• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনায় সরকারি জমি দখলেই গড়া হয়েছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব কৃষি কলেজ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনামান্দারডাঙ্গা মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখল করে সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যাক্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়েছেন ‘খানজাহান আলী কৃষি কলেজ। অবশ্য ওই কলেজে কোন শিক্ষা কার্যক্রম নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বর্তমানে ওই জমির ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে নামপত্তনের চেষ্টা চলছে বলে পাউবো কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ওই লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৫ নং পোল্ডারের আওতায় ঘোনামান্দারডাঙ্গা মৌজায় জে.এল নং-৫১, সিট নং ৩ সিএস দাগ নং ৪০৩ ও ৪০৬ এবং আর এস দাগ নং ২০৯৩ এর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শূণ্য দশমিক ৯৫০ একর জমি ও ৪০২ ৪০৪ এবং আর এস দাগ নং ২০৮০ ও ২০৯৫ এর সরকারী জমি খানজাহান আলী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আবুল কালাম আজাদ অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। তাকে বারবার তাগিদ করা সত্যেও বিষয়টি আমলে আনছেন না। তিনি ভূয়া কাগজপত্র তৈরীর মাধ্যমে নিজ নামে নামজারির পাঁয়তারা চলেছেন।

খুলনা পওর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শরীফুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে দখল করে রাখা জমি থেকে অবৈধস্থাপনা বার বার সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও মোঃ আবুল কালাম আজাদ অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করে ভূয়া কাগজপত্র তৈরীর চেষ্টা করছেন। সরকারী সম্পত্তি দখলমুক্ত করা লক্ষ্যে ও জালিয়াতির মাধ্যমে যাতে নামজারি না করতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনামান্দারডাঙ্গা সড়কের পাশে প্রায় এক একর জমি মাটি ভরাট করে স্থাপন করা হয়েছে কৃষি কলেজ ভবন। দুই তলা বিশিষ্ট ভবনের উপর ও নীচতলায় ৮টি কক্ষ রয়েছে। এর দুটি কক্ষে কয়েকটি ভাঙাচুরা চেয়ার টেবিল দেখা গেছে। অন্য কক্ষগুলি আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভবনটির পিছনে রয়েছে দুই খন্ডের মৎস্য খামার। একটি খন্ডে ৮ একর জমি নিয়ে মাছ চাষ করছেন হানিফ মোড়ল নামে এক ব্যাক্তি। আরেক খন্ডে দুই একরের মত জমি। ওই জমিও লিজ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানেও মাছ চাষ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বছর দু’য়েক আগে সড়কের পাশে প্রাচীর তুলে দুই তলা একটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে ‘খানজাহান আলী কৃষি কলেজ’ নামে সাইনবোর্ড টানানো হয়। তবে ওই কলেজে কোন শিক্ষক শিক্ষিকা নেই, নেই কোন শিক্ষার্থী। কলেজটি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আবুল কালাম আজাদের নাম রয়েছে।

হানিফ মোড়লের মৎস্য খামারের কর্মচারিরা জানিয়েছেন, ওই জমি আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে লীজ নিয়ে তারা মাছ চাষ করছেন। কলেজটির বিষয়ে তারা জানান, ভবনের প্রধান গেট সার্বক্ষনিক তালাবদ্ধ থাকে। কখনই ছাত্র ছাত্রী আসতে দেখেননি।

কলেজের সামনের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস নামে এক ব্যাক্তি বলেন, কলেজের জমি নিয়ে পাউবো’র সাথে ঝামেলা চলছে বলে জানি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ২০০৪ সালে স্থাপিত এ কলেজটিতে চার বছর মেয়াদী দু’টি ডিপ্লোমা কোর্সে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচশত পঞ্চাশ। কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সকলে দেশে-বিদেশে, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী, উচ্চ শিক্ষা ও অনেকে স্ব-অর্থায়নে ডেয়ারী ফার্ম, মৎস্য খামার, নার্সারীসহ বিভিন্ন কৃষি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তৈরীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। ২০১৭ ও ১৮ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। যার মধ্যে ৫০ জন বিভিন্ন স্থানে চাকরী করছে। আরো ১৮ জন উগ্যোক্তা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের সাথে শিক্ষা কার্যক্রমের কোন মিল নেই। স্থানীয়রা বলছেন, ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল আবুল কালাম আজাদের মৎস ঘের পাথারা দেওয়ার জন্য। আকষ্মিক একদিন সেখানে লাগানো হয় সাইনবোর্ড। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এনে করা হয় উদ্বোধন। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র সাইনবোর্ডে লাগানো প্রতিষ্ঠান। কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের যাতায়েত কখনো কেউ দেখেনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের নিজস্ব জমিতে কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি ছিলো। কিন্তু তা এখন আর কাজে না লাগার কারণে ওই জমি লীজ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসন বরাবরে যে অভিযোগ দিয়েছে সেই অভিযোগের বিষয়টি একটি পারিবারিক সমস্যার কারনে দিয়েছেন খুলনা পওর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শরীফুল ইসলাম। তার সাথেও আমি কথা বলেছি। তবে তিনি কেনো এই অভিযোগ দিয়েছেন তা আমি জানি না। তিনি খাস জমি অবৈধ দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন বলেন, শরাফপুরের ওই কলেজের ম্যধ্যে সরকারী জমি রয়েছে। যা জরিপ করে পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডুমুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা