• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার পাশে দাঁড়াচ্ছেন তৃণমূলের আ.লীগ নেতাকর্মী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩  

খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে দল ও নিজেদের অস্তিত রক্ষায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্তজা রশিদী দারা পক্ষে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তারা বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা এস এম মোস্তফা রশিদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে দারার জন্য কাজ করছেন তারা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ছাড়া এ থেকে তারা পরিত্রাণ চান। তাই ব্যালটে জবাব দিতে চান।

এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা সাবেক হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদীর ছোট। একই সাথে তিনি ক্রীড়া সংগঠক বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সুন্দরবন কলেজের সাবেক ভিপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চ আদালতে প্রার্থীতা পেয়ে কেটলি প্রতীক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ সংসদীয় আসন। এটি জাতীয় সংসদের ১০২ নম্বর আসন। মুসলিম লীগ নেতা ও যুদ্ধাপরাধী খান এ সবুরের প্রভাবাধীন এই এলাকায় ১৯৯১এর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা প্রথমবারের মত জয়লাভ করেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন। সেই থেকে ভোটের ব্যবধান কমলেও আসনটি আওয়ামী লীগের। তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে নব্বইয়ের পর অনুষ্ঠিত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বাকী দুটিতে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করে। অবশ্য, তার একটি ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বিতর্কিত নির্বাচন। যাতে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন হতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোল্লা জালালউদ্দিন ও ২০১৪ সালে এ আসনে ফের নির্বাচিত হন এস এম মোস্তফা রশিদী সূজা। ২০১৮ সালের ২৭তাঁর মুত্যুর পর এখানে এমপি হন ব্যবসায়ী আব্দুস সালম মূর্শেদী। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী সালাম মূর্শেদী। আসনটিতে চারজন স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে এস এম মোস্তফা রশিদীর ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা উচ্চ আদালতের মাধ্যমে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। এতে আসনটি নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রথমতঃ আমি ছোটবেলার প্রেমে পড়েছি। কারণ দারা ভাই যখন খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমি তখন তেরখাদা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। দারা ভাইয়ের সাথে ছাত্র জীবনের সেই প্রেম আমি ভুলতে পারিনা। তারপরও দারা ভাই নয়, ফ্যাক্ট হচ্ছে সুজা ভাই। সুজা ভাই এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। দক্ষ এবং যোগ্য সংগঠক ছিলেন। বহেলিত রুপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়ার উন্নয়ন শুরু হয়েছে তার হাত দিয়েই। ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম খুলনা-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন লাভের পর তার দক্ষ, যোগ্য এবং ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে অভিভাবকহীন রুপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়ায় আওয়ামীলীগকে সুসংঘটিত করেছেন। তিনি এমন নেতা ছিলেন যিনি তাঁর কর্মীর চোখের ভাষা বুঝতেন। রুপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়ায় তাঁর আশীর্বাদে অনেকে নেতা হয়েছেন, হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তাঁর সেই প্রতিদান অনেকেই মনে রাখেননি। আমি মনে রেখেছি। প্রয়াত সুজা ভাইয়ের প্রতি সেই দুর্বলতা এবং কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই আমি তার ছোট ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার পক্ষে কাজ করছি। আমরা দারার ভীতর সুজা ভাইয়ের প্রতিচ্ছবি দেখি। সুজা ভাইয়ের ছবি দেখলে আমাদের মনের ভীতর দুর্বলতা কাজ করে।

তিনি আরো বলেন. সুজা ভাইয়ের পরিবার খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবার। খুলনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁদের পরিবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বিএনপির, জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিলে সে ক্ষেত্রে দারা ভাই আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনানের কমিটমেন্ট অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দারা ভাই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম গোলাম রহমান বলেন, যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার বিষয়টি ওপেন করে দিয়েছেন, দলের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারাও বিষয়টি উন্মুক্ত রেখেছেন। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন না হলে নির্বাচন হবে নিরুত্তাপ, ভোটার উপস্থিতি কম হবে। এসব কারণে আমরা আমাদের পছন্দের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার পক্ষে কাজ করছি। তিনি বলেন, দিঘলিয়া উপজেলার সহযোগী সংগঠনের ৯০ শতাংশ তৃণমূল কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার পক্ষে কাজ করছে।

গাজীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা আব্দুস সালাম বলেন, দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সালাম মুূর্শিদী নির্বাচন করছেন। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু তিনি কোথাও আমাকে জানাননি।৪০ বছর ধরে রাজনীতি করে গাজীরাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে রেখেছি। অথচ বর্তমান এমপি বলেছেন, আমার জন্য নাকি আওয়ামী লীগের ক্ষতি হচ্ছে। উনি আমার বাড়ির সামনে মিটিং করেন অথচ আমাকে বলেন না। মাঝিরগাতী হাইস্কুলে আওয়ামী লীগের সভা হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেলাল আমাকে সভাপতিত্ব করে প্যানা তৈরি করে আনেন। অথচ উনি সেই প্যানা বাদ দিয়ে অন্য একজনকে দিয়ে সভাপতিত্ব করে সভা করেছেন।

তিনি বলেন, গত ৫ বছরে তার আশীর্বাদে গাজীরহাট ইউনিয়নে বিএনপির জামায়াত আধিপত্য বিস্তার করেছে। তারা আমার নামে ৪/৫ টা মামলা দিয়েছে। এমপি’র কাছে গেলে তিনি বলেন তারাও তো আমাদের দলের লোক। গত ৫ বছরে গাজীরহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা,কর্মী সমর্থকরা কোণঠাসা অবস্থায় ছিলো। এখন সময় এসেছে তার জবাব দেওয়ার।
তিনি বলেন,,আমরা দলের বিপক্ষে কাজ করছি না। ব্যক্তির বিপক্ষে কাজ করছি। যার পক্ষে কাজ করছি তিনিও আওয়ামী লীগের লোক। খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ভোট যদি সুষ্ঠু হয় গাজীরহাটে দারার পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে।

রুপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, সাবেক খুলনা জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও আইচগাতী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আশরাফুজ্জামান বাবুল বলেন, এক কথায় বলবো যেহেতু আমরা নৌকার বিপক্ষে নয়, আমরা শুধু নৌকার মাঝি পরিবর্তনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দারার পক্ষে কাজ করছি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা