• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

১০ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় মাদারীপুর

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর জেলা। এর আগে ধারাবাহিকভাবে ২৫ নভেম্বর জেলার শিবচর উপজেলা, ৪ ডিসেম্বর রাজৈর এবং ৮ ডিসেম্বর কালকিনি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। সর্বশেষ প্রায় একটানা ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধ শেষে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এই দিনে সদর উপজেলার সমাদ্দার ব্রিজের কাছে একটানা ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর। এ সংবাদ মুক্তিকামী মানুষের কাছে পৌঁছালে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ উল্লাস করে।

বিজয়ের পতাকা ওড়ে মাদারীপুরের আকাশে। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মুক্তিযোদ্ধারা জানান, জেলার অন্যান্য থানা ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী পালিয়ে গিয়ে জেলায় আশ্রয় নেয়। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরেরা মাদারীপুর শহরের এআর হাওলাদার জুট মিলের ভেতরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। জেলার মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে হানাদারদের।

৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের ড্রাইভার আলাউদ্দিন কলাগাছিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌঁছে দেয়, ৯ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকিস্তানিবাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় ৪ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থান নেয়।

৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় হানাদারবাহিনী গোলবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ তাদের বাঙালি দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদবাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে হানাদারবাহিনী দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা একটি কনভয় থেকে নেমে কভার ফায়ার করতে করতে আরও জোরে গাড়ি নিয়ে এগুতে থাকে। এ সময় হানাদারবাহিনীর ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবর্ষণে ভীত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে হানাদার ও তাদের দোসরদের একটি অংশ সমাদ্দার ব্রিজের দুইপাশে আগের তৈরি করা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। অপর অংশটি সমাদ্দার ব্রিজ পাড় হয়ে রাজৈর থানার টেকেরহাটের দিকে পালিয়ে যায়।
 
এদিকে সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারাদিন সারারাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সম্মুখ যুদ্ধ চলে মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে। তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে হানাদারবাহিনীর গোলা-বারুদ শেষ হয়ে গেলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিকেলের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে হানাদারবাহিনী রাইফেলের মাথায় সাদা কাপড় উড়িয়ে বাঙ্কার থেকে বের হয়ে আসে। এসময় হানাদারবাহিনীর মেজর আব্দুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদসহ ৩৭ সেনা ও ১৪ জন রাজাকার সদস্যসহ মোট ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর জেলা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদারীপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসুচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন খলিল বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, এক সাগর রক্ত আর লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলেও দেশের মাটিতে এখনও এদেশীয় দোসররা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা