• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

আবারও খুলনায় মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন ‘সেই’ মুশফিক

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩  

আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনে ফের মেয়র প্রার্থী হওয়া ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক আলোচিত নেতা এস এম মুশফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এস এম মুশফিকুর রহমান ঢাকায় বসবাস করলেও সম্প্রতি খুলনায় এসেছেন। নিজের নেতা কর্মীদের নিয়ে করছেন ঘরোয়া বৈঠক। ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবেন বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি মেয়র হয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে নয়, জনগণকে কিছু দিতে চাই। এ জন্য আবারও সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী। আলোচনা সমালোচনা আমাকে কখনোই ছাড়ে না। যদিও আমি আলোচনা সমালোচনায় মোটেও বিচলিত না।

এবারও জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এবার আর জাতীয় পার্টি থেকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। জাতীয় পার্টি সরকারের দালালি করে। আমি দালালি পছন্দ করি না, মেহনতি মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই।

খুলনার দরবেশ খ্যাত মুশফিক নিজের সম্পর্কে বলেন, এই শহরে আমি বেড়ে উঠেছি সেই ছোট বেলা থেকে। স্কুল জীবন পার করে ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল একজন বড় মাপের চিত্রশিল্পী হবো। ছোট বেলা থেকে শুরু করি ছবি আঁকা। ভর্তি হলাম খুলনা আর্ট কলেজে। ছবি আঁকার পাশাপাশি রাজনীতি করার স্বপ্ন শুরু হলো। আর্ট কলেজেই ছাত্র রাজনীতির হাতে খড়ি। এজিএস/জিএস নির্বাচিত হলাম। পরবর্তীতে শহরের এক বিশেষ গোষ্ঠীর অত্যাচারে প্রতিবাদী হয়ে উঠি। এখন এসব গোষ্ঠীর নাম উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়। তাদের রোষানলে আমি অতিষ্ঠ, জীবন বিপন্ন হয়ে যায়। একের পর এক মামলায় জর্জরিত হয়ে যাই। বছরের পর বছর আমি এই শিকারের ঘানি টানতে টানতে জীবন শেষ হয়ে যায়। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে তার থেকে রেহাই পাই। এই শহরের এমন কোনো ওলি গলি নেই যেখানে আমার বন্ধু নেই বা সৃষ্টি নেই। আমি কারও জমি দখল, বাড়ি দখল, টেন্ডারবাজি, ঘের লুট বা শক্তি প্রয়োগ করতে হয় এমন কোনো কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কাউকে পশুর বাচ্চা বলে গালি দেওয়া, কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করা এমন লোক এই শহরে পাবেন না।

আপনার বিরুদ্ধেও তো কিছু অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নে মুশফিক বলেন, মানুষ মাত্রই ভুলের ঊর্ধ্বে নয় কিছু ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে।

কেন মেয়র হতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অবহেলিত শহরের সীমাহীন সমস্যা জর্জরিত মানুষের পাশে থেকে কথা বলার কেউ নেই। এই শহরকে বাসযোগ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমার। কী করেছি, কী হয়েছে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই এখন আর। এই শহরের উন্নতি আর এই শহরের মানুষের মান সম্মানের জিম্মাদারি আমি চাই। আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি জবাবদিহিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ২২ বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে খুলনায় ফেরেন এস এম মুশফিকুর রহমান। এরপর জাতীয় পার্টিতে (জাপ) যোগদান এবং মেয়র প্রার্থী হিসেবে মুশফিকের নাম ঘোষণা বিস্মিত করেছিল খুলনার মানুষকে। নব্বই দশকে ছাত্রদলের হয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় মুশফিকের। ওই সময় নানা কারণে খুলনার সবাই মুশফিক ও তার ভাই ওয়াসিককে চিনত। ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হন মুশফিক। এরপর খুলনা থেকে তারা দুই ভাই উধাও হয়ে যান। তারপরও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এস এম রব এবং যুবলীগ নেতা টুটুল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে মুশফিকের নাম আসে। পরের ২২ বছর ঢাকায় ছিলেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারী জাপায় যোগ দেন। বনানীস্থ কার্যালয়ে যোগদান অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে মুশফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন জাপার চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর ১৪ মার্চ তিনি খুলনায় এসে মুশফিকুর রহমানকে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরিচয়ও করিয়ে দেন।

সে সময় মুশফিক জাপায় যোগ দেওয়ায় খুলনা মহানগর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৬ নেতা দলত্যাগ করেছিলেন। যে কারণে সর্বশেষ খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মাত্র ১ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন মুশফিক। দলের বিপর্যয়ের কারণে গত ১৭ মে তাকে জাপা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলাফেরাও যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক মুশফিকুর রহমান। ভোটের সময় খোলা জিপে চলাফেরা করে আলোচনায় ছিলেন তিনি। বেশির ভাগ সময় সফেদ পাঞ্জাবী ও পায়জামা পড়েন। বিশাল দাড়ির সঙ্গে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামার কারণে তাকে খুলনার দরবেশ বলে ডাকা হয়।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা