বগুড়ায় বউ মেলায়, নারীদের ভিড়

মেলার নাম বউ মেলা। যে মেলায় কেনাকাটা করেন মেয়েরা, বিক্রেতারাও মেয়েরা। ছোট, বড় সব বয়সী মেয়েরাই ক্রেতা। এ জন্য মেলার নাম দেওয়া হয়েছে বউ মেলা।

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার দ্বিতীয় দিনে বসে এই বউ মেলা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কেনাকাটার জন্য মেলায় আসতে থাকে এলাকার নানা বয়সী মেয়েরা। দুপুরের দিকে নারী ক্রেতাদের পদচারণায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মেলা।

মেলায় আগত আয়োশী, সেতারা, জোসনা জানায়, তারা প্রতি বছর নিজেদের ব্যবহারের জন্য কসমেটিকস ও ইমিটেশনের গয়না কিনে থাকেন। তাই এবারও এসেছেন। তবে এবার দাম কিছুটা বেশি। মেলায় চুড়ি, ফিতা, দুল, মালা, আংটিসহ সব ধরনের ইমিটেশন রয়েছে। বিক্রেতা আলেয়া রেওয়া, খাদিজা বেগম জানান, বিক্রি খুব ভালো।

প্রসঙ্গত, প্রায় দুইশ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীর শাখা গাড়ীদহ খালের তীর ঘেঁষে মাঘ মাসের শেষ বুধবার সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। বিশাল আকৃতির মাছের জন্য বিখ্যাত এই মেলা উপলক্ষে আশপাশের ২০টি গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় উৎসব। প্রতিটি বাড়িতে নতুন বউ-জামাই যেমন আসেন, তেমনি পুরাতন আত্মীয়রাও বাদ পড়েন না। কিন্তু সেসব আত্মীয়দের মধ্যে শুধুমাত্র পুরুষরাই পোড়াদহ মেলায় যাওয়ার সুযোগ পান। নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় সে মেলায় নারীরা প্রবেশ করতে পারেন না। এই অবস্থায় নারীদের নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয় ২০ বছর আগে। এরপর থেকেই পোড়াদহ মেলার পরের দিন এ মেলা বসছে। নারীদের জন্য আয়োজন করা মেলাটি এখন 'বউ মেলা' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এবারই প্রথম বউ মেলায় কেনাকাটা করতে এসে স্থানীয় নারীরা জানান, মেলায় শুধুমাত্র নারীরাই ক্রেতা। আবার অনেক দোকানে নারীরাই বিক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে, কেনাকাটা করা যাচ্ছে।

দোকানীরা জানান, মেলায় নারীরাই যেহেতু ক্রেতা। তাই প্রসাধনী সামগ্রীই সেখানে বিক্রি হয় বেশি। মহিলাদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনার বিক্রিও ভালো বলে জানান তারা।

এবার মেলার আয়োজক আমিনুল ইসলাম জানান, পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে এখানকার বাসিন্দাদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়ানো। কিন্তু সেই সব স্বজনের মধ্যে যেসব নারী আসেন, তারা মেলায় যেতে পারেন না বলে বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক ছিল। এ কারণেই মূলত বউ মেলার আয়োজন করা। এখানে যেসব পুরুষ মানুষ সঙ্গে আসছেন তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই মেলার ভেতরে ঢোকেন না।

তিনি আরো বলেন, মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

গাবতলী থানার ওসি সাবের রেজা আহমেদ বলেন, বউ মেলাটিও সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।