• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

৩০ নয়, সরস্বতী পূজা ২৯ জানুয়ারি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২০  

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই দিন সরস্বতী পূজা রয়েছে। তাই তারা সেটি পেছানোর আবেদন করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা নেই। পূজা এবং নির্বাচন একই সঙ্গে চলবে।

সরস্বতী পূজা আসলে কখন?

হিন্দু ধর্ম পঞ্জিকা অনুসারে সরস্বতী পূজা শুরু হয় পঞ্চমী তিথির শুরু থেকে। পঞ্চমী শুরু হচ্ছে ১৪ মাঘ ১৪২৬ (বাংলাদেশের বাংলা ক্যালেন্ডারে যা ১৫ মাঘ ১৪২৬) তারিখ, অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৯টায়। পূজার ক্ষণ শেষ হবে পরদিন ৩০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। এই পঞ্চমীর মধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে।

সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী ২৯ তারিখ সরস্বতী পূজার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ নিয়ে জটিলতার কারণ কী?

গত ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে, ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এরপরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আপত্তি জানান যে, সেদিন তাদের পূজা রয়েছে। তাই তারিখ পরিবর্তন করা জরুরি।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সরকারি ছুটির তালিকায় সরস্বতী পূজার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে ২৯ জানুয়ারি। সে কারণে আমরা ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতারা আমাদের কাছে এসে আপত্তি জানিয়েছেন যে, ৩০ জানুয়ারিতে তাদের পূজা আছে। কিন্তু যেহেতু এ ব্যাপারে তারা হাইকোর্টে গেছেন এবং আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, তাই আমাদের আর এখন এ ব্যাপারে কিছু করার নেই।

তারিখ পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন একজন আইনজীবী। আদালতে রিটকারী আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেছেন, ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না। তাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়ায় ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কীভাবে নির্ধারিত হয় পূজার দিনক্ষণ

বাংলাদেশের মাদারীপুরের মহেন্দ্রদী কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি উত্তম ব্যানার্জী বলছেন, তিথি-নক্ষত্র বিচার বিশ্লেষণ করে পূজার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। পঞ্জিকায় এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা থাকে, কখন তিথি শুরু হয়ে কখন শেষ হবে, দিনক্ষণ সময় সব দেয়া থাকে। তাই পূজা-অর্চনার জন্য আমরা পঞ্জিকার ওপর নির্ভর করি। পঞ্জিকা অনুযায়ীই পূজার সময় নির্ধারণ করা হয়।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এজন্য বেশ কয়েকটি পঞ্জিকা অনুসরণ করে থাকেন। ভারতের আদি বাংলা বর্ষপঞ্জির সঙ্গে ধর্মীয় পঞ্জিকার দিনক্ষণের মিল থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলা বর্ষপঞ্জির সঙ্গে হুবহু মেলে না।

একসময় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে একই ধরণের বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হলেও বাংলাদেশে কয়েক দফা বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধিত হয়। তবে বাংলাদেশের সরকারি কাজকর্মে বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা হলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের পূজা-অর্চনা ও আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এখনো আদি বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করেন।

উত্তম ব্যানার্জী বলছেন, আমরা যেসব পঞ্জিকা দেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করি, তার সঙ্গে ভারতের বাংলা বর্ষপঞ্জির মিল থাকলেও বাংলাদেশের বাংলা বর্ষপঞ্জির সঙ্গে কোন মিল নেই। বাংলা ক্যালেন্ডারে তিথি-নক্ষত্র থাকে না, কয়টা থেকে পূজা শুরু হবে, কখন শেষ হবে থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, পঞ্জিকার সঙ্গে এই ক্যালেন্ডারের তারিখও মেলে না। তাই পূজা-অর্চনার জন্য সেটা অনুসরণ করতেও পারি না।

তিনি জানান, পঞ্জিকাগুলো ভারতেই তৈরি, ফলে সেখানকার বাংলা বর্ষপঞ্জির সঙ্গে পঞ্জিকার মিল রয়েছে। এ কারণে যারা পঞ্জিকা দেখে কর্মকাণ্ড করেন, তারা স্বভাবতই সেই বাংলা তারিখ অনুসরণ করেন। সেখানে পূর্ণিমা, অমাবস্যা, তিথি নক্ষত্র ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। তাই পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তির মতো অনেক অনুষ্ঠান বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলাদেশে পালন করা হলেও, যারা পঞ্জিকা অনুসরণ করেন, তারা আদি বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করেন। ফলে তাদের উদযাপনের দিন একদিন আগে বা পরে হয়ে থাকে।

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা