• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

আমেরিকার ২০২০ সালের নির্বাচন: ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বি কারা?

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দামামা বাজতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারনায় আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন। তিনিই যে রিপাবলিকানদের চূড়ান্ত প্রার্থী হচ্ছেন, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। তবে একেবারে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারছেন না তিনি।

ট্রাম্পের নিজ দলের দু’জন প্রার্থী তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। তারা হলেন জো ওয়ালশ এবং উইলিয়াম ওয়েল্ড। তারা দুজনই বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প অযোগ্য। এজন্য ট্রাম্পকে সরিয়ে হোয়াইট হাউসকে পরিশুদ্ধ করতে চান তারা। তবে ট্রাম্পকে হটিয়ে তারা রিপাবলিকানদের চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। অন্যদিকে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক শিবির থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ১৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে লক্ষ্যণীয় দিক হলো, দেশটির রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা বড় অংশ দাঁড়িয়ে গেছেন, যাদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নের চেয়েও বড় কথা হলো, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

যুক্তরাষ্ট্রে যেমনটা হয় যে, চূড়ান্ত নির্বাচনের আগে নিজেদের দলের মধ্যে মনোনয়নের জন্য তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, সেখানে দেখা যায় নিজ দলের প্রার্থীরাই একে অপরকে বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনের আগে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। বরং সবাই মিলে ট্রাম্পের অযোগ্যতাগুলো নিয়ে কথা বলছেন বেশি। এজন্য এই নির্বাচনটাকে ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করছেন অনেকে। এই যুদ্ধে যারা লড়ছেন তাদের নিয়েই এ প্রতিবেদন-

জো বাইডেন: আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনকে ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। অবশ্য নির্বচনের আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্প নিজেই এই হুমকি ডেকে এনেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন যেন তিনি সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করেন। এ ঘটনায় ট্রাম্পকে এখন অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বাইডেন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত সিনিয়র সিনেটর। তিনি ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনে বারাক ওবামার সাথে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পেশায় আইনজীবী বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম কনিষ্ঠতম সিনেটর। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো সিনেটে নির্বাচিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটদের চূড়ান্ত প্রার্থী হলে ট্রাম্পকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যে পড়তে হবে।

মাইকেল ব্লুমবার্গ: ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য মতে চলতি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। আর নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই ধনকুবের। তিনি বলছেন, আগামী বছরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের পক্ষে যারা প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছেন তাদের কেউই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘লড়াইয়ে জেতার মতো যথেষ্ট শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন’। এই উদ্বেগ থেকেই তিনি ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। শীর্ষ ধনীদের তালিকায় থাকা অষ্টম মার্কিনী ব্লুমবার্গ নির্বাচনী প্রচারণায় নিজের অর্থই ব্যয় করতে পারবেন। ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপনে তিনি কোটি কোটি ডলার খরচ করেছেন।

বার্নি স্যান্ডার্স: কর্পোরেট মুনাফাবাদের বিরোধিতা করে এবং `রাজনৈতিক বিপ্লব` ঘটানোর প্রত্যয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন মার্কিন সিনেটর ও ডেমেক্র্যাট রাজনীতিবিদ বার্নি স্যান্ডার্স। ভারমন্ট অঞ্চলের ৭৭ বছর বয়সী স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে হিলারি ক্লিন্টনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। রঙ বিক্রেতার কাজ করা একজন ইহুদি অভিবাসীর সন্তান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বড় হয়েছেন তিনি।

মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে স্বতন্ত্র সিনেটর হিসেবে ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স। তবে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা না করলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে বলে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন বলে জানান তিনি। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা করেছেন এবং ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে যুদ্ধবিরোধী এবং নাগরিক অধিকারের জন্য হওয়া আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন।

এলিজাবেথ ওয়ারেন: ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন আগামী নির্বাচনের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী। ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। ৬৯ বছর বয়স্ক ওয়ারেন তাঁর কঠোর ট্রাম্পবিরোধী অবস্থানের কারণে দলের প্রগতিশীলদের কাছে প্রিয়পাত্র। নারীদের কাছে তিনি পছন্দের, হিলারি প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় যাঁরা মনঃকষ্টে রয়েছেন, ওয়ারেন তাঁদের জন্য সান্ত্বনার কারণ হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আইন বিষয়ের প্রফেসর ওয়ারেন পরিবর্তনের আহ্বান নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। দরিদ্র শ্রেনীর হয়ে কথা বলছেন তিনি। সাম্প্রতিক এক ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাস্ট্রের সর্বনিম্ন বেতন এমন হওয়া দরকার যা দিয়ে একজন মা বা বাবা তার সন্তানদেরকে দারিদ্র মুক্ত রাখতে সমর্থ হন। কিন্তু তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এটা হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’

পিতি বুত্তিগিয়েগ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী এবং প্রকাশ্যে প্রথম সমকামী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন পিতি বুত্তিগিয়েগ। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাউথ বেন্ডের মেয়র ছিলেন তিনি। নৌ বাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা পিতি আফগান যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। ৩৩ বছর বয়সে তিনি তার সমকামী পরিচয় প্রকাশ করেন। বিয়ে করেন ২০১৮ সালে। তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন পিতি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তার প্রশংসা করেছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যথার্থ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন পিতি।

তুলসি গ্যাবার্ড: মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য তুলসি গ্যাবার্ড দেশটির ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। হাওয়াইয় থেকে নির্বাচিত তুলসি কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম হিন্দু প্রতিনিধি। ৩৭ বছর বয়সী তুলসী ইরাক যুদ্ধে মার্কিনীদের হয়ে কাজ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্ম তার। গ্যাবার্ড বলেন, নির্বাচনে তার মূল ইস্যু হবে যুদ্ধ ও শান্তি। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, ফোজদারি বিচার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রতি জোর দেবেন।

এরা ছাড়াও ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর কোরি বুকার,কলোরাডোর সিনেটর জুলিয়ান ক্যাস্ত্রো, জন ডেলেনি, অ্যামি বুচার, ডেভাল প্যাট্রিক, টম স্টেয়ার, ম্যারিয়ান উইলিয়ামসন, এবং আন্ড্রু ইয়াং। শেষ পর্যন্ত কে ট্রাম্পের চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা