• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০  

জিডিপি’র চলতি মূল্যের ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। অন্যদিকে এশিয়ার ১৩তম অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি সিঙ্গাপুর-হংকংয়ের চেয়েও শক্তিশালী। অথচ মাথাপিছু ডিডিপি’র হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান তলানীতে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতার জিডিপিতে মাথাপিছু আয় হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯১টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। অর্থাৎ, কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের তুলনায় ধনী বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন করছে, সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় পার ক্যাপিটাল জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। আবার জনসংখ্যা বেশি হওয়ার সুফলও রয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়লেই দেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়ে যায়।

আইএমএফের তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেট স¤প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করেছে। আইএমএফ’র হিসাবে এই অঞ্চলে সবচেয়ে ধনী মালদ্বীপ। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ২৩ হাজার ৩১২ ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা। দেশটির পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ১৩ হাজার ৮৯৭ ডলার। তৃতীয় ভুটান (৯ হাজার ৮৭৬ ডলার), চতুর্থ ভারত (৮ হাজার ৩৭৮ ডলার), পঞ্চম পাকিস্তান (৫ হাজার ৮৭২ ডলার), সপ্তম নেপাল (৩ হাজার ৩১৮ ডলার) ও অষ্টম আফগানিস্তান (২ হাজার ৯৫ ডলার)।

অপরদিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯১টি দেশের মধ্যে ১৪৩তম। মালদ্বীপ ৬৬তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, ভুটান ১১২তম, ভারত ১২৪তম, পাকিস্তান ১৩৮তম, নেপাল ১৬২তম ও আফগানিস্তান ১৭৬তম।

বিশ্বের যে কোনো দেশের অর্থনীতিকে মূল্যায়নের মাপকাঠি হল মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। দুটি পদ্ধতিতে জিডিপির আকার মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হল- চলতি মূল্যের ভিত্তিতে (বেইজ অন কারেন্ট প্রাইস) এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (বেইজ অন পারসেজ পাওয়ার)।

এ দুই পদ্ধতিতেই বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো বিশ্বের প্রভাবশালী সংস্থাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গতবছর প্রকাশিত লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসোর্সের (সিইবিআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনীতিতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর দ্বিতীয় অবস্থানে চীন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৮ সালের মধ্যে ২৭তম ও ২০৩৩ সালের মধ্যে ২৪তম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান করে নেবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩০তম। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

এদিকে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাবে বাংলাদেশ এখন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে গত দুই যুগে সিঙ্গাপুর ও হংকংকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এই অবস্থানে উঠে আসে।

এডিবির প্রতিবেদনে পিপিপি অনুযায়ী এশিয়ায় সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটির মোট জিডিপির আকার ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত, যেখানে জিডিপির আকার ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৩ কোটি ডলার।

এবার দেখা যাক, গত দেড় যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রাটি কেমন ছিল। এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সালে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল সিঙ্গাপুর। ওই বছর বাংলাদেশে মাত্র ১৫ হাজার ১৮০ কোটি ডলারের পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন সিঙ্গাপুরে সৃষ্টি হয়েছিল ১৬ হাজার ৭১৮ কোটি ডলারের পণ্য উৎপাদন ও সেবা। এরপর বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। পরের ১০ বছরেই সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৪০৫ কোটি ডলার। ওই বছরই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে সিঙ্গাপুর। তখন সিঙ্গাপুরে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৩৩২ কোটি ডলার। এরপর বাংলাদেশের শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশ বেশি।

একইভাবে হংকংকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এই দেশটিও ২০০০ সালে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো হংকংকে পেছনে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। গত বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে হংকংয়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে। তবে উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ওই দুটি দেশের চেয়ে অনেক পেছনে।

এর প্রমাণ পাওয়া গেছে আইএমএফ’র মাথাপিছু জিডিপি’র প্রতিবেদনে। মোট জিডিপিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বড় হলেও দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় মাথাপিছু জিডিপিতে নিচের দিকে অবস্থান বাংলাদেশের। কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপের মতো দেশের জনসংখ্যা কম হওয়ায় এসব দেশ মাথাপিছু জিডিপিতে অনেক এগিয়ে।

মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে আইএমএফ যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেই তথ্য অনুয়ায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশ কাতার। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ ডলার। দুই দশক ধরেই তারা শীর্ষ ধনী দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ ‘জুয়ার স্বর্গ’ ম্যাকাউ। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৬২ ডলার। দেশটি শিগগিরই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লুক্সেমবার্গ। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১২ হাজার ডলার। লুক্সেমবার্গকে ইউরোপের ট্যাক্স হ্যাভেন বা করস্বর্গ বলা হয়। তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পিপিপি জিডিপিতে মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ ডলার। এশিয়ার অন্যতম করের স্বর্গরাজ্য বা ট্যাক্স হ্যাভেনের দেশ এটি। আয়ারল্যান্ডের অবস্থান পঞ্চম। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু জিডিপি ৮৭ হাজার ডলার। ব্রুনেই দারুস সালামের অবস্থান ষষ্ঠ। পিপিপি জিডিপিতে দেশটির মাথাপিছু আয় ৮৫ হাজার ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় নরওয়ের অবস্থান সপ্তম। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৭৯ হাজার ৬০০ ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান অষ্টম। পিপিপিতে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৭০ হাজার ৪০০ ডলার। কুয়েতের পিপিপি ডলারে মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৯০০ ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় দেশটির অবস্থান নবম। তালকিায় সুইজারল্যান্ডের অবস্থান দশম। পিপিপি ডলারে দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৬৭ হাজার ৬০০ ডলার।

বৈশ্বিক এই তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে গরিব দেশ বুরুন্ডি। দেশটির পিপিপিতে মাথাপিছু আয় ৭২৭ ডলার। এরপর রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (৮২৩ ডলার), কঙ্গো (৮৪৯ ডলার), ইরিত্রিয়া (১ হাজার ৬০ ডলার), নাইজার (১ হাজার ১০৬ ডলার), মালায়ি (১ হাজার ২৪০ ডলার), মোজাম্বিক (১ হাজার ৩০৩ ডলার), দক্ষিণ সুদান (১ হাজার ৬০২ ডলার) ও সিয়েরা লিওন (১ হাজার ৬৯০ ডলার)।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা