• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

সবর করা মুমিনের অনুপম ভূষণ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৯  

দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এবং পরীক্ষা দেয়াই জীবন-মৃত্যু সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম? আর তিনি পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল (সূরা মুলুক, আয়াত-২)।

আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে ও আল্লাহর বিধান মানতে গিয়ে অনেক ধরনের ত্যাগ ও বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। এর বিনিময় আমরা কখনও অভাব-অভিযোগ করিনি। সব সময় সবরের পরিচয় দিয়েছি। এ সব শুনে ফেরেশতারা বলবে, মারহাবা, আপনাদের আমলের যথার্থ প্রতিদানই আপনারা পেয়েছেন।

এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিদান বিনা হিসেবে দেয়া হবে' (সূরা আজ-জুমার :১০)।

সবর মুমিনের জীবনের একটি অপরিহার্য গুণ। সবর আরবি শব্দ। সবর শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- ১. আল হাবসু (আটকে রাখা); ২. (আল মানয়ু) বাধা দেয়া; ৩. ধৈর্যধারণ করা।

ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন, সবর হচ্ছে যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘটে বলে বান্দা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে পুরস্কার কামনা করা।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা) হে আমার বিশ্বাসী দাসগণ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যারা এ পৃথিবীতে কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। ধৈর্যশীলদের তো অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে (সূরা জুমার, আয়াত-১০)।

রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের শক্তি দান করবেন। আর ধৈর্য অপেক্ষা অধিক উত্তম ও কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দেয়া হয়নি (বুখারি, ১৪৬৯)।

শূন্য থেকে অনন্যতায় উঠে যাওয়ার ইতিহাস যেমন পরীক্ষিত, তেমনি পুরনো। আর এর জন্য চাই নিশ্ছিদ্র ধৈর্য ও সাধনা। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় একবার যে বুক ভরে নিতে পেরেছে, বিজয় ও সফলতা তার পায়ে চুমু খেয়েছে বারবার। ধৈর্যশীলদের জন্য মহান আল্লাহ ভালোবাসা অনিবার্য।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন (সূরা বাকারা, আয়াত-১৫৩)। পৃথিবীতে মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র। পাঁচতলায় থেকেও কেউ যেমন দুঃখী হতে পারে। আবার কেউ গাছতলায় থেকেও সুখী হতে পারে। মানুষের জীবনে বহু রকমের দুঃখ-কষ্ট রয়েছে। তবে মুমিনের জীবনে দুঃখ-কষ্ট তো অনিবার্য।

এই ঘোষণা আল্লাহ তায়ালা নিজেই কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, আর আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমরা জেনে নিই তোমাদের মধ্যে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীলদের এবং আমরা তোমাদের কর্মকাণ্ড পরীক্ষা করি (সূরা মুযাম্মিল-৩১)। এই দুঃখ-কষ্ট সব সময় মুমিনের জীবনে কল্যাণই বয়ে আনে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদে আক্রান্ত করেন (সহিহ বুখারি, হাদিস-৫৬৪৫)।

অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো আপনজনকে মৃত্যু দিই আর সে সবর করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত (সহিহ বুখারি, হাদিস-৬৪২৪)।

আসলে পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্ট কার নেই? যদি আমাদের নবীজির জীবনীতে তাকাই; তিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম সত্যবাদী। তা সত্ত্বেও বিরুদ্ধবাদীরা তাকে মিথ্যুক বলে গালি দিয়েছে। তার মতো সুস্থ-নিখুঁত বুদ্ধি কার কখন ছিল? তথাপি তারা তাকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। সর্বকালের সর্বোত্তম সারগর্ভ কথা তিনিই বলতেন। তারপরও তার অমূল্য কথাকে অসার কল্পনা ঠাওরানোর মতলবে তাঁকে কবি বলে কটাক্ষ করত।

মানুষের শ্রেষ্ঠতম দরদি বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তাঁর পবিত্র শরীরে আঘাতের পর আঘাত করেছে, তাঁকে রক্তাক্ত করেছে। তাকে দেশছাড়া পর্যন্ত করেছে। আমরা এর চেয়েও অনেক ভালো আছি।

সবরের এ ফজিলতের দিকে তাকিয়ে কেউ আবার বিপদ চেয়ে বসে কি-না- হাদিস শরিফে সে বিষয়ে আবার সতর্কও করা হয়েছে। বিপদ তো এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। সবরের সওয়াবের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। মানুষ মাত্রই বিপদ থেকে দূরে থাকতে চায়। বিপদে পড়ে গেলে মুক্তি কামনা করে। এটাই স্বাভাবিক। ইসলামের শিক্ষাও তাই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- হে লোকসকল, তোমরা শত্রুর মুখে পড়ার কামনা কর না। বরং আল্লাহর কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা কর। তবে যখন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হয়ে পড়বে তখন সবর কর।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা