• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রা উপজেলায় আ.লীগে অনুপ্রবেশকারীদের বৃত্তান্ত

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

মু. হুমায়ুন কবিরের রাজনীতির উত্থান জামায়াত থেকে। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে পান উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের পদ। গত কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি পারিবারিকভাবেই বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের লোক। তার আপন চাচা আবুল কাশেম হাওলাদার ছিলেন শান্তি কমিটির সেক্রেটারি। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের এই বিএনপি নেতার দাপটে এখন কয়রার আওয়ামী লীগ নেতারাও থাকেন তটস্থ। নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহসিন রেজার সঙ্গী হয়ে দেখা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ হেলালের সঙ্গে। তারপর থেকেই তিনি অঘোষিত আওয়ামী লীগের। তার কাছে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করা নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন হয়রানির শিকার। কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদটিও এখন বিএনপি-জামায়াতের অস্থায়ী কার্যালয়ে রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া তিনি কৌশলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কাজ বিনা টেন্ডারে প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও আছেন সাবেক জামায়াত-বিএনপি নেতাসহ রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতা মামলার একাধিক আসামি। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. দিদারুল ইসলাম ছিলেন কয়রা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি। এরপর হন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগে ভিড়েই তিনি পেয়েছেন উপজেলা কমিটির পদ, সেই সঙ্গে হয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়কও।
সাবেক জামায়াত সমর্থিত এমপি শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসের অনুসারী জামায়াত নেতা শাহবাজ আলী আওয়ামী লীগে ভিড়েই পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদকের পদ। উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জামায়াত নেতা আব্দুল মজিদ গাজীর পুত্র আব্দুল মুমিনও ছিলেন জামায়াতের অনুসারী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আত্মীয় হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার পালাবদলের পরই ভিড়ে গেছেন আওয়ামী লীগে। কব্জা করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শেখ রোকনুজ্জামান ছিলেন জামায়াতের রুকন। বর্তমানে তিনি ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটিও দখল করে আছেন একসময়কার বনদস্যুদের পৃষ্ঠপোষক ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল হত্যা প্রচেষ্টা মামলার আসামি মো. আমিরুল ইসলাম।
এ ছাড়া এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটির অধিকাংশ নেতৃত্বও এসেছে জামায়াত-বিএনপি থেকে। এসব অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে উপজেলা আওয়ামী লীগে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। আর এই অনুপ্রবেশ স্রোতের আকার ধারণ করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিএনপি-জামায়াত নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানো এবং পথসভায় জামায়াত নেতাদের মাধমে তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করার পর থেকে। বর্তমানে বাস্তবতা এমন যে, এসব নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপটে কয়রা উপজেলার মূল স্রোতের আওয়ামী লীগাররাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী আজিজুল হক জানান, বিভিন্ন দলের অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত নেতাদের দাপটে তাদের রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন ত্যাগী নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা নিজ নিজ স্বার্থে বিএনপি, জামায়াত, জাপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বিতর্কিতদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। তাদের দাপটে ত্যাগী নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
কয়রা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বটকৃষ্ণ ঢালী বলেন, কয়রা উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা করছেন উপজেলা আ.লীগ সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা। তিনি দলের গঠনতন্ত্র না মেনেই এলাকায় ইচ্ছামতো দলের বিভিন্ন কমিটি করছেন। এসব কমিটিতে স্থান দিয়ে দলে অনুপ্রবেশকারীদের পুনর্বাসন করছেন তিনি। তাই তার সুপারিশ করা কমিটিগুলো আগামী ২৮ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই বাতিল করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহসিন রেজার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে কয়রা সদরের বাসায় গেলে জানানো হয়, তিনি খুলনায় অবস্থান করছেন।
এদিকে দলে অনুপ্রবেশকারী তালিকা প্রস্তুতের পর চরম আতঙ্ক জেঁকে বসেছে এসব অনুপ্রবেশকারী নেতাকর্মীদের মধ্যে। তালিকায় কার নাম আছে আর কার নাম নেই তা জানতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুন-আর রশিদ বলেন, বিভিন্ন সময় দলে অনুপ্রবেশকারী বিতর্কিতরা আগামীতে দলের কোনো স্তরেই স্থান পাবে না। সে জন্য দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা