• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রায় পুলিশ হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল, আসামি ৩৪

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২২  

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে প্রায় নয় বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে আলোর মুখ দেখছে খুলনার কয়রা উপজেলায় পুলিশ হত্যা মামলাটি। কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩৪ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। এতে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, নাছের আলী মোড়ল ও তাছের আলী মোড়ল, ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম গাজীসহ ৩৪ জনকে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ দেলোয়ার হোসেন অভিযোগপত্র আমলে নিলে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাজারীর নির্দেশ দিয়েছেন। আজ রবিবার পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাজারী হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ওয়ারেন্ট তামিলের জন্যে আগামী ৩০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।

আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে, আসামি ধরতে গিয়ে ২০১৩ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মোঃ মফিকুল ইসলাম। কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালীতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় আংটিহারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মোঃ মমিনুর রহমান বাদী হয়ে কয়রা থানায় মামলা করেন (নং-০৭(৩)১৩)। কয়েক দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর ২০১৫ সালের ২১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সরদার মোঃ হায়াত আলী। এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম স্থবির ছিল। চার্জশিটভুক্ত আসামি আছের আলী মোড়ল সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার প্রকাশ্যে ঘুরে-বেড়ানো, মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে প্রভাবিত ও দীর্ঘদিন স্থবির থাকায় পুলিশ কনস্টেবল মফিজুল হত্যার ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় নিহতের স্ত্রী-সন্তানেরা।

সর্বশেষ চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো গনি সরদার, আনারুল, সিরাজুল, আয়শা, মফিজুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, নাছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, দাদরিজ শেখ, আছের আলী মোড়ল, মোঃ তাছের আলী, মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজী, নাজমুল ইসলাম, ওলিউর রহমান, মইনুল ইসলাম লিটন, আলমগীর হোসেন, সাইদুল ইসলাম, মোঃ ওহিদুজ্জামান খোকন, মোঃ মিজানুর রহমান, বিল­াল হোসেন, সবুর মোল­া, কবিরুল সরদার, রুহুল আমিন সরদার, পরিতোষ কুমার, মজিদ গাজী, হাকিম মোড়ল, নাজমুন্নাহার, মহিউদ্দিন মোড়ল, তাইজুল গাজী, আব্দুল হাকিম গাজী, আত্তাপুর জামাল ঢালী, হালিমা ও সুমাইয়া খাতুন। এর মধ্যে পলাতক আঃ গনি সরদার, আনারুল, সিরাজুল, আয়শা, রেজাউল ইসলাম, দাদরিজ শেখ, মোঃ তাছের আলী, মোঃ সিরাজুল গাজী, নাজমুল ইসলাম, বিল­াল হোসেন, মজিদ গাজীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাজারীর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়রা থানার অপর একটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি গনি সরদারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। উক্ত বাড়িতে পৌঁছানোর পূর্বেই সেই মামলার বাদীর নূরুল আমীন মোড়লের চাচাতো ভাই নাছের আলী মোড়ল, আছের আলী মোড়ল, গোলাম মোস্তফা রিপন, রউফ শেখ, তাইজুল গাজী ও দাদরিজ শেখসহ কয়েকজন হাজির হয়। তাদের সাথে থাকা আসামী পরিতোষ কুমার মন্ডলের বন্দুক ও গুলি, লাঠি-শোটা, হাতুড়িসহ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গনি সরদারকে বাড়িতে না পেয়ে তার স্কুল পড়–য়া শিশুসন্তান সিরাজুলকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তখন বাড়ির মহিলা ও শিশুরা ডাক-চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় মসজিদে প্রচার করতে থাকে যে, “নাছের বাহিনীর লোকজন হামলা করেছে। তোরা কে কোথায় আছিস এগিয়ে আয়।” তখন গোলখালী গ্রামের সাধারণ জনগণ সমবেত হয়ে প্রতিরোধ করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও উচ্চস্বরে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। এসব ডাক-চিৎকার শুনে ওই পুলিশ ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকালে তদন্তে প্রকাশিত আসামিরা পুলিশ ফোর্সের পেছনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে তুমুল বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশের পেছনে অবস্থান নেয়া আসামিদের মধ্যে রউফ শেখ অপর আসামি আছের আলীর কাছে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি করলে কনস্টেবল মফিজুল ইসলামের বাম পায়ের হাটুর পিছনে বিদ্ধ হয়, এতে মারাত্মক জখম হন তিনি। এ সময়ে রাত সাড়ে ১২টা বাজে। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নেবার পথে মারা যান কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ হেডকোয়াটার্স মনিটরিং সেলের ১৭৭তম এবং ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল ১৭৯তম সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে প্রত্যেক আসামির অপরাধ শনাক্ত করে অভিযোগপত্র সুনির্দিষ্ট চার্জ এনে অভিযোগপত্র দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফ বলেন, স্পর্শকাতর এ মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। আদালতের নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিবিআই খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন স্থবির থাকার পর তদন্ত ভার পেয়েই সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে মামলাটি পর্যালোচনা ও তদন্ত করে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখন আদালত আইনগত ব্যবস্থা শুরু করবেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা