• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বরফ মানব ওটজি অভিশাপের গল্প

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৯  

ওটজি! প্রাকৃতিকভাবেই মমিতে পরিণত হওয়া এই ব্যক্তি খুব সম্ভবত ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জীবিত ছিল। ওটজির মমি কি অভিশপ্ত? এই প্রশ্ন উঠে তখনোই যখন ওটজির দেহ আবিষ্কার, বরফের নিচ থেকে উঠিয়ে আনা ও পরে তার মমি নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের অনেকেরই অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়। এবং সবগুলো একই বছরে! এতগুলো মৃত্যু কি কেবলই কাকতালীয়?

আজ থেকে প্রায় ২২ বছর আগের কথা। ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির নুরেমবার্গ থেকে আসা দুই পর্যটক হেলমুট আর এরিকা সিমন হিমালয় পর্বতমালা আল্পসে আরোহণ করছিলেন। হঠাৎ সেখানে এক আদি মানবের সন্ধান পান তারা। অবশ্য জীবন্ত নয়, একটি মমি। তারা ভেবেছিলেন, এ দেহটি হয়তো কোনো হতভাগ্য পর্বতারোহীর হবে, যে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে মারা গিয়েছিল।

২২ সেপ্টেম্বর মমিটিকে পুরোপুরি উদ্ধার করা হয়। আইসম্যানের সঙ্গে বরফের নিচে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র। ওটজির দেহ ইতালির বোলজ্যানোতে বিশেষভাবে তৈরি এক জাদুঘরে সংরক্ষণ করা আছে। বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হিমায়িত ঘরে রাখা ওটজির দেহকে দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। আইসম্যান বা বরফ মানব ওটজি সম্পর্কে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে ওটজির মমি কি অভিশপ্ত? ওটজির দেহ আবিষ্কার, বরফের নিচ থেকে উঠিয়ে আনা ও পরে তার মমি নিয়ে গবেষণার ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে এ প্রশ্নটি আসাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই অস্বাভাবিকভাবে একই বছর মৃত্যুবরণ করেন। অনেকগুলো মৃত্যু যেমন রহস্য, সন্দেহ আর প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, তেমনি কয়েকটি মৃত্যুকে অবশ্য স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়া যায় নিমিষেই।

৬৩ বছর বয়সে যদি কেউ মারা যায়, তবে সেটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি হন একজন বিজ্ঞানী যিনি ৫,৩০০ বছর আগের বরফে জমে যাওয়া এক মৃত সৈনিকের মমি আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত, তখন একটু প্রশ্নের উদ্রেক হতেই পারে! শুধু কি তাই? তার সঙ্গে সঙ্গে একই বছর সে মমির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও সাতজন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু খুব স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ একটা কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। আর সেটিই আসলে অভিশাপ।

বরফ মানব ওটজিকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন আমেরিকান বংশোদ্ভূত মলিকুলার প্রত্নতত্ত্ববিদ টম লয়। কিন্তু এ বইটি চূড়ান্ত রূপ পাওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে তাকে তার ব্রিজবেনের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন চারদিকে ওটজির অভিশাপ নিয়ে নানা রকম কানাঘুষা শুরু হয়। কিন্তু অনেকেই একে উড়িয়ে দেন। টম লয়ের এক সহকর্মী বলেন, 'লয় এসব অভিশাপে বিশ্বাস করতেন না। এগুলো কেবলই কুসংস্কার। যারা মারা যাচ্ছে এটার সঙ্গে অভিশাপের কোনো সম্পর্ক নেই।'

কিন্তু আস্তে আস্তে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হতে থাকে আরও কিছু নাম। বরফ মানব ওটজির মমি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আরেক প্রত্নতত্ত্ববিদ কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগের পরিচালক। আর এই গবেষণা শুরুর পর পরই তিনি রক্তের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হন, যেটি টানা ১২ বছর ধরে তাকে ভোগাতে থাকে।

৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হেলমুট সিমনও। তিনিই প্রথম ওটজির দেহটিকে আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে হাইকিং এ বেরিয়ে প্রবল তুষারপাতের কারণে মারা যান। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো ওই যে সিমন যেখানটায় মৃত্যুবরণ করেন, ঠিক একই জায়গায় ওটজির দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। ফলে মানুষের মনে ওটজির অভিশাপের বিষয়টি দানা বেঁধে ওঠে।

এখানেই শেষ নয়, সিমনের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় আরও একটি অপমৃত্যু ঘটে। এবারকার শিকার ডিয়েটার ওয়ারন (৪৫)। তিনি দেহ উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর সুস্থ ডিয়েটারের মৃত্যু হয় এক আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকে। এরপর এপ্রিলে প্রত্নতত্ত্ববিদ কনরাড স্প্লিন্ডার (৫৫) মাল্টিপল সেক্লরোসিসে ভুগে মারা যান। এই লোকটিও বরফ মানবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনিই প্রথম ওটজির দেহ পরীক্ষা করেছিলেন। বাদ যাননি ওটজিকে পরীক্ষাকারী ফরেনসিক টিমের প্রধান রেইনার হেন (৬৪) পর্যন্ত। তিনি যখন ওটজিকে নিয়ে একটি বক্তব্য প্রদানের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন, তখন এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।

এরপর পর্বতারোহী কার্ট ফ্রিটজ (৫২) যিনি হেনকে ওটজির মমির সন্ধান দিয়েছিলেন, পর্বতারোহণের সময় তুষারধসের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। ওটজিকে তার বরফাচ্ছাদিত সমাধি থেকে ওঠানোর ছবি ধারণকারী অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক রেইনার হোয়েজল (৪৭) মারা যান মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত হয়ে। এসব মৃত্যুর রহস্য এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। বিজ্ঞানীরা অভিশাপের বিষয়টিকে পাত্তা না দিলেও অনেকের বিশ্বাস, এ মানুষগুলোর মৃত্যুর সঙ্গে ওটজির মমির কোনো কোনো একটা যোগসাজশ অবশ্যই রয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা