। তারা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালু করার শাস্তি দীর্ঘমেয়াদি কারাবরণ করতে হবে। দুই-চার বছর জেল খেটে যেন বেরিয়ে আসতে না পারে।

কারণ তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিনি বলেন, আইন সংশোধন, সক্ষমতা বৃদ্ধি আর প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে এই অধিদপ্তরকে চষে বেড়াতে হবে। ভালো গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। এর বাইরে আর কোনো সমাধান নেই।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা