• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনার তেরখাদা খাদ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২  

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে  খুলনা তেরখাদা উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মোঃ আশরাফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রোকেয়া সুলতানার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার বেশি অর্থ ও সম্পদের তথ্য গোপন করায় মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার ২৬ জুলাই দুদকের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাঃ মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রূপে সুলতানা দুদকের নিকট ১ কোটি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করে। এছাড়া অভিযুক্তদ্বয় ১ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার ৬৯৩ টাকার মূল্যমানের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ দখলে রাখে।

অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামানের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার উথলি গ্রামে। বর্তমানে তিনি খুলনার খালিশপুরের মুজগুন্নী আবাসিকের একটি ফ্লাটে থাকেন। তিনি যশোর এলএসডি খাদ্য অফিসের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বর্তমানে খুলনা তেরখাদা উপজেলা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।

আশরাফুজ্জামান ২০১০ সালের ২৭ জুলাই তে থানা খাদ্য পরিদর্শক পদে যোগদান করেন । পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হন তিনি। তবে যশোর খাদ্যগুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকা কালিন সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে আশরাফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রোকেয়া সুলতানার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। তাদের প্রতি সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে তারা। সে মোতাবেক তিনি ও তার স্ত্রী সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করে জমা দেন দুদকে। তবে আশরাফুজ্জামান তার নামে স্থাবর সম্পদের তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।

পরবর্তীতে মাঠে নামে দুদক। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে জানতে পারে খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন মিরেরডাঙ্গায় নিজ পিতা আব্দুর রাজ্জাক'র নামে ১৮ লক্ষ  ৫০ হাজার টাকার একটি জমি কেনেন। ব্যাংকে গচ্ছিত করেন ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৬২৯ টাকা। তবে এই লেনদেনের সদুত্তর দিতে ব্যার্থ হন তিনি। এদিকে তার স্ত্রীর হিসাবের খাতা খুজতে গিয়ে দুইটি ফ্লাটের হদিস পায় দুদক। স্ত্রীর নামে হিসাব মেলে ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ২৮৬ টাকার।

সম্পদ বিবরণী ফরমে অভিযুক্তদ্বয় মোট ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ২১১ টাকার ঘোষনা দেন। তবে যাচাইকালে মোট ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ৬ হাজার ৯৬১ টাকার হিসাব পাওয়া যায়। সে মোতাবেক ১ কোটি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। অপরদিকে বাৎসরিক আয় ব্যায়ের হিসাব মিলিয়ে অবৈধভাবে ১ কোটি ৯ লাখ ৬ হাজার ৬৯৩ টাকা মূল্যের জ্ঞাত সম্পদ দখলে রাখার প্রমাণ পাওয়া যায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে।

সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি অর্থ-সম্পদের তথ্য দুদকের নিকট গোপন করে এই দম্পতি। সকল অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক একটি মামলা দায়ের করে এ দম্পতির বিরুদ্ধে ।
মামলাটি নড়াইলের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় রুজু করা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এসকল তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান "অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান চাকরির শুরু থেকেই ঘুষ বাণিজ্যসহ অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করে আসছে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অপরাধে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা? প্রতিবেদকের এ প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, "তার বিরুদ্ধে মামলার কপি আদালতে পাঠানো হয়েছে। জানা মতে অফিসিয়ালি এখনো কোনো ব্যাবস্থা গৃহীত হয়নি।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, " আমার নামে বেনামী তদন্তে দুদক একটি মামলা দায়ের করেছে, যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। " এবিষয়ে পুনরায় অনুসন্ধান করা হবে বলে আশা করেন তিনি।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা