• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

সালাম মূর্শেদীর ‘রেশন’ কার্ডে যতদিন করোনা ততদিন সহায়তা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২০  

করোনা পরিস্থিতিতে নিজের নির্বাচনী এলাকার জন্য ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় রেশন কার্ডের মতো খাদ্য সহায়তা কার্ড চালু করেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও এনভয় গ্রুপের এমডি আব্দুস সালাম মূর্শেদী। সরকারি সহায়তার বাইরে যাদের খাদ্যের অভাব রয়েছে, তারা এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাচ্ছেন চাল, ডাল, চিনি, লবণ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। যতদিন করোনা শেষ না হবে ততদিন দেয়া হবে এই সহায়তা।

নির্বাচিবাচিত এই জনপ্রতিনিধি মনে করেন, এটা জনগণের প্রতি তার সেবা। এ কাজের মাধ্যম কিছুটা হলেও ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতিতে নিজের নির্বাচনী এলাকার সাধারণ জনগণের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এসব কথা বলেন সাংসদ আব্দুস সালাম মূর্শেদী।

বিজেএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মূর্শেদীর বলেন, এমন অনেকে আছে যারা সরকারি সহায়তা পায় না বা বাদ পড়েছে, তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। যাতে কেউ খাদ্যের অভাবে না থাকে। যে জায়গাগুলো গ্যাপ থাকছে সেই জায়গাগুলো বের করে সহায়তা দেয়াই তার উদ্দেশ্য।

এর জন্য তার নির্বাচনী এলাকা রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায উপজেলায় একটি করে ত্রাণ কমিটি করেছেন তিনি। এই কমিটির মাধ্যমে প্রতিদিন খাদ্য বিতরণ করা হয়। সালাম মূর্শেদী প্রতিদিন কাজগুলো সমন্বয় করেন।

করোনার পরিস্থিতির শুরুতে এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে জোর দেয়া হয় জানিয়ে আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, `প্রথম যখন করোনার বিষয়টা শুনতে পেয়েছি, তখন থেকেই আমি কার‌্যক্রম শুরু করি। আমরা দ্রুত শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেই। এগুলো শুরুতেই করা হয়েছিল। নিজের ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিইউজেবল পিপিই পাঠাই। এরপর আবারও পিপিই পাঠানো হয়। তখন মাস্কের খুবই ক্রাইসিস ছিল। এরপর এলাকায় ৩০ হাজারের মতো মাস্ক পাঠানো হয়।’

সালাম ‍মূর্শেদী বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়। নিজের জেলায় তরুণ বয়সেই পরিচিতি পান ক্রীড়াবিদ হিসেবে। সত্তরের দশকে ঢাকায় আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন দেশের ফুটবলের তারকা খেলোয়াড়দের একজন। মোহামেডানের হয়ে ১৯৮২ সালে জাতীয় ফুটবল লীগে ২৭ গোল করেন সালাম মুর্শেদী, যা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি। আর এ জন্যই হয়তো খেলোয়াড়দের প্রতি আলাদা টান অনুভব করেন সব সময়। আলাদাভাবে খোঁজ রাখেন তাদের।

সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘এখানে খুবই অসহায় ৩০০ খেলোয়াড় আছে। তার ভেতরে ১২০ জনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের আলাদা এনে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। দুবার দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

ইতোমধ্যেই নিজের নির্বাচনী এলাকায় ১০ হাজারের বেশি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে জানিয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, এলাকায় অনেক কলকারখানা আছে। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের জন্য এখানে লোক আসে। অনেক কলকারখানা আছে রূপশায়। এখানে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। সেই কারণে আমি সরকারের সহায়তার বাইরে যারা আছে তাদের প্রাথমিভাবে গত এক মাসে সাড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি।

‘আমাদের এখানে তো দিনমজুর রয়েছে প্রচুর, যাদের কাজ নেই। আমার টার্গেট ছিল এমন লোকগুলো খুঁজে বের করা। আমার এখানে ছয়টি ট্রলার ঘাট আছে, নৌকা দিয়ে যারা লোক পারাপার করে, প্রায় আটহাজার ভ্যানচালাক আছে। তার পরে আমাদের দলিত সম্প্রদায় আছে, হিজড়া সম্প্রদায় আছে, নাপিত আছে। আমি তাদের সাড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার পরিবার খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। পরবর্তীতে আমি চিন্তা করলাম এভাবে তো হচ্ছে না। দেখলাম এদের তো পর্যাযায়ক্রমে খাদ্য দিতে হবে। কারণ এখন তো কাজ নেই। পরবর্তীতে সরকারের রেশন কার্ডের মতো করে এ খাদ্য সহায়তা কার্ড চালু করি।

‘এর জন্য আমার নির্বাচনী এলাকা রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় উপজেলায় একটি করে ত্রাণ কমিটি করেছি। তিনটা ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে প্রতিদিন খাদ্য বিতরণ হয়। আমার খুলনা অফিসে এক হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী সব সময় রেডি থাকে।’

কার্ড করার ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সঠিকভাবে সবার কাছে খাদ্য পৌঁছানো যাচ্ছে বলে জানান সাংসদ। বলেন, এখন কার্ডের তালিকা অনুযায়ী খাদ্য দেয়া হয়। একজনকে দ্বিতীয়বার দেয়া হলে কার্ডে সেটা লিখে রাখা হয়। তালিকা না থাকলে কারা বাদ পড়ছে সেটা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তার ওপর এক জায়গায় ৫০০ লোক জড়ো করে নামাজিক দূরত্ব মেনে খাদ্য বিতরণ করা কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

কার্ড করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি সহায়তা যারা পায়নি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা দিয়ে কার্ডটি ফিলাপ করা হয়। এ কাজে রূপসা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আমাদের সহায়তা করছে।’

সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আমরা এই সপ্তাহে দিঘলিয়ায় এক হাজার ১০০ লোককে খাদ্য সহায়তা দিবে। ট্রাকে করে আমার লোকজন তালিকা অনুযায়ী বাহ্রী বাড়ি পৌঁছে দেয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা এ কাজ করছে।

‘যতদিন করোনা চলবে ততদিন আমার ব্যক্তিগত টাকায় এই সহায়তা দিব। প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার পরিবারকে দেয়ার লক্ষ আছে।’ তবে তালিকায় আরও নাম যুক্ত হলে তাদেরও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সরকার নানামুখী খাদ্য কর্মসূচি নিচ্ছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে খাদ্য বিতরণ করা হয় বলে জানান সালাম মূর্শেদী । তার এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরবোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সহায়তা করছে। তার পরেও অনেক লোক বাইরে থেকে যাচ্ছে। অনেক পরিবার আছে নিম্নমধ্যবিত্ত, তারা খাবার চাইতেও পারে না। কারও কাছে বলতেও পারে না। তাদের খুঁজে বের করে সেই জায়গায় খাবার পৌঁছে দেয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য।’

করোনার কারণে কোনো বাড়ি লকডাউন করা হলে সেখানে পরিবারের সদস্যরা যেন খাবারের কষ্টে না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখা হয় জানিয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আমার গ্রামের পাশেই নৈহাটিতে একটি বাড়ির সদস্যর করোনা হওয়ায় লকডাউন করে রাখা হয়েছিল। প্রথমে তাদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাজার করে দিয়েছিলাম। লকডাউন এলাকায় ২৬টি পরিবার ছিল, তাদেরও খাদ্য সহায়তা করেছি। আমার কাজ হলো সরকার দেওয়ার পরে যে যে জায়গাগুলো গ্যাপ থাকছে, সেই জায়গাগুলো ফিলাপ করে দেয়া। আমি এটাকে সেবা হিসেবে নিয়েছি। তারা আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি মনে করি এ কাজের মাধ্যম কিছুটা হলেও আমি ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছি।’

এ কাজে সালাম মূর্শেদীর স্ত্রী তাকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেন। সালাম বলেন, ‘এমন কোনো দিন নাই যে সে এলাকার লোকজনকে সহায়তা করেনি, বিকাশ করে না। একজন অসুস্থ হলে তার হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারেও খোঁজ নেয় সে।’

নির্বাচনী এলাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করা হয় জানিয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আমি ও আমার সহধর্মিণী আমরা দুজনই নির্বাচনী এলাকায় যাই। নারীদের নিয়ে কাজ করেন আমার সহধর্মিণী। আমার তিন ভাগের দুই ভাগ কাজ সে করে দেয়। কমপক্ষে তিন থানায় ৬০০ নারী যেন খাদ্য সহায়তা পায় এইটা সে নিশ্চিত করতে বলেছে। আমাদের লক্ষ্য এলাকার মানুষ যেন সবাই খাবার পায়।’

সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আমি আমার ওখানকার বিত্তশালী ব্যক্তি ও দলীয় লোকদের বলেছি আপনারা জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কার্ডের লিস্ট করা, জীবন বাজি রেখে এই পণ্যগুলো আবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে।

করোনার এ সংকটে রোগীর সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তাদের জন্য দুটি গাড়ি দি্যেছেন সালাম মূর্শেদী। এ ব্যাপারে বলেন, ‘রোগীর জন্য এ্যাম্বুলেন্স তো আছে। কিন্তু ডাক্তারকে কোথাও যেতে হলে কীভাবে যাবে। তার জন্য রূপসা ও তেরখাদায় সরকারিভাবে দুটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি।’

কৃষকের ধান কাটার জন্য মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘আউশ ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমি তিন থানার ছাত্রলীগ যুবলীগ যারা আছে, তাদের দিয়ে ধান কাটার ব্যবস্থা করিয়েছি। কৃষককে ধান কাটার মেশিনও দেয়া হয়েছে। কৃষক মেশিন ব্যবহার করলে তেল খরচ আমরা দিয়ে দেই।’

সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ যেন সঠিকভাবে বণ্টন হয় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখছেন সালাম মূর্শেদী। বলেন, ‘এ সংকটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা সার্বক্ষণিক সবকিছু মনিটরিং করছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। সরকারের ত্রাণ যাতে সঠিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ পায়, এটা আমি সিরিয়াসলি ফলো করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কাজ করছি। ধর্ম, দল-মতনির্বিশেষে সবাই যেন সহায়তা পায় সেটা দেখছি।

‘করোনা সংকট থেকে আমরা ঘুরে দাড়াব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা বীরের জাতি। সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এ মহামারি থেকে রক্ষা পাব ইনশাআল্লাহ।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা