• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে মিলাররা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯  

কুষ্টিয়ার মোকামে সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে মিলারদের কারসাজি রয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা থেকে খুচরা বিক্রেতা সবাই। ছোট মিলারদের অভিযোগ অটো মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। অপরদিকে মিল মালিকদের দাবি ধানের দাম বাড়ার ফলে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। 

গত ১৫ দিনে কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৪-৬ টাকা। জেলার প্রতিটি মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান ও চাল মজুদ থাকার পরও চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও ভোক্তারা। এদিকে, বাজার কর্মকর্তার দাবি- তারা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে মোটা থেকে সরু সব ধরনের চালের দাম ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পায়, আবার এ সপ্তাহেও একইভাবে দাম বেড়েছে। ফলে গত ১৫ দিনে কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৪-৬ টাকা। আড়তদারদের দাবি- হঠাৎ করেই কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিশ্বাস অটো রাইস মিল ও খাজানগর মোকামের মিল মালিকরা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। মনিটরিং না থাকায় দেশের অন্যতম বড় মোকাম খাজানগরে এই মুহূর্তে সব চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

শহরের বড়বাজারের আড়ৎদার আজমল আলী বলেন, এক সপ্তাহ আগে মিল গেটে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায়। খুচরা বাজারে আরও দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কাজললতা ও বিআর-২৮ চালের দাম ৩২ থেকে ৩৩ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া মোটা চালের দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে আগের তুলনায়। 

শহরের মঙ্গলবাড়ীয়া বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী ফরিদুর রহমান বলেন, গত ১৫ দিন ধরে চালের দাম বাড়ছে। প্রথমে দৌলতপুরের বিশ্বাস অটো রাইস মিলের মিনিকেট চালের দাম ৫-৬ বৃদ্ধি পায়। এরপর প্রতি সপ্তাহে ২-৩ টাকা করে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। খাজানগর মোকামের চাঁদ আলী নামের ছোট মিলার বলেন, আমি চাতাল লিজ নিয়ে চালের ব্যবসা করি। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা ম্যানুয়াল মিলে ধান ছাঁটাই করে এই চাল অটো মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করি। বর্তমানে বিআর-২৮ ও কাজললতা চাল প্রতি কেজি অটো মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করছি ৩৩ টাকায়। তাদের বাছাই খরচ হচ্ছে কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা। এরপর এই চাল তারা আরও দুই টাকা লাভে ৩৭ টাকায় বিক্রি করছে, যা খুচরা বাজারে গিয়ে বেড়ে ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। খাজানগরে বর্তমানে ৪৪টি অটো মিল এবং হাসকিং মিল চালু রয়েছে দুই শতাধিক। তবে সব ব্যবসা অটো মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালকল মালিক জানান, কয়েক মাস ধরে চাল কেনাবেচা কম ছিল। অটো মিল মালিকদের গুদামে প্রচুর চাল জমে যায়। তাই আমনের নতুন ধান ওঠার আগেই সিন্ডিকেট করে তারা কেজিতে তিন থেকে চার টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি শুরু করেছেন। এজন্যে অন্য জেলা থেকে চালের অর্ডার দিলেও সংকট দেখিয়ে কম সরবরাহ করা হচ্ছে। 

চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। ধানের দাম বাড়ছে এটা ঠিক আছে, কিন্তু উনারাতো (মিলাররা) ধান এখন কেনেননি, ধানটা বোরো মৌসুমে কিনেছেন। তাদের প্রয়োজন মত মাঝারি এবং সরু ধান সেই সময়ে কিনেছেন। এখন যেটা কিনছেন সেটা খুবই নামমাত্র, আর এখনতো কৃষকের ঘরে ধানও নাই। চালের দামটা মূলত মিল থেকেই বাড়ছে বলেন তিনি। চালের দাম বেড়েছে ১৫ দিনের ব্যবধানে, তারা থেকে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি বলেন তিনি।

খুচরা বিক্রেতা ও আড়ৎদারদের অভিযোগ সম্পর্কে কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপি'র কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন সাধু বলেন, মিল মালিকরা তো দাম বাড়াবেই, তারা বেশি দামে ধান কিনে, বেশি দামে চাল বিক্রি করেছে। আগে ৮-৯’শ টাকায় এক মন মিনিকেট ধান কিনে ১৯’শ টাকায় (৫০ কেজির বস্তা) চাল বিক্রি করেছি। এখন ১১’শ টাকায় এক মন মিনিকেট ধান কিনে ২২’শ টাকায় (৫০ কেজির বস্তা) চাল বিক্রি করেছি। 

তিনি আরও বলেন, এখন প্রান্তিক কৃষকের ঘরে কোনো ধান নাই। আমরা এখন বড় বড় মহাজন বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান কিনছি। নতুন ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমে যাবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা