• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দেবর ভাবীর দ্বন্দ্বে ফের উত্তপ্ত সেনহাটী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১  

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটীতে সংঘটিত নির্বাচনী সহিংস ঘটনায় প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফারহানা হালিমসহ ৫৫ জনের জামিন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) খুলনা চীফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালতে ৫৫ জন জামিন লাভ করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর সেনহাটীতে নির্বাচনী সহিংস ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমানের বোন লিমা বেগম বাদী হয়ে ফারহানা হালিম সহ ৫৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

১২ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সহিংস ঘটনায় ফারহানা হালিমের ৫ জন কর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় মারাত্মক আহত হয়। এ ঘটনায় ফারহানা হালিম বাদী হয়ে জিয়া গাজীকে প্রধান আসামী করে দিঘলিয়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯। তাং ১৩/০৯/২০২১। ঐ মামলা দায়েরের এক দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর খুলনা চীফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এর মামলী আদালত থেকে জিয়া গাজীর ৪০ জন কর্মী সমর্থক জামিন লাভ করলেও জিয়া গাজীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হওয়ায় তিনিসহ তাঁর ১১ জন কর্মী সমর্থক জামিন নিতে পারেনি।

এ দিকে ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারহানা হালিমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মোল্যা আকরাম হোসেন খুলনা গেজেটের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার আসামী হয়েও জিয়া গাজী প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি জামিন নিয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি অনতিবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানান।’

এ ব্যাপারে দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আহসানউল্লাহ চৌধূরী খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে আমাদের কাছে সবাই সমান। আমরা কারোর প্রতি পক্ষপাতিত্ত মূলক আচরণ করছি না। সেনহাটীতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় আমরা উভয়পক্ষের মামলা নিয়েছি। জিয়া গাজীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

সেনহাটীতে ফারহানা হালিম এবং জিয়া গাজীর মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত মূলতঃ গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে। ঐ নির্বাচনে ফারহানা হালিম দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন। তবে জিয়া গাজী রাজনীতিতে সম্পূর্ন অপরিচিত মুখ হয়েও প্রয়াত জেলা আঃলীগের এক প্রভাবশালী নেতার আর্শীবাদে তিনি আঃলীগের মনোনয়ন লাভ করে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসে তাঁদের দু’জনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য হতে শুরু করে। যার প্রভাব তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে পড়তে শুরু করে।

গত ১৪ এপ্রিল রাতে উঃ চন্দনীমহল (বোগদিয়া) গ্রামে দু’প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় মোঃ আশরাফ মোল্যা বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকজনকে আসামী করে দিঘলিয়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২। তাং ১৭/০৫/২০২১। এর ২ দিন পর বেলায়েত হোসেন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৩২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামী করে দিঘলিয়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩। তাং ২৯/০৯/২০২১।

এ ঘটনার প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর ২৫ জুলাই রাতে চন্দনীমহল ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও পথেরবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইয়াসিন শেখ (৪২) চন্দনীমহল গাজী পাড়ায় দূর্বৃত্তের হাতে খুন হয়। এ ঘটনায় ইয়াসিন শেখের মা হাফিজা বেগম বাদী হয়ে জিয়া গাজীকে প্রধান আসামী করে তাঁর ১৫ জন সমর্থকসহ অজ্ঞাত ৫/৭ জনের নামে দিঘলিয়া থানায় ১টি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯। তাং ২৭/০৭/২০২১। ধারা ৩০২/৩৫। মামলা দায়েরের পর থেকে জিয়া গাজী পলাতক ছিলেন। ইউপি নির্বাচনের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর পুনঃনির্ধারণ হওয়ার পর মামলা দায়েরের ১ মাস ১০ দিন পর গত ৬ সেপ্টেম্বর জিয়া গাজী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। এবং ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে নগরীর হার্ডবোর্ড খেয়াঘাট পার হয়ে তাঁর নিজ গ্রাম চন্দনীমহলে শোডাউনের মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি জানান দেন।

ফারহানা হালিম খুলনা জেলা আঃলীগের প্রচার সম্পাদক প্রয়াত গাজী আঃ হালিমের সহধর্মিণী। ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর গাজী আঃ হালিম দূর্বৃত্তের হাতে গুলিবিদ্ধ হন এবং ২ নভেম্বর সন্মিলিত সামরিক হাডপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জিয়া গাজীও গাজী বংশের সন্তান। ফারহানা হালিমের সাথে জিয়া গাজীর দেবর ভাবী সম্পর্ক। দু’জনের বাড়ি চন্দনীমহল গাজী পাড়ায়। একজনের বাড়ি থেকে আরেকজনের বাড়ির দূরত্ব দুই’শ থেকে আড়াই’শ গজের মধ্যে। ফারহানা হালিমের প্রয়াত স্বামী গাজী আঃ হালিমের আপন চাচাত ভাই হায়দার গাজী বিয়ে করেছেন জিয়া গাজীর বোনকে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেবর ভাবীর ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে ঐ এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হতে শুরু করে যা এখনও অব্যাহত আছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা