• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিএনপিকে কী বার্তা দেবেন খালেদা জিয়া

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নাকচ হওয়ায় নতুন করণীয় ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামিন না হওয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হলেও পরবর্তী পদক্ষেপ কৌশল নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা ছিলেন উপায়হীন। এক্ষেত্রে কারাগার থেকে খালেদা জিয়া কী বার্তা পাঠাবেন- তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

 

নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার আগে খালেদা জিয়া দলের নেতাদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, দল তার ব্যত্যয় করেনি। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের শুনানিতে জামিনের বিষয়টি নাকচ হয়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়ার মনোভাবে পরিবর্তন আসতে পারে। দলীয় প্রধানের মনোভাবের এই পরিবর্তন দলকে কোন দিকে ধাবিত করবে- তা নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারাও এখন সন্দিহান।  ফলে বর্তমানে খালেদা জিয়ার মনোভাব কেমন এবং তিনি কী বার্তা দেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে দলের পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে- এমনটিই বলছেন বিএনপির নেতারা।


শুনানি নাকচের দিনই সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের আগাগোড়াই ছিল দলীয় প্রধানের জামিন না হওয়ার প্রসঙ্গ। নেতারা মনে করছেন, সরকারের হস্তক্ষেপেই খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। শুনানির একদিন আগে বুধবার সকালে কূটনীতিকদের সামনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছিলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের রিপোর্ট বদলে দেওয়া হয়েছে। পরদিন আপিল বিভাগে জামিন বাতিলের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক পক্ষ জানাচ্ছে, কর্মসূচি দিলেও তা একেবারেই রাজনৈতিক কৌশলগত জায়গা থেকে দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য মুক্তি বা জামিনের সঙ্গে এসব কর্মসূচির কোনও কার্যকর সম্পর্ক থাকবে না। এক্ষেত্রে একমাত্র পথ খালেদা জিয়ার নির্দেশনা। তিনি জামিন নাকচের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন আর দলকে কী বার্তা দেবেন, এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে বিএনপির পরবর্তী রাজনীতি।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের মনোভাব এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। কিন্তু আপিল বিভাগ থেকে তার জামিন নাকচ হওয়ার খবরে দল দেশের জনগণ যেমন হতাশ, তেমনি তিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছেন। তিনি আশাবাদী ছিলেন উচ্চ আদালত থেকে তার জামিন হবে। এখন তিনি কী বার্তা দেন সে অপেক্ষায় আছি আমরা।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার রাতে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পরিস্কার হওয়া যাবে।’ বিএনপির একটি পক্ষ বলছে, খালেদা জিয়া কী নির্দেশনা দেবেন, তা বিএনপির কাছে কবে নাগাদ আসবে তা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরবর্তী কারও সাক্ষাতের মধ্য দিয়েই এর ইতি ঘটবে- এমনটি বলছেন এই পক্ষ।


খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র জানায়, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন পরিবারের কয়েকজন সদস্য। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ আজই (শুক্রবার) জানিয়েছে শনিবার আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবো। অন্তত এক মাস ধরে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে পারেননি।

 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, ‘আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই বিএনপিকে কর্মসূচি দিতে উৎসাহিত করেছিলাম। কিন্তু দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উৎসাহে সাড়া দেননি। তবে তিনি জানিয়েছিলেন কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সক্রিয় হবে বিএনপি।এই নেতার মন্তব্য, ‘আসলে বিএনপির কিছু করার নেই। রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি থেকে দূরে থাকায় আগামী দিনের রাজনীতিতেও বিএনপির অবস্থান ক্ষীণ।


বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে চাইলেও আদতে সক্রিয় হওয়ার কোনও সম্ভাবনা তারা গত দুই বছরে দেখাতে পারেননি। ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা-অনুরাগের কারণে জীবন দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও রাজপথে নিষ্ক্রিয় থেকেছে নেতাকর্মীরা। বিকালে বা সন্ধ্যায়, কখনও সকালে দলের গুলশান বা নয়াপল্টন কার্যালয়ে কোট-টাই পরে একরত্তি হাজিরা দিলেও জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি বড় অংশ ব্যবসা-বাণিজ্য সামলানোর কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। একইসঙ্গে স্বয়ং তারেক রহমান যখন মাকে কারাগারে রেখে নিজেকে নিরাপদ রেখেছেন বিদেশে, এই বাস্তবতায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা কার্যকরভাবে কর্মসূচি পালনে দ্বিধাগ্রস্ত।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘যে গ্রাউন্ডে জামিন চাওয়া হয়েছিল, সেই গ্রাউন্ডে কোর্ট সব সময়ই জামিন দেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তো শুনলেন তার জামিন হয়নি। তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন অসুস্থতার গ্রাউন্ডে চিকিৎসার জন্য জামিন পাবেন। বিএনপির এখন নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প নেই। দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকে নজর রেখেই সাবধানে কর্মকৌশল ঠিক করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার দুই বছর পূর্ণ হবে নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি। ২০১৮ সালের ওই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। এরপর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা চলছে। দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই কারাবন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা