• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনা বিএনপি

বকুলের `রাজ্যে` কোণঠাসা মঞ্জু

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২  

খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির রাজনীতি এখন পুরোপুরি বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের নিয়ন্ত্রণে। দলে তাঁর পদ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। কিন্তু শুধু সদস্য হলেও তিনিই এখন খুলনা বিএনপির 'কাণ্ডারি'। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বকুলকে ঘিরেই আবর্তিত হয় মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। তাঁর কারণে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু মহানগর কমিটি থেকে বাদ পড়ে নিষ্ফ্ক্রিয় ছিলেন প্রায় ১১ মাস। সম্প্রতি আবার বিএনপির রাজনীতিতে ফিরলেও দলের মধ্যে একেবারেই কোণঠাসা এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এ বিএনপি নেতা ও তাঁর অনুসারীরা।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে উত্থান ঘটে মঞ্জুর। ১৯৮৯ সালে বিএনপির শহর শাখার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ বছর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ এক যুগ ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।কিন্তু ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর দীর্ঘ 'রাজনৈতিক সাম্রাজ্যের' পতন ঘটে। ওইদিন তাঁকে বাদ দিয়ে মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। একই দিন তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয় জেলা বিএনপিরও।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এর পরদিন তাঁকে শোকজ এবং ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ক্ষোভ, কষ্ট আর অপমানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মঞ্জুর অনুসারী সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এরপর থেকে প্রায় ১১ মাস দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা। গত ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে রাখা হয়নি তাঁকে।

নতুন এই কমিটি গঠনের 'নেপথ্য নায়ক' রকিবুল ইসলাম বকুল। খুলনার বিএনপি নেতাদের মধ্যে তিনি তারেক রহমানের আস্থাভাজন। মঞ্জুর দাপটে আগে তিনি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে ঢুকতে পারেননি। পরে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেন বকুল।

এখন মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর নগরীর পাঁচ থানা, ৩১টি ওয়ার্ড ও জেলার ৯ উপজেলা বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন চলছে। সেই সঙ্গে চলছে অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনও। এসব জায়গায় স্থান পাচ্ছেন বকুলের অনুসারীরা, বাদ পড়ছেন মঞ্জুর সমর্থকরা।

গত ২২ অক্টোবর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই গণসমাবেশের আগে ২০ অক্টোবর খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অনুসারীদের নিয়ে আবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সংবাদ সম্মেলনের পর তাঁর অনুসারীদের নিয়ে নগরীতে লিফলেট বিলি করেন। পরে মঞ্জু তাঁর দলবল নিয়ে বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেন। কিন্তু সেদিন মঞ্চে তাঁর স্থান হয়নি। কর্মীদের কাতারে সড়কে বসে সমাবেশের বক্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে। আর তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বকুল সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পযন্ত ছিলেন সমাবেশ মঞ্চে। এতে হতাশ হন মঞ্জুর অনুসারীরা।

ওই সমাবেশের পর আর তাঁকে খুলনা বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ডেই সক্রিয় দেখা যায়নি। তাঁর অনুসারীরাও দল থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, রকিবুল ইসলাম বকুল কোনো ভুঁইফোঁড় নেতা নন। তাঁর নেতৃত্বে গত ১১ মাসে খুলনা বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে একক নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ সঠিক নয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা