• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শাহজালালে কাস্টমসের স্ক্যানার সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় যাত্রীরা ব্যাগেজ পাচ্ছেন অল্প সময়ের মধ্যেই। তবে দ্রুত ব্যাগ পেলেও যাত্রীদের আটকে থাকতে হচ্ছে কাস্টম চেকিং এলাকায়। বিমানবন্দরে কাস্টমস জোনে ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি মাত্র ব্যাগেজ স্ক্যানার মেশিন, আর্চওয়ে। এ কারণে চেকিং করতে ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত যাত্রীদের আটকে রাখছেন কাস্টম কর্মকর্তারা। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিলেও কাস্টমসের স্ক্যানারে সংকটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা। একইসঙ্গে যন্ত্রপাতি সংকটে চোরাচালান ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। বিমানবন্দর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি ৩৯টি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এসব এয়ারলাইন্সে দিনে গড়ে ২৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এর মধ্যে ১৩০টি আান্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করছে। যাত্রীরা বিমান থেকে নেমে প্রথমে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। এরপর লাগেজ বেল্টে এসে সংগ্রহ করেন নিজের মালামাল। বর্তমানে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীরা পিক আওয়ারেও ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যাগেজ। যাত্রীরা ব্যাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করার আগে পার হতে হয় ক্যাস্টমস জোন। এখানে চোরাচালান রোধ, অবৈধ, শুল্ক যোগ্য মালামালের শুল্ক আদায়ের জন্য যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়। প্রাথমিকভাবে শুল্ক কর্মকর্তারা আনুপাতিক হারে যাত্রীদের ব্যাগেজ স্ক্যানার মেশিনে চেক করেন এবং আর্চওয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করেন। তল্লাশিতে শুল্কযোগ্য পণ্য পাওয়া গেলে আদায় করা হয় শুল্ক, জব্দ করা হয় অবৈধ মালামাল। বিদেশে থেকে আসা যাত্রীদের জন্য মাত্র ৩টি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউসের। ৩টির মধ্যে একটি ব্যবহার হয় ভিআইপি গেটে। বাকি দুটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য। বর্তমানে হজ যাত্রীদের জন্য জন্য আলাদা জোন করায় দুটির মধ্যে একটি সেখানে ব্যবহার হচ্ছে। বাকি একটি স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কাস্টম কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে একাধিক ফ্লাইট কাছাকাছি সময়ে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ৩১ মিনিটে দুবাই থেকে এমিরেটসের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে। এর কিছু সময় পর ৫টা ৪২ মিনিটে কুয়ালালামপুর থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস ৩১৬ ফ্লাইট অবতরণ করে। এরপর ৫টা ৪৬ মিনিটে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর ৬৩৪ ফ্লাইট অবতরণ করে। ৫টা ৫৯ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০৮৫ ফ্লাইটটি আসে সিঙ্গাপুর থেকে। ৬টা ৪ মিনিটে কলকাতা থেকে আসে ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট। ৬টা ২৯ মিনিটে ব্যাংকক থেকে আসে ইউএস বাংলার বিএস ২১৪ ফ্লাইটটি। ৬টা ৫০ মিনিটে কলকাতা থেকে আসে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের আরএক্স ৭৯২ ফ্লাইট। মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যে আসা এই ফ্লাইটগুলোর যাত্রীরা দ্রুত সময়ে ব্যাগেজ পেলেও আটকে যান কাস্টম জোনে প্রবেশ মুখে। ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে সেখানে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। ব্যাগেজ বেল্ট এরিয়া থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীকে কাস্টমস জোনে প্রবেশ করতে দেন কাস্টম কর্মকর্তারা। তাদের লাগেজ সম্পন্ন হলে ফের কয়েকজনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় কাস্টমস জোনে। দীর্ঘ জট লাগায় কোনও কোনও যাত্রীকে ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হচ্ছে কাস্টমস জোনে।
জানা গেছে, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিমানবন্দরে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার, নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার কারণে কমেছে লাগেজ হারানো, চুরি হওয়া, প্রতারণা, টাকা চাওয়া, খারাপ ব্যবহার করার মতো ঘটনা। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে বিমানবন্দরে দোকান, লাউঞ্জ, অবকাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনেও কিছু কাউন্টার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যাগেজ সরবরাহ করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের ব্যাগ পেতে বেশি সময় লাগছে না। কিন্তু কাস্টমসে যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যানারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। এ কারণে কাস্টমস জোনে এসে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়।

যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, প্রতিনিয়ত যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের সীমিত অবকাঠামোর মধ্যে যাত্রীদের ভালো সেবা দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যাত্রীদের যেন কোনও ধরনের অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিমানবন্দরে যেসব সংস্থা ও এজেন্সি কাজ করে তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ৪টি নতুন স্ক্যানার কেনা হচ্ছে, আশা করছি অক্টোবর মাসের মধ্যেই এগুলো চলে আসবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা