• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কয়রা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ট এলাকাবাসী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২২  

খুলনার কয়রা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মাহতাফ হোসাইনের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। ঘুষ নিয়ে এক জনের জমি আরেক জনকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করছেন তিনি। এছাড়া সরকারি ভিপি সম্পত্তি ও জলমহলের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এর আগে ২০১৭ সালে যোগদান করে প্রায় দুই বছর এ উপজেলায় চাকুরি করেছেন তিনি। সে সময় স্থানীয় এক ব্যাক্তির ভোগ দখলীয় ভিপি সম্পত্তি ঘুষ নিয়ে আরেকজনকে ডিসিআর দিতে সহযোগীতার অভিযোগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে তাকে বদলি করা হয়। পরে তদবীর করে গত ১৪ অক্টোবর পুনরায় কয়রায় যোগদান করে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ভূমি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি বাগালি ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা মৌজায় ৫ দশমিক ৫০ একর জমি নিয়ে বিরোধে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা হয়। ওই মামলায় তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথমে বিবাদী দেবদাস মন্ডলের কাছে আর্থিক সুবিধা দাবী করেন। তিনি রাজী না হওয়ায় বাদী পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নির্বাহী আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেন। পরে সঠিক তদন্তের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

ওই মামলার বিবাদী দেবদাস মন্ডল অভিযোগ করেন, সার্ভেয়ার মাহতাফ হোসাইন তার পক্ষে প্রতিবেদন দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেছিলেন। তিনি দিতে অস্বীকার করায় বিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।  

উপজেলার বামিয়া গ্রামের ভগবতি মাঝি নামে এক বিধবা নারী অভিযোগ করেন, তার নিজের কোন জমি না থাকায় সরকারি ১৮ শতক খাস জমি ডিসিআর নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন। করোণা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুই বছর ডিসিআর নবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জয়দেব মন্ডল নামে তার এক প্রতিবেশিকে ওই জমির ডিসিআর দিতে সহযোগীতা করেছেন সার্ভেয়ার। ডিসিআর পেয়ে ওই ব্যাক্তি বসতভিটে থেকে উচ্ছেদের জন্য তাকে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

ভগবতি মাঝি বলেন, ‘কোন নোটিশ ছাড়াই তিনি (সার্ভেয়ার) আমাকে বঞ্চিত করেছেন। জয়দেব মন্ডলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে আমাকে পথে বসাতে চাইছেন। ঘটনা জানতে পেরে সার্ভেয়ারের কাছে গেলে তিনি আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি অফিসের কয়েকজন বলেন, সার্ভেয়ার যোগদানের পর থেকে আগের চেয়ে বেপরোয়া আচারণ করছেন। খড়িয়া মঠবাড়ি মৌজার একটি ভিপি জমির ডিসিআর দিতে তিনি লুৎফর রহমান ও আল আমীন নামে স্থানীয় দুই ব্যাক্তির কাছ থেকে দুই লাখ ২৬ হাজার টাকা আদায় করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৭৬ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছেন। উপজেলার গোবরখালি খাল থেকে ৫৪ হাজার টাকা আদায় করে সরকারি রাজস্ব খাতে ৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মাহতাব হোসাইন তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছি অথবা ভয় দেখিয়েছি এমন প্রমান কেউ দেখাতে পারবে না। এসবের কোন ভিত্তি নেই।  

এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) এম সাইফুল্লাহ বলেন, তার ব্যাপারে নানা অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি। তবে এসব ব্যাপারে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। তাকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা