• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনা-মোংলা রেলপথের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরেই

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২২  

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। তবে এ পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ছয় বছরেরও বেশি। সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে হাতে আছে আর ছয় মাস। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পায় একনেকে। লক্ষ্য ছিল ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়িয়ে নেয়। এরপর মোট ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। পরে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) ব্যয় বাড়ানো ছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, বর্তমানে রেলপথটির নির্মাণ অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। রেলপথ প্রকল্পের সময় আছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আশাকরি এই সময়ই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য দ্রুত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বারবার সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। এরপর দুই বছর নষ্ট হয়েছে করোনা সংকটে। সেই হিসেবে প্রকল্পের সময় খুব বেশি লাগেনি। আর রেলপথ নির্মাণের সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত। সে হিসেবে খুলনা-মোংলা রেলপথ সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণে অনেক বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে একটা সমস্যা থেকে যায়। জানা গেছে, নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতাভুক্ত নির্মাণকাজের দরপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ওয়ার্কসের ব্যয় বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ভ‚মি অধিগ্রহণ, সিডি ভ্যাট, যানবাহন ভাড়া, পুনর্বাসন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ব্যয় কমলেও সুপারভিশন পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটে জনবল ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়ে। পরামর্শকের আইটি ও ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং লেজিসলেটিভ পরিবর্তন, নিয়োগ ও অনুষ্ঠান ব্যয় নতুন অঙ্গ হিসেবে প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেও প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এদিকে বর্তমানে প্রকল্পটিতে সংকট দেখা দিয়েছে সিগন্যালিং কাজের ঠিকাদার নিয়ে। দরে না পোষায় মিলছে না আন্তর্জাতিক ঠিকাদার। এ কাজে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫৭ শতাংশের বেশি দাবি করছে তারা। ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার এ প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চায় রেলওয়ে। তাই আন্তর্জাতিক ঠিকাদার বাদ দিয়ে দেশি ঠিকাদার দিয়েই সিগন্যালিং সম্পন্ন করার পথে হাঁটছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথটি ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইনে যুক্ত হবে। রেলপথে সিগন্যালিং কাজের ব্যয় সিডি ভ্যাট বাদে ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও সিডি ভ্যাটসহ ২২ কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। মহাপরিচালক দপ্তরের সিগন্যাল ও টেলিকম শাখার দপ্তরাদেশের মাধ্যমে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে সিডি ভ্যাট বাদে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা এবং সিডি ভ্যাটসহ ২২ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা ধরা হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে প্রথম দরপত্র আহŸান করা হয়। এতে নয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দাখিল করা দর প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮২ শতাংশ অধিক হওয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি তা বাতিলের সুপারিশ করে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহŸান করা হয় এবং তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথমবার একটি প্রতিষ্ঠানসহ মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দাখিল করা দর দাপ্তরিক ব্যয় থেকে ৫৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। অধিক দরের জন্য এই দরও বাতিল করা হয়। সিগন্যালিং কাজে যে টাকা ধরা হয়েছে তা দিয়ে বিদেশি ঠিকাদার পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ২২ কোটি টাকা দিয়ে দেশি ঠিকাদার পাওয়া সম্ভব। তাই বিদেশি ঠিকাদার বাদ দিয়ে দেশি ঠিকাদার দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সিগন্যালিং কাজের জন্য দুবার দরপত্র আহŸান করেছি। কিন্তু কোনো বিদেশি ঠিকাদার এই টাকায় মিলছে না। তবে ২২ কোটি টাকা দিয়ে দেশি ঠিকাদার পাওয়া সম্ভব। তাই দেশি ঠিকাদার দিয়ে এই কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ৪৫৯ কোটি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পটিতে। তাতে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান প্রাক্কলিত ব্যয় হয়েছে আড়াইগুণ। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে তার মধ্যে রয়েছেÑ খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত পথটি ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইনে সংযুক্ত হবে। এর মাধ্যমে মোংলা সমুদ্রবন্দরকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। রেলযোগে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে। রেললাইনে সংযুক্ত হলে মোংলা সমুদ্রবন্দরে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। পাশাপাশি মোংলা থেকে তেলবাহী ওয়াগন সারাদেশে চলাচলের ব্যবস্থা করা যাবে। মোংলা বন্দর পর্যন্ত নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলওয়ে পরিবহন সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা