• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

সংকট শক্তভাবে মোকাবিলা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আম্ফানের মতো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। হয়তো আগামীতে বন্যা আসবে, তাও মোকাবিলা করব। সে প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, সামনে যে সংকটই আসুক, আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে। দেশের কোনো মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেওয়া হবে না।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকাল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের মঞ্জুরি দাবি এবং দায় যুক্ত ব্যয় নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। বাজেট বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও করোনা-পরবর্তী সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা উল্লেখ করে তা মোকাবিলায় নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিরোধীদলীয় উপনেতা ঠিকই বলেছেন, ২০ কোটি টাকা ব্যয় অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতেও ব্যর্থ হইনি, ভবিষ্যতেও হব না। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই যাতে দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্য এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে রাখা যাবে না। কারণ বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। কাজেই দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, যার যেখানে জমি আছে, যে যা-ই পারেন উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ান। নিজের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত করুন। সরকার যা যা করার করে যাচ্ছে এবং করবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের চ্যালেঞ্জ। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

দুর্নীতি করলে ছাড় নয় : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের খাবারে ২০ কোটি টাকা খরচ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো অনিয়ম হয় ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।

 

বাজেট বাস্তবায়ন : দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি, ২০২১ সালে বিশ্ব ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বেগবান করার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা ও ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উৎকৃষ্ট অবস্থান অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।

ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং করহার কিছুটা হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া করপোরেট ট্যাক্সের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় স্বচ্ছন্দ আসবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।

প্রণোদনা প্যাকেজে ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সীমিত হয়ে আসায় খাদ্যশস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সংকটের শুরু থেকেই আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলাম। এ সময় তিনি পূর্বঘোষিত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পিতভাবে প্রতিটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্যাকেজে ইতোমধ্যে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে। ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ কর্ম সুরক্ষা ও নতুন কর্ম সৃজন হবে।

খাদ্য সংকট মোকাবিলা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা খাদ্যসহায়তা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আগামী অর্থবছরেও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছি। চলতি বোরো মৌসুমে আমরা ১১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছি যা গত বোরো মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ। আমাদের খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের উৎপাদনও অব্যাহত থাকবে। কাজেই আমাদের অসুবিধা হবে না।

দেড় কোটি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে আমরা বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। যার আওতায় এ পর্যন্ত আমরা সারা দেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছি। এর মধ্যে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মাঝে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি প্রায় ১২৩ কোটি টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার। শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং এতে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৫টি পরিবার উপকৃত হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় নিম্ন আয় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামীপরিত্যক্ত মহিলা ভাতা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ৫ হাজারে বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কগুলোকে পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এসব নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, যতই ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ হোক মনের সাহস রেখে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা অর্জন করা যায়। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, আমরা সফলভাবে এ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুনরায় শামিল হব।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা