• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

৫০ কোটি টাকা দামের মেশিন মাত্র ৩০ লাখ টাকায়!

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২  

চাষিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি লবণ কেনা হচ্ছে এক টাকারও কম দামে। এরপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের স্বয়ংক্রিয় মেশিনে (ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেট) ওই লবণের দানা ছোট ও পরিষ্কার করা হয়। এর সঙ্গে আয়োডিন মেশানোর পরই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। একই লবণ প্রচলিত পদ্ধতিতে পানিতে ফেলে ঝুড়িতে পরিষ্কার করার পর আয়োডিন মিশিয়ে আট থেকে ১০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করছে বিসিকে নিবন্ধিত ২৭৩ লবণকল।

ওই লবণ যেমন পরিষ্কার দেখায় না, তেমনি দানাও বড়। আবার ভেজা থাকায় ক্রেতারাও কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে। কেবল উন্নত মানের একটি মেশিনের অভাবে নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মানের দিকে থেকে পেরে উঠছে না দেশীয় লবণকলগুলো। এসিআইয়ের ব্যবহার করা ৫০ কোটি টাকা মূল্যের মেশিনের মতোই লবণ প্রক্রিয়াকরণ মেশিন তৈরি করছে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।

আকারে ছোট বিটাকের স্বয়ংক্রিয় এ মেশিনটি আগামী মাস নাগাদ বাজারে ছাড়া হতে পারে। একটি পরিপূর্ণ মেশিনের দাম পড়বে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এ মেশিন দিয়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের মতোই লবণ উৎপাদন করা যাবে। এতে বাজারে দামও কমবে। দেশে বর্তমানে লবণের চাহিদা প্রায় ১৩ লাখ টন। এর প্রায় ৭০ ভাগই চলে গেছে এসিআই, কনফিডেন্স আর মোল্লা লবণের দখলে।

প্রচলিত লবণকলগুলো ১০ বছর আগে বাজরের শতভাগ চাহিদা পূরণ করলেও এখন তা কমে নেমেছে ৩০ ভাগে। মূলত এসিআই, কনফিডেন্স ও মোল্লা লবণের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলো ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেটেড পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধনের কারণে প্রতিনিয়ত এসব কম্পানির কাছে মার খাচ্ছে পুরনো লবণকলগুলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে নিবন্ধিত ২৭৩টি স্থানীয় লবণকল রয়েছে।

১৯৯৫ সালের দিকে বিসিক এই লবণকলগুলোকে আধুনিক করতে কম্প্রিহেনসিভ আয়োডিন ডিস অর্ডার ডিফিসিয়েন্সি (সিআইডিডি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ওই সময় জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ প্রতিটি কম্পানিকে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের আয়োডিন মেশানোর মেশিন সরবরাহ করে। পাঁচ বছর আগে বিটাক ওইসব কারখানার মেশিনগুলো আরো যুগোপযোগী করে দিয়েছে।

এতে কারখানাগুলো লবণে আয়োডিন মেশাতে পারলেও লবণের দানা ছোট, পরিষ্কার এবং ভেজা ভাব দূর করতে পারেনি। এ সময়ের মধ্যে এসিআই, কনফিডেন্স ও মোল্লা লবণের মতো বড় বড় কম্পানি বাজারে আসায় এসব কলে উৎপাদিত লবণ বাজার হারাতে শুরু করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিকে নিবন্ধিত লবণকলগুলোর বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জ ও কঙ্বাজারে।

তারা মূলত জমি থেকে ট্রাকযোগে মিলে আনার পর সেখানে হাউসভর্তি পানিতে লবণ ফেলা হয়। পরে পানিতে ধুয়ে ঝুড়িতে তোলা হয়। এতে লবণ ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। আর লবণে আয়োডিন মেশানোর ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে প্রায় এক টাকা বাড়তি খরচ পড়ে। এ জন্য লবণকলগুলো ঠিকমতো আয়োডিনও মেশায় না।

বিটাকের পরিচালক ড. সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম জানান, ‘দেশে লবণের ২৭৩টি মিল আছে; কিন্তু নামি-দামি ব্র্যান্ডের কাছে মার খেয়ে মিলগুলো এখন বন্ধের উপক্রম। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আর্থিক সহায়তায় এই মিলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা নতুন মেশিন তৈরি করছি। এ মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লবণ পরিশোধন করা সম্ভব হবে।’

আগামী মাসের মধ্যেই এ মেশিন বাজারে ছাড়া হবে বলে জানান তিনি। ড. ইহসানুল করিম আরো জানান, ‘এসিআই ৫০ কোটি টাকা দামে যে মেশিন আমদানি করেছে, বিটাকও প্রায় একই মানের মেশিন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করছে। তবে এসিআইয়ের মেশিনের মতো বিটাকের তৈরি মেশিন বড় হবে না। ছোট আকারের এসব মেশিনের দাম ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘নামি-দামি ব্র্যান্ডগুলোর মেশিনের মতোই বিটাকের তৈরি মেশিনে কাঁচা লবণ ঢুকানোর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হবে, দানা ছোট হবে ও আয়োডিন মিশ্রিত হয়ে একেবারে প্যাকেটজাত হয়ে বের হবে। মেশিনটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে লবণে আয়োডিন না দিলে মেশিন কোনোভাবেই কাজ করবে না। এ মেশিনে উৎপাদিত লবণ হবে বিদেশি লবণের মতোই ঝরঝরে ও পরিষ্কার ও মানসম্মত।’

তিনি জানান, বিসিকে নিবন্ধিত লবণকলগুলোয় এখন প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা ও প্যাকেটে ভরার জন্য অনেক জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ মেশিন ব্যবহার করলে লবণ পানিতে ধোয়ার জন্য কোনো হাউনের দরকার হবে না। প্যাকেট করতেও জনবল লাগবে না। ফলে লবণের উৎপাদন খরচ অনেক কমবে। তখন এসব কারখানার লবণের সঙ্গে নামি-দামি ব্র্যান্ডের লবণের মানে কোনো তফাত থাকবে না।

২৭৩টি কম্পানি তখন কম দামে ভালো মানের লবণ বিপণন করলে বিদ্যমান ব্র্যান্ডগুলোকেও বাধ্য হয়ে লবণের দাম কমাতে হবে। চট্টগ্রামের পুটিয়ায় অবস্থিত জাকির সল্ট কারখানার মালিক সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ‘এখন আমরা প্রতি কেজি লবণ বিক্রি করি সাড়ে ছয় টাকা থেকে সাত টাকায়।

লবণ ভালো মতো পরিষ্কার ও দানা ছোট না হওয়ার কারণে বড় কম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। বিটাকের মেশিন পাওয়া গেলে আমাদের একদিকে উৎপাদন খরচ কমবে, অন্যদিকে লবণের মানও ব্র্যান্ডের লবণের মতোই হবে। ওই সময় মুনাফা বাড়ালেও আমরা ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব। আর মান একই হলে তখন বড় কম্পানিগুলোর লবণের দামও কমিয়ে আনতে হবে। না হলে তারা বাজার হারাবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা