• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

তেরখাদায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পাচ্ছেন অমুক্তিযোদ্ধা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২২  

জেলার তেরখাদা উপজেলায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিরা স্থান পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। আর যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধেই উঠছে এ আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগ। জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা প্রণয়নে অসচ্ছতা ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

দ্বিতীয় দফায় গতকাল বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন উপজেলার বারাসাত এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল জালিল শেখ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তেরখাদা উপজেলায় আমার অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন মাত্র ৯১জন। এছাড়াও উপজেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা অন্য এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও তার সঠিক নাম ঠিকানা জানা নেই। যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল ওসমানীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হন অনেকে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে তেরখাদার বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খান মোহাম্মাদ আলী ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার চৌধুরী আবুল খায়ের রয়েছেন। বর্তমানে তেরখাদা উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে যাচাই-বাছাই চলছে। এই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য রয়েছেন চৌধুরী আবুল খায়ের। ২০১৭ সালে এই যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা ছিল। 

অনলাইন ও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই-এর কমিটির দুইজন সদস্য খান মোহাম্মদ আলী ও চৌধুরী আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কারণে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের এবং হাইকোর্ট ডিভিশনে আমি রিট করি। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১ মার্চ আদেশে অনলাইন ও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই স্থগিত হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই নির্দেশিকা-২০১৬ এর আলোকে গত ২৪ ফেব্র“য়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা বলা হয় এবং মামলা চলমান থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করা যাবে এমন নির্দেশনা প্রদান করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। গত ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পুনরায় খান মোহাম্মাদ আলীকে সভাপতি ও চৌধুরী আবুল খায়েরকে সদস্য মনোনয়ন প্রদান করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ফলে তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উলি­খিত কমিটি নিয়ে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করেন।

তেরখাদা উপজেলায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ৬০০ জন আবেদন করে। যাচাই-বাছাই কাজে নিয়োজিত কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মাদ আলী ও সদস্য চৌধুরী আবুল খায়ের অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অর্থ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আবেদনকারীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পনের লাখ টাকার চুক্তি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন আবেদনকারীদের সাক্ষী যারা দিচ্ছেন তারা সমান তালে অর্থ বাণিজ্য করছে। এনিয়ে বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা নানা প্রকার মন্তব্য করে লেখালেখি করছে। এভাবে টাকার বিনিময় যদি অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় তাহলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আর সম্মান বলতে কিছু থাকে না। এসব অনিয়ম নিয়ে আমি ইতোপূর্বে বহু অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছি না। 

অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধাদের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত ৪ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় মহান মুক্তিযুক্ত ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার্থে পুনরায় জাতির সামনে আমার বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা