• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

২০ টাকার শীতবস্ত্রে লাখ টাকার হাসি!

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯  

লেখার শিরোনাম দেখে অনেকের কাছে হয়ত খটকা লাগতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হাসিটা লাখ টাকার থেকেও বেশি হতে পারে। কারণ পুরো দেশের উপর জেঁকে বসা তীব্র শীতে নাকাল মানুষ। শীত ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। তবে বেশি ভোগাচ্ছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষদের। বিশেষ করে ঢাকা শহরে যারা ভবঘুরে বা যাদের জীবনটা ফুটপাতে ঘুমিয়ে আর চেয়েচিন্তে খেয়ে কাটছে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে।

কারণ এসব মানুষের শীত নিবারণের জন্য একদিকে নেই কাপড়চোপড়। অন্যদিকে দিনরাত কাটে তাদের ফুটপাতে । যে কারণে এক টুকরো কাপড়ের জন্য বিত্তবানদের কাছে হাত পাততে হয় ছিন্নমূল মানুষদের।তাই শীতের হাত থেকে নিজে এবং বিশেষ করে শিশুদের রক্ষায় যখন কারো কাছ থেকে শীতবস্ত্র পান এসব মানুষ তখন তাদের খুশির সীমা থাকে না।

দেশের অন্যান্য এলাকার মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে রাজধানী ঢাকায়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও শুক্রবার তাপমাত্রা বেড়ে ১৯ ডিগ্রি হয়েছে।

এদিকে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই শীতের প্রকোপ আরও বেশ কিছুদিন চলবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ছেলের জন্য কিছু কাপড় কিনলাম বৃহস্পতিবার রাতে। গুলিস্তানের রমনা ভবনের নিচের একটি দোকান থেকে ছেলের জন্য চারটি ফুলহাতার গেঞ্জি ও দুটি হুডি কিনলাম।রাত তখন সাড়ে নয়টা।

সম্মেলনের আগের রাত হলেও শীতের কারণেই হয়ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কমে আসছিল। রাস্তায়ও মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম দেখা গেছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার ছেলের বয়সী একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কেনাকাটা দেখছেন।

 

দাম মিটিয়ে বিদায় নেয়ার সময় খেয়াল করলাম দোকানির কাছে ছোট বাচ্চার জন্য একটা প্যান্ট দেয়ার আবদার করছেন ওই ছিন্নমূল নারী। কিন্তু দোকানি ধমক দিয়ে বললেন, ‘যা এখান দিয়ে, প্যান্ট কি কিনে রাখছো দোকানে?’

জরাজীর্ণ শরীরের মা-ছেলেকে দেখে মায়া লাগলো। বললাম, কি হয়েছে? বাচ্চাটার মা বললো, ভাই ওর জন্য একটা ফুল প্যান্ট কিনে দেবেন? শীতে কষ্ট হয়। আর কিছু লাগবে কি না জানতে চাইলে বললেন, না প্যান্ট হলেই হবে। ভাবলাম, কত অল্প চাহিদা।

পরে দোকানিকে বাচ্চাটার জন্য একটা প্যান্ট দিতে বললাম। দোকানি খুঁজে বের করে বাচ্চাটির হাতে প্যান্টটি দেয়ার পর মা-সন্তান দুজনই তৃপ্তির হাসি দিয়ে চলে গেলেন। তবে যাওয়ার সময় অপরিচিত ওই মা বলে গেলেন, ‘আল্লাহ আপনারে ভালো রাহুক (রাখুক)।’

দোকানিকে টাকা দিয়ে বললাম প্যান্টের দাম রাখেন। মাত্র ২০ টাকা রেখে বাকি টাকা সে ফেরত দিলো। মনে মনে ভাবলাম,২০ টাকার একটা শীতবস্ত্র পেয়ে মা-ছেলের মুখে যে হাসি দেখলাম তা লাখ টাকা দিয়েও কেনা যাবে না।

তখন ভেবে দেখলাম,আশপাশের শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগ নিয়ে দাঁড়াতে পারি কি না। আমার বিশ্বাস অসম্ভব কিছুই না। একটু উদ্যোগ ও আন্তরিকতা থাকলেই হবে।

লেখক: সংবাদকর্মী

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা