• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মালয়েশিয়ায় খুলছে কিছু শিল্প কারখানা, ভাগ্য খুলবে বাংলাদেশিদের

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২০  

আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৩য় ধাপে শুরু হওয়া মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) বা গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ আদেশের মধ্যে দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর ও শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়ান সরকার। গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বিশেষ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তান শ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেছেন, এই শিল্পগুলি পুনরায় চালু হওয়ার সাথে সাথে সেখানে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে কাজ করতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করা হবে এবং তা মেনে চলতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি বুঝতে পারি যে লকডাউন এমসিওর পুরোটা সময়ে দেশের শিল্প, উৎপাদন ও বাণিজ্য কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতি ব্যাহত হয়েছে। সুতরাং আমরা কঠোর স্বাস্থ্য বিধি ও নির্দেশিকা এবং চলাচল নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রগুলিকে পর্যায়ক্রমে পুনরায় খুলে দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি।"

তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান যে,  সিনিয়র মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ মন্ত্রিসভা কমিটিতে সার্বিকভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে কোন কোন সেক্টরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ কোন কোন শিল্প কারখানা ও ফ্যাক্টরি চালু করা হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

এমসিও কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রায় এক মাসের জন্য বিধি-নিষেধে শিল্পগুলি অচল হয়ে পড়েছিল। এমসিও কার্যকর হওয়ার পর থেকে প্রায় টানা এক মাসের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর ও শিল্পগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল যা সম্ভবত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে।

সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীরা বারবার সরকারের কাছে মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার বা এমসিও (লকডাউন) আদেশের কিছু দিক শিথিল করার জন্য অনুরোধ করেছে যাতে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ের সরবরাহের ক্ষেত্রগুলো আবার শুরু হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছেন যে, কোভিড-১৯ মহামারী এবং এমসিওর মাধ্যমে বিধি-নিষেধের ফলে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে জিডিপির প্রায় পঞ্চম অংশ ব্যয় হবে। এ নিয়ে মালয়েশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগ একটি মারাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে প্রচুর চাকরির ক্ষতি হয়েছে যা বেশিরভাগই দেশের নিম্ন-আয়ের শ্রমিকদের উপর প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতি সরকারকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত দিয়ে এমসিও উঠানোর ক্ষেত্রে বিরোধীদের উৎসাহিত ও অনুরোধ জানাতে সহায়তা করবে।

এদিকে লিম কিট সিয়াংয়ের মতো নেতারা বলেছেন, যেসব এলাকায় করোনায় কম পরিমাণে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকাগুলোর জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা উচিত। যাতে করে কিছু ব্যবসা চালুর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ চাকরি বাঁচাতে পারে এবং আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারে।

তবে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, নির্দিষ্ট কিছু শিল্প পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হলেও এই বিষয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। 

তিনি বলেন, "আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে আবারও পরিচালনার মাধ্যমে সচল করার অনুমতি দেওয়ার অর্থ এই নয় যে আমরা জনচলাচলে নিষেধাজ্ঞাগুলো কমিয়ে ফেলেছি" অর্থাৎ নির্দিষ্ট সেক্টর বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যবসা খুলে দেওয়া হলেও তা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

এমসিও এখনও সচল রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের জারি করা সমস্ত আদেশ অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আইন অমান্যকারী যে কোনো ব্যবসায়ীকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সরকার নির্দিষ্ট সেক্টর ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রকাশ করবে অচিরেই৷

এদিকে, করোনায় কঠিন চ্যালেঞ্জে মালয়েশিয়া প্রবাসীরাও। টানা নিয়ন্ত্রণ আদেশের কবলে পড়ে প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ঘরবন্দি, দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। কাজ নেই তাই আয়ের পথও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের খরচ মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন ব্রান্ডিং বাংলাদেশের এই মহানায়কেরা। এ কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না কাউকে। এছাড়া তাদের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে দেশে থাকা পরিবার। স্বজনদের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই নির্ভর করে প্রবাসীদের ওপর। প্রাণঘাতী করোনায় লণ্ড ভণ্ড করে দিয়েছে প্রবাসীদের আশা আকাঙ্খা। এ থেকে উওরণ কবে ঘটবে কেউ জানে না। তবে সচেতনতাই এ মরণব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে বলে বলছেন বিশিষ্টজনরা। 

মালয়েশিয়ার সরকার নির্দিষ্ট করে কিছু শিল্প কারখানা আবারও চালু করলে অনেক কর্মীদের ভাগ্য খুলবে। আবারও চাকরিতে যোগদান করতে পারার ফলে উপকৃত হবে প্রবাসীদের কিছু অংশ।

তবে নির্দিষ্ট করে কিছু সংখ্যক শিল্প কারখানা আবারও চালু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, খাজানাহ নেশনাল এবং ব্যাংক নেগারার সাথে যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমসিও চলাকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সেক্টরগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে (www.miti.gov.my) নিবন্ধন করতে হবে।  কেবলমাত্র মন্ত্রীর বিবৃতি অনুসারে নির্ধারিত বিধিমালা মেনে চলার মাধ্যমে যারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে, শুধুমাত্র সেসব ব্যবসায়ীরা ও আবেদনকারীরা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য আজ সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৯ টার মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা