• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

স্বপ্নের প্যারিসে সফল খুলনার বোরহান

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২০  

কথায় আছে খুব ভাগ্যবান মানুষ হলে নাকি প্যারিস শহরে যাওয়া যায়। এমনই এক ভাগ্যবান খুলনার রোবহান উদ্দিন জুয়েল। তিনি শুধু প্যারিসে যাননি, হয়েছেন সেখানে সফল ইটালিয়ান শেফ। তবে এ সফলতা পেতে কষ্টের দরিয়া পার হতে হয়েছে তাকে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সফলতার গল্প তুলে ধরেন খুলনার খানজাহান নগর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে রোবহান উদ্দিন জুয়েল। সম্প্রতি তিনি ছুটিতে খুলনায় এসেছেন। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা ব্যুরো অফিসে কথা হয় তার সঙ্গে।   

বোরহান উদ্দিন জানান, মাত্র ২৭ বছর বয়সে ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি অনেক স্বপ্ন নিয়ে পারি জমান প্যারিসে। এইচএসসি পাস এ যুবক খুলনায় একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে তার খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। পরে অংশু নামের এক প্যারিস প্রবাসীর মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ করে প্যারিসে পা রাখেন তিনি। এরপর স্বপ্নের শহরে তার শুরু হয় কষ্টের জীবন।  
প্রথম দিকে শিল্প-সাহিত্য ও ঐতিহ্যে ঘেরা পর্যটক নগরীতে তার কোন কাজ জোটেনি। কেননা তিনি ওখানে করার মতো কোন কাজই জানতেন না। ছিল না কোন ভাষা জ্ঞানও। মাসের পর মাস তিনি খেয়ে না খেয়ে স্বপ্নের প্যারিসে ঘাম ঝরিয়েছেন। এক পর্যায়ে টুরিস্ট স্পটে ভ্রাম্যমাণ বোতলজাত পানি বিক্রি করেছেন। এরপর ২০১১ সালের মার্চ মাসে তিনি ফ্রান্সের রেসিডেন্ট কার্ড পান।

তিনি বলেন, রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়ার আগে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। কারণ অনেক ধার দেনা করে বিদেশে গেছি। কার্ড পাওয়ার পর খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম রান্নার কাজ জানলে চাকরি নিশ্চিত। তখন সিদ্ধান্ত নেই পর্যটন নগরীতে শেফের কাজ শিখবো। এক পর্যায়ে পরিচয় হয় ইতালির বিখ্যাত শেফ সালভাতরের সঙ্গে। তার কাছ থেকে রন্ধন শিল্পের কাজ শিখে শেফ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি। প্যারিসে শেফদের চাহিদা তুঙ্গে। যার কারণে কাজ শেখার পর আর বসে থাকতে হয়নি। কাজ হয়ে গেলো প্যারিসের সুরেন এলাকার আকোয়া রেস্টুরেন্টে।

কী কী খাবার তৈরি করতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বোরহান বলেন, ফ্রান্স পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্যটক পরিদর্শনকারী স্থান হিসেবে বিবেচিত। ফ্রান্সের মুখরোচক ও অসাধারণ স্বাদের প্রায় সব ধরণের খাবার তৈরি করতে পারি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২২ ধরণের পিৎজা, ১২ ধরণের পাস্তা ও ৮ ধরণের ডেজার্ট।

এখন কেমন বেতন পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ টাকা মাসিক বেতন আমার। সপ্তাহে মাত্র চার দিন কাজ করতে হয়। বাকি সময় ঘুরি আপাদমস্তক শান্তির শহর প্যারিসে।

বোরহান উদ্দিন বলেন, ভিনদেশে কষ্ট করে নিজ শহর খুলনায় জায়গা কিনেছি। ফ্লাট কিনেছি। এমন কী প্যারিসেও ফ্লাট কেনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। স্ত্রীকে নেওয়া প্রসেসিংও চলছে। ইতিমধ্যে বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মান, স্পেন, হল্যান্ড, পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেছি।

এদেশের বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোটেল ও পর্যটন শিল্পে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মীদের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ চাহিদা পূরণ করতে বেকার যুবকরা রন্ধন শিল্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্যারিসসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পারেন। বিদেশের বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বাঙালি শেফই পছন্দ করেন। কেননা কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জুড়ি নেই বাঙালির। আমি যে পেশায় আছি মনে করি এটা একটা সম্মানজনক পেশা। অন্য যে কোন পেশার চেয়ে এতে ভালো বেতনও।

বোরহান বলেন, বিশ্ব বিখ্যাত শেফ টনি খান প্যারিসের সুরেন এলাকায় আমার আকোয়া রেস্টুরেন্টে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রেস্টুরেন্টটি একটি জাহাজের মধ্যে করা। আমি টনি খানকে ১২০ ধরণের সকালের নাস্তা দিয়েছিলাম। তিনি অভিভূত হয়েছিলেন।

প্রবাসে থেকে দেশকে কীভাবে অনুভব করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, শান্তির চাদরে ঢেকে থাকা প্যারিসে বাস করে নিজ দেশকে খুব মিস করি। যখন দেশের খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতির খবর পাই তখন খুব কষ্ট লাগে। প্যারিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কাজ করছি।

কার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা এমন প্রশ্নের উত্তরে বোরহান বলেন, প্রথমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এরপর মা-বাবা ও যার কাছ থেকে শেফের কাজ শিখেছি ইতালিয়ান সেই শেফ সালভাতরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের সুযোগ ও সাধ্য আছে তারা প্যারিসে ঘুরতে আসতে পারেন। বেড়াতে আসা প্রতিটি বিদেশী নাগরিকের নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বদা সজাগ সেখানকার পুলিশ। কড়া এই আইনশৃঙ্খলা প্যারিসকে পর্যটকের স্বর্গভূমিতে রূপান্তর করেছে। শত-সহস্র বছরের পুরোনো এক রূপকথার নগরী প্যারিস তার আইফেল টাওয়ার, ল্যুভর মিউজিয়ামসহ শত শত কীর্তি নিয়ে হাত বাড়িয়ে ডাকে সারা বিশ্বের সৌন্দর্য পিপাসুদের।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা