• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত গতিতেএগিয়ে চলছে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০১৯  

 সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ। বাংলাদেশ ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মানাধীন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে শুরুতেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সুন্দরবনের কাছাকাছি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান হওয়ায় দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের এই দাবির সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একাত্মতা ঘোষণা করে। ফলে অনেকটাই থেমে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ।

এদিকে পরিবেশবাদীদের এই বিরোধীতার কারনে ইনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুকিপূর্ণ তালিকায় স্থান দেয়। ফলে কিছুটা বিব্রবতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে বিরোধীতার এই অবস্থায়ও হাল ছাড়তে রাজি হয়নি সরকার। অতি সম্প্রতি ইউনেস্কোর বৈঠকে সরকার নানা তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কারনে সুন্দরবনের কোনই ক্ষতি হবেনা। আর এর পর থেকেই বিরোধীরা কিছুটা হলেও থেমে যায়। একই সঙ্গে দ্রুত গতিতে শুরু হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে গিয়েই বাধ্য হয়ে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট অর্থাৎ ৬৬০ মেগাওয়াটের উৎপাদন ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসেই শুরু করার কথা ছিলো। অবশ্য এখনো প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়নি। এই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় বরাদ্দ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমার ডলার মূল্য অনুযায়ী যা বাংলাদেশী টাকায় দাড়ায় ১৩ হাজার ৪শ’ ৪০ কোটি টাকা।

সূত্রমতে. ৯শ’ ১৫ দশমিক ৫ একর জমির উপর নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ল্যান্ড ভেভেলপমেন্ট, বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণসহ সব অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থানে মাটির অবস্থানগত কারনে প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়তে পারে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে যেখানে ৮ হাজার পায়েলিং করার কথা ছিলো সেখানে এখন লাগবে প্রায় ২৮ হাজার পায়েলিং। এটাই এই কেন্দ্রের বড় সমস্যা বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবি এবং ভারতের পক্ষ থেকে সেদেশের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বা এটিপিসি উভয় দেশের প্রনিধিত্ব করছে।

সূত্রমতে, এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত মূল টাকার ৩০ ভাগ ভারত ইকুইটি হিসেবে প্রদান করবে। বাকি ৭০ ভাগ ঋণ হিসেবে প্রদান করবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। দীর্ঘ মেয়াদে এই ঋণ প্রকল্পের আয় থেকে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটির মালিকানা বাংলাদেশের ৫০ ভাগ এবং ভারতের ৫০ ভাগ। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো বিদ্যুতই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে দাবি করেছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এখন আর কোনও সমস্যা নেই। নির্ধারিত সময়েই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ দরকার বলে বাধ্য হয়েই রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে হচ্ছে। সুন্দরবন কি আমাদের ঐতিহ্য নয়, আমাদের সম্পদ নয়? তারপরও অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একটা ব্যালান্স আমাদের করতে হয়েছে। দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের মাঝে মাঝে অপ্রিয় উন্নয়নও করতে হয়। এটা সেই রকমই একটি প্রকল্প।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা