• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

রঙিন ঘরে আনন্দে ভাসছে ৩০৬ পরিবার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৯  

জুলেখা, নুরবানু, রোশনা, হালিমা, বুলবুলিদের এখন আর রাত বিরেতে অন্যের গোয়াল ঘরে ঘুমোতে হয়না। ঝড় বৃষ্টি আর বাতাস এলে দৌড়ে পালাতে হয়না আশ্রয়ের সন্ধানে।

এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে মাথা গোজার । হয়েছে বিল্ডিং ঘর, পাকা পায়খানা রান্না ঘর আর বারান্দা। হয়েছে নিজের একখানা বিনা পয়সার বিল্ডিং বাড়ি।

গাইবান্ধা জেলায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এবার জেলায় ৩০৬ জনের সংসারের পরিবর্তন হয়েছে। পাকা ঘর পেয়ে বদলে গেছে তাদের জীবনযাপন। স্বামী সন্তান নিয়ে এখন তাদের আর অন্যের আশ্রিতা হিসাবে থাকতে হয়না।

বোয়ালী ইউনিয়নের পিয়ারাপুর গ্রামের বাসিন্দা বুলবুলি রানী। স্বামী মৃত সুখ চরন রবিদাস । সুখ চরন রবিদাস গ্রামেই জুতা-স্যান্ডেল সেলাই করে সংসার চালাতেন। নিজের জায়গা জমি বলতে বাপের দেয়া দেড় শতক জমি। কিন্তু ঘর বলতে ৬ টিনের চালা। চার পাশের বেড়া ও মলমূত্র ত্যাগের কোন নির্ধাতিত জায়গা নেই। তাই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় রাতের বেলা। নিজের ওই দেড় শতক জমিতে ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে মানবেতর জীবন যাবন বুলবুলির। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসার। চাষাবাদের কোন জমি নেই। ওই ৬ টিনের ছাপড়া খানাই তার সম্বল। বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখ চরন বরিদাস বাতাস, বৃষ্টি, ঝড় ও বন্যার তাণ্ডব সয়ে কেটেছে দীর্ঘদিন। বাধ্য হয়ে অনেক সময় অন্যের গোয়াল ঘর বা বারান্দায় আশ্রয় নিতে হতো।

চার বছর আগে স্বামী সুখ চরন অসুস্থ হয়ে মারা যায়। সেদিন থেকেই বুলবুলির সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। সেই থেকে পেটের খোরাক যোগাতে বুলবুলি রানী অন্যের জমিতে কৃষি কাজ শুরু করে। কাজ না করলে ভাত হয়না। অন্যের জমিতে কৃষি মজুরের কাজ করলে যা পায় তাতে তার পেটের খাবার যোগার হলেও ঘরের খুটি লাগানো সম্ভব হয় না। বুলবুলির দিকে ফিরে তাকান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ ।

জমি আছে ঘর নাই অথবা দুর্যোগ সহনীয় ঘর বিতরণ প্রকল্পে তার নামও অন্তর্ভূক্ত হয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায়। এবার সেই প্রকল্পের আওতায় বুলবুলি একটি সুন্দর টিনের পাাকা ঘর পেয়েছে। এক টাকাও দিতে হয়নি। বিল্ডিং ঘরে সে কোন দিন ঘুমোতে পারবে, পাকা পায়খানা আর পাকা রান্না ঘরে রান্না করে নির্বিঘ্নে রঙিন টিনের চালার নিচে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে- এটা সে কোন দিন ভাবতে পারেনি । পাকা বাড়িতে আছে দুটি শোবার ঘর,রান্না ঘর ,পায়খানা ও টিউবওয়েল। এতে প্রতিটিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা ।

তার মতো গাইবান্ধার জেলার সদর উপজেলার লক্ষীপুরের মাহবুব, জুলেখা বেগম, মালিবাড়ি ইউনিয়নের রাজিব, আপ্পর আলী, আমজাদ, কুপতলা ইউনিয়নের নুরুন্নবী ও সবুজ মিয়া, সাহাপাড়ার সামাদ ও নুরবানু,বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মানিক ও ইয়াসিন ব্যাপারী, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আয়তন বেওয়া ও নেপেন্দ্র চন্দ্র, বাদিয়াখালী ইউপির রোশনা বেগম ও হালিমা বেগম, বোয়ালী ইউয়িনের বুলবুলি, মিরারানী, ওহাব মিয়া, খোলাহাটি ইউনিয়নের মোখলেস আলী, নাজমা বেগম, মোস্তফা, আজিমা, শাহিনা বেগম, ঘাগোয়া ইউনিয়নের হায়দার আলী ও রফিকুল, গিদারী ইউনিয়নের জেলেখা, জমিলা, আবেদা ও কবির হোসেন, কামারজানি ইউনিয়নের সমিতি রানী, মোল্লারচর ইউনিয়নের জিয়ারুল হক ও খোকন সহ সহ ৪০ জন রঙিন পাকা দালান বাড়ি পেয়েছেন।

তাদের মতো অসহায় পরিবারগুলো এই কর্মসুচীর আওতায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪৩, সাদুল্লাপুরে ৪৬, পলাশবাড়িতে ৩৯, গোবিন্দগঞ্জে ৪১, সাঘাটায় ৪৬ ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৫১ টি সহ মোট ৩০৬ টি দালান বাড়ি পেয়েছেন ।

এসব বাড়ি যারা পেয়েছেন তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক। ঘাগোয়ার হায়দার আলী জানান, আমার ভাগ্য অনেক ভালো । কপালে এতো ভালো রঙিন বাড়ি জুটেছে এবং সেই ঘরে বউ সন্তান নিয়ে শান্তিতে ঘুমানো- এ এক স্বপ্নের মতো ।

এব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘অনেক মানুষকে ঘর দিতে পেরে তিনিও খুশি । রঙিন পাকা ঘর দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গ্রামের মানুষগুলোর মনও রঙিন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি। এক সময় দেখবেন যাদের জমি আছে ঘর নাই তারা সবাই ঘর পাবে।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা