• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

পশ্চিমকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন?

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত, নতুন কৌশলগত ব্যবস্থাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশ আর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা মস্কো শুরু করতে পারে বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণা কার্যত পশ্চিমা বিশ্বকে নতুন করে পারমাণবিক হুমকিরই শামিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের ইউক্রেনে পশ্চিমের সাথে বৃহত্তম সংঘাতের সূচনাকারী এক সামরিক অভিযানের আদেশ দেওয়ার প্রায় এক বছরের দু’দিন আগে মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করবে। বার্ষিক ভাষণ ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’-এ পশ্চিমের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ধ্বংসের চেষ্টা করার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

ইউক্রেনে চলমান আঞ্চলিক যুদ্ধকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের সামনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমি আজ এই ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছি যে, রাশিয়া স্ট্র্যাটেজিক অফেনসিভ আর্মস ট্রিটিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করছে।’

২০১০ সালে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ‘দ্য নিউ স্টার্ট’ নামের দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন  যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গত বছর এই চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছিল।

চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড, স্থল ও সাবমেরিন-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক বোমাবাহী বিমান মোতায়েনের লাগাম টানা হয়।

বিশ্বে বর্তমানে রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির কাছে প্রায় ৬ হাজার ওয়ারহেড রয়েছে। নিউ স্টার্ট চুক্তি অনুযায়ী, এই দুই দেশের কেউই এক হাজার ৫৫০টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন করতে পারতো না।

যৌথভাবে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে; যা এই বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। কোনও ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই রুশ এই নেতা বলেন, ওয়াশিংটনের কিছু মানুষ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা আবারও শুরু করার কথা ভাবছে। তাই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও পারমাণবিক কর্পোরেশনও প্রয়োজনে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

পুতিন বলেন, তবে অবশ্যই আমরা প্রথমে এটি করব না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পরীক্ষা চালায়, তাহলে আমরা পরীক্ষা চালাবো। বৈশ্বিক কৌশলগত সমতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, এমন কোনও বিপজ্জনক বিভ্রম কারও থাকা উচিত নয়।

এক সপ্তাহ আগে আমি যুদ্ধের ময়দানে কৌশলগত ব্যবস্থা স্থাপনের বিষয়ে একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছি। তারা কি সেখানেও তাদের নাক আটকাতে চলেছে? নাকি অন্য কিছু?’

যুদ্ধের ময়দানে কোন ধরনের কৌশলগত ব্যবস্থা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনও স্নায়ুযুদ্ধের আমলের পরমাণু অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। আর এই দুই দেশই এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম দুই পারমাণবিক শক্তি। বিশ্বের মোট পারমাণবিক ওয়ারহেডের প্রায় ৯০ শতাংশ রয়েছে উভয় দেশের কাছে। 

‘পরাজিত করা অসম্ভব’

রাশিয়ার দুই মাথাওয়ালা ঈগল আর আটটি তেরঙা পতাকায় সাজানো মঞ্চে এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ধরে ভাষণ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার বছরব্যাপী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। বৈশ্বিক যুদ্ধে মস্কোকে পরাজিত করা যাবে, এমন ভুল বিশ্বাসে ভর করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মস্কোতে সংসদ অধিবেশনে বার্ষিক ভাষণ স্টেট অব দ্য ন্যাশন দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে বলেন, এই যুদ্ধ রাশিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধে যে রুশ সৈন্যরা মারা গেছেন তাদের পরিবারের ব্যথা তিনি বুঝতে পারেন বলেও সমবেদনা জানান।

পুতিন বলেন, পশ্চিমারা বিশৃঙ্খলা আর যুদ্ধের বীজ বপন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বোতল থেকে ভূতকে বের করে দিয়েছে।

‘ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভ সরকার ও তার পশ্চিমা শাসকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে; যারা রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এই দেশটিকে কার্যকরভাবে দখল করেছে।’

রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা স্থানীয় সংঘাতকে বৈশ্বিক সংঘর্ষে রূপান্তর করতে চায়, আমরা এটা বুঝতে পারি এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব।’ ৭০ বছর বয়সী ক্রেমলিনের এই প্রধান বলেন, রাশিয়া কখনই তার সমাজকে বিভক্ত করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার করবে না। বেশিরভাগ রাশিয়ানই যুদ্ধ সমর্থন করছেন বলে জানান তিনি।

সূত্র: রয়টার্স।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা