• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

নারীর শ্রম-শরীর দুটোই মুনাফার উৎস : মহিলা ফোরাম

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২০  

পুঁজিবাদী সমাজে নারীর সস্তা শ্রম এবং শরীর দুটোই বাজারের পণ্য ও মুনাফার উৎস বলে মন্তব্য করেছেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।রোববার (৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের উদ্যোগে ১১০তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সমাবেশে এ কথা বলা হয়।

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ ঢাকা নগর শাখার সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুস্মিতা মরিয়ম প্রমুখ।

বাংলাদেশে নারী সমাজের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, নারী দিবস ঘোষণার ১০৯ বছর পরেও আমাদের দেশের নারীরা রাষ্ট্রীয়ভাবেই আইনী বৈষম্যের শিকার হয়ে সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখনও সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। ‘সমকাজে সমমজুরি’ আইনে থাকলেও, প্রায় সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন নেই।

সমাবেশ থেকে বলা হয়, পোশাক কারখানায় ৮০% নারী শ্রমিক যৌন নিপীড়নের শিকার। তাদের মজুরীও পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন। চা বাগানের নারী শ্রমিকরা দিনে ২৩ কেজি চা পাতা তুললে ১০২ টাকা মজুরী পান। অমানবিক নিম্ন মজুরি ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে তাদের জীবন কাটে। সারাদিন গৃহস্থালির কাজ করেও, নারীদের শ্রমের স্বীকৃতি নেই।

বক্তারা বলেন, সারাদেশে নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বেড়েই চলেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে দুইগুণ বেড়েছে। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে নারী-শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৭ হাজার ৯০০টি। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলা ৫ হাজার ৪০০টি। শিশু আধিকার ফোরাম ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, যে প্রতি মাসে গড়ে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নারী ও শিশুরা বসবাস করছে। এছাড়াও বিবাহিত নারীদের ৮৬ শতাংশ ঘরেই নির্যাতনের শিকার হন। ৯৪ শতাংশ নারী গণ-পরিবহনে নানা প্রকার যৌন নিপীড়নের শিকার হন।

বক্তাগণ আরও বলেন, পুঁজিবাদ টিকে থাকে মুনাফার ওপর। পুঁজিবাদী সমাজে নারীর শ্রম সস্তা আর তার শরীর বাজারের পণ্য; দুইই মনুফার উৎস। নারীকে তারা অধস্থন করে রাখতে চায়, তারা চায় না নারী তার অধিকার আদায়ে সরব হোক, যেন তাদের মুনাফার সাম্রাজ্য ধ্বসে না পড়ে। সেজন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো, বুর্জোয়া শাসকশ্রেণি এবং তাদের দোসর বুর্জোয়া মালিক শ্রেণি নারী দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে নস্যাৎ করতে চায়। মুনাফাভিত্তিক ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা নারীকে অধিকার দেয় না, মর্যাদা দেয় না; পুরুষতন্ত্রকে জিইয়ে রাখে।

সমাবেশ থেকে সারাদেশে নারী ও কন্যা শিশু হত্যা, ধর্ষণ, ফতোয়া, যৌতুক, উত্ত্যক্ত, ঘরে-বাইরে সর্বত্র সকল প্রকার নারী নির্যাতন বন্ধ, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান, ধর্ষণ আইন পরিবর্তন করে যুগোপোযোগী করা, স্বাক্ষ্য আইনে ধর্ষিত নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করার বিধান বাতিলসহ ৮ দফা দাবী প্রদান করা হয়।সমাবেশ শেষে সারাদেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যার প্রতিবাদে মশাল মিছিল শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসি মোড় প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা