• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

সুপ্রিম কোর্টে আটকে গেলো বিএনপির ১৪ প্রার্থীর নির্বাচন

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮  

নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও সুপ্রিম কোর্টের (আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ) আদেশের ফলে নির্বাচন করতে পারছেন না বিএনপির ১৪ জন প্রার্থী। দণ্ডিত আসামি, ঋণ খেলাপি কিংবা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আদালত।

তারা হলেন ফেনী-১, বগুড়া ৬ ও ৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামালপুর-১ আসনের রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, সিলেট-২ আসনের তাহসিনা রুশদী লুনা, ঢাকা-১ আসনের খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনের তমিজ উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আফরোজা খান রিতা, রাজশাহী-৫ আসনের নাদিম মোস্তফা, বগুড়া- ৩ আসনের মুহিত তালুকদার, চাঁদপুর-৪ আসনের আব্দুল হান্নান, জামালপুর-৪ আসনের শামীম তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের মোসলেম উদ্দিন, জয়পুরহাট-১ আসনের ফজলুর রহমান, ঝিনাইদহ-২ আসনের অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ এবং রাজশাহী-৬ আসনের আবু সাঈদ চাঁদ।

খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা তার মনোনয়নগুলো বাতিল করে দেন। পরে গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে  খালেদা জিয়ার ৩টি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত দেন। শুনানিতে প্রার্থিতা বহালের পক্ষে মত দেন মাহবুব তালুকদার। এর বিপক্ষে মত দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৪ জন।

পরে প্রার্থিতা বাতিল করা রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এতে তিনটি আসনে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলই থেকে যায়।

হাইকোর্টে রিট খারিজাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, ‘দলের নীতি নির্ধারকরা রয়েছেন। তাই হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা-১ আসনের খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ আসনের  তমিজ উদ্দিন এবং মানিকগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতার প্রার্থিতা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়। এর মধ্যে ঢাকা-২০ আসনের প্রার্থী তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে ইসির নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রথমে স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেন তিনি। এরপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়। পরে ওই আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে তমিজ উদ্দিনের নির্বাচন আটকে যায়।

এর আগে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ইসি। ঋণ খেলাপির অভিযোগে ইসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করা হয়। হাইকোর্ট রিতার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রিতা চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করলে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ‘নো-অর্ডার’ বলে আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকায় রিতার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।

এদিকে চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল হান্নানের মনোনয়নপত্র বৈধ করায় ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট আবেদন হয় হাইকোর্টে। শুনানি নিয়ে আবদুল হান্নানের মনোনয়নপত্র স্থগিত করেন আদালত।

জামালপুর-১ আসনের রাশিদুজ্জামান মিল্লাত ও সিলেট-২ আসনের তাহসিনা রুশদী লুনার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১৮ ডিসেম্বর  প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আপিল বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখায় দুজনের নির্বাচনের পথ আটকে যায়।

রাজশাহী-৫ আসন থেকে বিএনপি নাদিম মোস্তফাকে মনোনিত করেন। পরে নাদিমের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বিএনপির আরেক প্রার্থী নজরুল ইসলাম। পরে আবেদনটির শুনানি নিয়ে নাদিম মোস্তফার প্রার্থিতা বাতিল করেন হাইকোর্ট।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে জামালপুর-৪ আসনে শামীম তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের মোসলেম উদ্দিন, জয়পুরহাট-১ আসনে ফজলুর রহমান, বগুড়া-৩ আসনের আব্দুল মুহিত তালুকদার এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ এবং রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন হাইকোর্ট।

জামালপুর-৪ আসনে শামীম তালুকদারের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে ওই আসনের সরকারদলীয় প্রার্থী মুরাদ হোসেনের আবেদনে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী মোসলেম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক প্রার্থীর আবেদনে। এখানে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। 

জয়পুরহাট-১ আসনে ফজলুর রহমানের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুল আলম দুদুর আবেদনের প্রেক্ষিতে। বগুড়া-৩ আসনের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মুহিত তালুকদারের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে মাসুদা মমিনকে ধানের শীষ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাসুদা মমিনও বিএনপির প্রার্থী। মুহিত উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে মাসুদা তার মনোনয়ন চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

ঝিনাইদহ-২ আসনে অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানজিল আলম সিদ্দিকীর আবেদনে।  রাজশাহী-৬ আসনে আবু সাঈদ চাঁদের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কির্তী আজাদের আবেদনে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে ইতোমধ্যে আপিল বিভাগে আদেশে এসেছে। তাই আপিল বিভাগের আদেশের পরই নতুন করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে সংশ্লিষ্ট আসনের সরকার দলীয় প্রার্থীরা। যার ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ না করা উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রার্থিতা বাতিল করেন হাইকোর্ট। এছাড়াও এর আগে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদনের কারণে অনেক ঋণ খেলাপিদের মনোনয়ন বাতিলও করেছেন আদালত।

তবে বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে প্রার্থিতা হারানোদের বিষয়ে আপিল করা হবে বলে জানান তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা