• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শ্যামলীর দুধ খেয়ে রোগ মুক্ত হচ্ছেন হাজারও মানুষ!

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯  

গ্রামের খুব সাধারণ একজন মানুষ মহানন্দ মণ্ডল।  কিন্তু সকালে তার বাড়ির সামনের রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ রয়েছে অটোবাইক, রিকশা, মোটরসাইকেল, মাহিন্দ্রসহ নানা যানবাহন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দীর্ঘ মানুষের লাইন। আঙ্গিনায় নারী, পুরুষ, শিশুসহ নানান বয়সের হাজারো মানুষ। রয়েছেন ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, হাত মাইকে বলা হচ্ছে শৃঙ্খলার সাথে অপেক্ষা করুণ। কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্যামলী দুধ দিবে।

শুনে আশ্চর্য মনে হলেও ঘটনা কিন্তু অন্যরকম। বাড়ির বকনা বাছুরটির নাম শ্যামলী। ১৮ মাস বয়সী শ্যামলী বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দৈনিক চার কেজি দুধ দেয়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভোর থেকেই শ্যামলীর দুধ নিতে লম্বা লাইন পড়ে যায়। কেউ খালি হাতে, কেউবা বোতল নিয়ে।

এমন ঘটনা ঘটেছে জেলার রামপাল উপজেলার বাশতলী গ্রামে। গ্রামের মহানন্দ মণ্ডলের পোষা এই বকনার দুধ পান করে রোগমুক্তি ঘটেছে অনেক মানুষের। এই তথ্য প্রচার হলে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক ভিড় করছে মহানন্দের বাড়িতে।

এসময় কথা হয় শ্যামলীর মালিক মহানন্দ মণ্ডলের সাথে। তিনি গোয়ালঘর থেকে গরুটি বের করে নিয়ে এসে বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কোণ্ডলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের কাছ থেকে আট মাস বয়সি একটি বকনা বাছুর কিনি। বর্তমানে যার বয়স ১৮ মাস। গত চার মাস আগে গোয়ালঘরে গিয়ে দেখি ওই বকনাটির বান থেকে দুধ পড়ছে। দুই তিনদিন একই ঘটনা দেখার পরে, আমরা দুধ সংগ্রহ শুরু করি। বিষয়টি অবহিত করি প্রাণী সম্পদ বিভাগকে। তারা জানান, এই দুধ খেলে কোন সমস্যা হবে না। এরপর থেকেই আশপাশের মানুষ দুধ খাওয়া শুরু করে। অনেকেই বলতে থাকে এই দুধ খেয়ে তাদের বিভিন্ন রোগ সেরেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ নিতে অনেক মানুষ আসেন। কিন্তু তাদের চাহিদা মিটাতে পারছি না।

মহানন্দ আরও বলেন, ‘দুধের বিনিময়ে আমরা কারও কাছ থেকে কোন পয়সা নেই না। কিন্তু কেউ যদি কোন টাকা দেয়। আমরা সেটা গ্রহণ করি শ্যামলীর খাবারের জন্য। আর যদি একটু বেশি টাকা দিত তাহলে শ্যামলীর জন্য একটি ভাল ঘর বানাতে পারতাম।’

দুধ নিতে আসা নারায়ণ দাস বলেন, শুনেছি এ বকনার দুধ খেলে অনেক রোগ ভাল হয়। তাই আসছি দুধ নিতে।

স্থানীয় মনিরুল বলেন, কয়েকদিন ধরে দেখছি অনেক লোক সকালে হাজির হয় দুধ নিতে। শুনেছি অনেক মানুষ এই দুধ খেয়ে সুস্থ হয়েছেন।

বাগেরহাট শহরের রওশনারা বেগম বলেন, আমার কোমড়, ঘাড় ও পিঠে প্রচুর ব্যাথা ছিল। দুইদিন আগে দুধ নিয়ে খেয়ে একটু ভাল অনুভব করছি। তাই আবার আসছি।

মল্লিকের বেড় এলাকার লিলি বেগম জানান, আমি ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ঢাকার পিজিতে। তারপরও সুস্থ হইনি। কিন্তু এই দুধ খাওয়ার পরে সুস্থ হয়ে গেছি।

বাগেরহাটের আলোকদিয়া গ্রামের জাকির হোসেনের নয় বছরের মেয়ে রহিমা হাটতে পারত না। এই দুধ খেয়ে সে এখন হাটতে পারে বলে জানালেন তার ফুফু।

বাগেরহাট শহরের আনছার আলী সরদার, মহিউদ্দিন, নাছিমাসহ আরও কয়েকজন জানালেন দুধ খেয়ে উপকার পাওয়ার কথা।

স্থানীয় বাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী জানান, দুধ নিতে প্রতিদিন মহানন্দের বাড়িতে হাজার হাজার লোক আসে। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজন ও চৌকিদাররা সহযোগিতা করছে। প্রশাসন এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়টি অবলোকন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, অনেক সময় হরমোন জনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা প্রসবের আগেই বকনার বানে দুধ আসতে পারে। এটা একটি সমস্যা। তবে এ দুধ খেলে কোন সমস্যা হবে না। গাভীর দুধের মত এই দুধও খাওয়া যায়। তবে কেউ যদি রোগ মুক্তি বা বিশেষ কোন কারণে এই দুধ পান করে থাকেন এটা তার একান্ত নিজস্ব বিশ্বাসের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা