• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

করোনার ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.৮ শতাংশ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২০  

করোনার ধাক্কায় সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর ফলে চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনেকটাই কমে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে।

যদিও করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ। অর্থাৎ, করোনার প্রভাবে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। পাশাপাশি আমদানি ও রফতানি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ধস নামবে। ফলে রফতানি খাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রকোপ কমলে ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধির চাকা আবার কিছুটা সচল হবে। এতে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর করোনা না থাকলে আগামী অর্থবছর স্বাভাবিকভাবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করে আইএমএফ। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছর আবার বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবে বলেও সংস্থাটি মনে করছে। এতে সে অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা দেয় আইএমএফ। যা স্থানীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ২২২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)। গত ২৯ মে সংস্থাটির বোর্ড এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এর আগে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আইএমএফ। তা গত ২১ মে সম্পন্ন হয়। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে সংস্থাটি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি ও রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাসও দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের রফতানি খাতে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। আর আমদানি খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াবে জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও এ হিসাবে প্রায়ই ঘাটতি থাকে বাংলাদেশের।

তবে এ অর্থবছর ঘাটতি অনেকটা বাড়বে। আর সার্বিকভাবে ঘাটতি দাঁড়াবে জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও আগামী অর্থবছর আমদানি-রফতানির চিত্র কিছুটা ইতিবাচক হবে বলে মনে করছে আইএমএফ। এ ক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি খাতে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। তবে আমদানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে। আর চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও বেড়ে দাঁড়াবে জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া সার্বিক ঘাটতি দাঁড়াবে জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে করোনা আঘাত না হানলে চলতি ও আগামী অর্থবছর আমদানি ও রফতানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকত বলে মনে করছে আইএমএফ।

করোনার কারণে রেমিটেন্সেও বাংলাদেশের জন্য সুখবর নেই। ফলে রিজার্ভে পতন ঘটবে বলে জানাচ্ছে আইএমএফ। সংস্থাটির হিসাবে চলতি অর্থবছর রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা না থাকলে যা ১৮ শতাংশে পৌঁছাত। আর আগামী অর্থবছর রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। সে সময় ৭ দশমিক ১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে এ খাতে।

এদিকে অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার ৬৫ কোটি ডলার, গত অর্থবছর শেষে যা ছিল ৩ হাজার ২৭৬ কোটি ডলার। আর আগামী অর্থবছর শেষে রিজার্ভ আরও কমে দাঁড়াবে ২ হাজার ৬৭৮ কোটি ডলার। যদিও করোনা আঘাত না হানলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবণতা থাকত বলেই মনে করছে সংস্থাটি। যদিও করোনার কারণে দেশের মূল্যস্ফীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে আইএমএফ।

সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামী বছর তা থাকবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনা আঘাত না হানলেও মূল্যস্ফীতি একই থাকত বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে করোনার কারণে ব্যক্তি খাতে সঞ্চয় প্রবণতা কমে যাবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিতেও ধস নামবে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি খাতেও বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা