• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

‘আমাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না’

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪  

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ নামের জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলাম। তিনি জাহাজটির দ্বিতীয় প্রকৌশলী। দস্যুদের হাতে আটক হওয়ার খবর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জানার পর থেকে দুশ্চিন্তা কাটছে না তৌফিকুলের পরিবারের। তাদের দাবি, দ্রুত জিম্মিদের সবাইকে উদ্ধার করে ভালোভাবে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।

মো. তৌফিকুল ইসলাম খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজা দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট‌।

বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে তৌফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা মো. ইকবাল বিমর্ষ মুখ নিয়ে নিউমার্কেটে তার মোবাইল ফোনের দোকানে যাচ্ছেন। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই কানে আসে কান্নার আওয়াজ। দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তৌফিকুলের স্ত্রী জোবাইদা নোমান।

জোবাইদা নোমান বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আমার স্বামী আমাকে ফোন করেন। তিনি আমাকে জিম্মি হওয়ার কথা জানান। সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলে। তিনি ফোনে বলেছেন, দোয়া করো। আমাদেরতো সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না। কি হবে কিছুই তো আসলে জানি না। এটাই শেষ কথা। এরপরে আর কথা হয়নি। চট্টগ্রাম থেকে ইফতেখার নামে একজন কর্মকর্তা ফোন করে পরিবার থেকে লোক পাঠাতে বলেছিলেন। আমার মেজো ভাসুর এবং আমার ভাই দুই জন গিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, আমি আমার স্বামীকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামী কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছি। ২০০৮ সাল থেকে আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করলেও এ ধরনের বিপদে এবারই প্রথম পড়েছেন।

তৌফিকুলের মা দিল আফরোজা বলেন, ‘ছেলেকে জিম্মি করার কথা শোনার পর তাকে কয়েকটি দোয়া পড়ার কথা বলি। তখন সে আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কথা বলার একপর্যায়ে জলদস্যুরা তার ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি। গত ২৫ নভেম্বর সে বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে ওই জাহাজটিতে গিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। জানি না, সে কী অবস্থায় আছে। আমাদের দাবি, শুধু আমার ছেলে না, সবাইকে দ্রুত সুস্থভাবে-ভালোভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে অন্তত স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।’

উদ্বেগে আছেন জানিয়ে এই মা বলেন, আমার ছেলেসহ ২৩ জন বন্দী অবস্থায় আছেন। সবাইকে যেন সরকার তাড়াতাড়ি তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে আনে। 

এদিকে, বাবা জিম্মি হওয়ার খবর জানার পর থেকে তৌফিকুলের ৭ বছর বয়সী মেয়ে তাসফিয়া তাহসিনা ও ৫ বছর বয়সী ছেলে আহমদ মুসাফিকে কাঁদছে। তারা বাবার নিরপাদে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। 

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ছিলেন। তারা হলেন-তারা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা