• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন প্রবাজপুর শাহী মসজিদ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৪  

জনশ্রুতি আছে, জিনেরা জঙ্গল কেটে রাতারাতি মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। আবার অনেকেই বলেন, মাটির নিচ থেকে উঠেছিল মসজিদটি।

আরও জনশ্রুতি আছে, এ মসজিদে এসে কেউ কোনো মানত করলে, তা নাকি বিফলে যায় না।
যদিও বিশ্বমুক্ত কোষ উইকিপিডিয়ার মতে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মুসলমান সৈন্যদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য সুবেদার পরবাজ খাঁকে একটি মসজিদ নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা তার নাম অনুসারে প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

তবে যেভাবেই হোক না কেন, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার প্রবাজপুর গ্রামে ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ মে (১১০৪ হিজরির ১৯ রমজান) নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নির্মাণের পর থেকে এখনো প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদে জামায়াতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।

ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইটের তৈরি এ মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে তিনটি অলঙ্কৃত মেহরাব রয়েছে। মাঝ খানের মেহরাবটি প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কিছুটা বহির্বর্ধিত এবং পার্শ্ববর্তী দুটি থেকে আকারে বড়। এর অলঙ্কারগুলো সুন্দর। তিনটি মেহরাবের খিলানই (আর্চ) বহু ফলিযুক্ত এবং বহু পার্শ্ববিশিষ্ট স্তম্ভের ওপর স্থাপিত। এছাড়া মেহরাবের বাইরের প্রান্ত রেখায় ফলির সংযোগস্থলে পতাকার মতো বড় নকশা রয়েছে। খোদাই করা দুটি করে প্রস্ফুটিত পদ্মের নকশা আছে। মেহরাবের তিনটিতেই খিলানের কাঠামোর প্রান্তে খাড়া ও লম্বভাবে প্রচলন অনুযায়ী বক্রাকার গুল্মের নকশা রয়েছে। এ নকশা তিনটি একেকটি একেক রকম। উত্তর পাশেরটিতে প্রস্ফুটিত বড় পদ্ম এবং ডিজাইন রয়েছে। কেন্দ্রেরটিতে বক্রতার ভাঁজের মধ্যে উভয়দিকে বড় পতাকার নকশা রয়েছে এবং দক্ষিণ পাশেরটিতে প্রস্ফুটিত সুন্দর বড় পদ্মের সমাবেশ দেখা যায়। মূল মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। তবে এর বারান্দায় আরও তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদকে ঘিরে এখানে তৈরি হয়েছে ঈদগাহ ও হাফেজি মাদরাসা।

ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে সংস্কারের অভাবে প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর আগে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদ দিন দিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। খসে পড়ছে দেয়ালের ইট।

একটি ফার্সি পরোয়ানা থেকে জানা যায়, মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় তার ফৌজদার নবাব নুরুল্লাহ খাঁ ৫০ একর জমি দান করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মসজিদের দখলে মাত্র তিন একর জমি রয়েছে।

প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদের সভাপতি মাখলুকাত হোসেন জানান, মসজিদটির অধিকাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে। এমনকি মসজিদের মূল ভবনের জমিও জালজালিয়াতি করে রেকর্ড করে নেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে মামলা চলছে হাইকোর্টে।

তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ঘোষণা দেওয়ার পর একবার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন কুমিল্লা ও দিনাজপুর থেকে লোক এনে ইট কেটে মসজিদের দেয়ালের নকশার মতো নকশা তৈরি করে বসানো হয়েছিল। তারপর থেকে আর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংস্কার করা না হলে এ ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে মসজিদটি রক্ষার জন্য হাইকোর্টে মামলা চলছে। এজন্যও সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।  

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা